বড়লেখা হাজীগঞ্জ বাজার জামে মসজিদ বধ্যভূমি, মৌলভীবাজার
মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা থানার এখানে হত্যার শিকার হয় বোবারথল এলাকার ইব্রাহিম আলী (ওঝা) এবং পানিধার গ্রামের জছির আলী। ১৩৮৭ বাংলার ১১ জ্যৈষ্ঠ বিকেল সাড়ে চারটা। গাড়িতে করে পাকবাহিনী ইব্রাহিম আলী (ওঝা) ও জছির আলীকে বড়লেখা থানা সদর হাজীগঞ্জ বাজার জামে মসজিদের সামনে নিয়ে আসে। সেদিন ছিল শুক্রবার। তাদের গাড়ি থেকে নামিয়ে জামে মসজিদের বাঁশের খুঁটির সাথে দড়ি দিয়ে পূর্বদিকে মুখ রেখে দাঁড়ানো অবস্থায় দু হাত পেছন দিকে নিয়ে পাশাপাশি দুজনকে বাঁধা হয়। মাত্র দশ-এগারো হাত পূর্বপাশে পশ্চিমমুখী দুজন পাক বর্বর ম্যাগাজিন ভর্তি অত্যাধুনিক চায়নিজ রাইফেল নিয়ে গুলি করার জন্য দাঁড়ায়। তাদের বারো হাত উত্তরে ধৃত মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মন্তজির আলীকে বসিয়ে রাখা হয়। পাক কমান্ডার ও সৈয়দ শামসুদ্দিন পাশে ছিল। দোভাষীর মতো পাক কমান্ডারের উর্দু বক্তব্যের বাংলা অনুবাদ করে সৈয়দ শামসুদ্দিন। ইব্রাহিম আলী (ওঝা) ও জছির আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী। ইব্রাহিম আলী (ওঝা) তথ্য পাচার করেন আর জছির আলী পাকসেনাদের ক্যাম্প, পরিখা ও যোগাযোগের বর্ণনা ইত্যাদি নকশা করে দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধাদের। বাজার দিন, পাক কমান্ডার বাজারের সমস্ত লোককে একত্র করার নির্দেশ দিতেই পদলেহীরা বাজারের লোকজন জড়ো করায়। অবশেষে কমান্ডারের নির্দেশমতে পাক বর্বরদের হাতে রাইফেল গর্জে ওঠে। প্রতিটি গুলি ওদের বুক ঝাঁঝরা করে দিয়ে মসজিদের দেয়ালে গিয়ে ঠেকে। নিহত হয় তারা। মন্তজির আলীকে নিয়ে পরে বর্বররা চলে যায়। ইব্রাহিম আলী (ওঝা) ও জছির আলীর লাশ নিতে আত্মীয়স্বজন কেউ আসেনি। পরে বড়লেখা রেলস্টেশনের দক্ষিণ পাশের হোম সিগন্যালের মধ্যবর্তী স্থানে রেললাইনের পশ্চিম পাশ ঘেঁষে একটি গর্তে দুজনের লাশ মাটিচাপা দেয়া হয়।
[১২] গোপাল দত্ত
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত