বনপাড়া ও ক্যাথলিক মিশন গণহত্যা, নাটোর
২০ এপ্রিল মিলিটারিরা বনপাড়ার আশপাশে আসে। বিক্ষিপ্তভাবে গুলি চালালে হারোয়াতে চারজন লোক মারা যায়। তারপর থেকে মাঝে মাঝে পাক হানাদারবাহিনী নির্যাতনযজ্ঞ শুরু করে। বনপাড়ার বিভিন্ন গ্রাম থেকে অমুসলিমরা পালিয়ে আসে বনপাড়া মিশন হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের থাকা ও খাওয়ার যথাসাধ্য ব্যবস্থা করে। স্থানীয় রাজাকাররা এবং সুযোগ সন্ধানী কিছু মানুষ হিন্দুদের ওপর নির্যাতন এবং তাদের বাড়িঘর লুটপাট করা শুরু করে। নিরাপত্তার জন্য তখন থেকেই কিছু কিছু অমুসলমান ওপার বাংলায় পালিয়ে যেতে শুরু করেছিল। ৩ মে বিকেল সাড়ে তিনটায় মিশনের ফাদার লক্ষ্য করলেন যে, মিশন হাসপাতালের চারদিকে মিলিটারিরা ঘিরে নিয়েছে। তার কিছুক্ষণ আগে বনপাড়া সংলগ্ন অন্যান্য গ্রাম থেকে খ্রিষ্টান পুরুষদের ধরে এনেছে মেজর শেরওয়ানী নামের কুখ্যাত পাকসেনা অফিসার এই অভিযান পরিচালনা করেন। পরে ফাদারের সুপারিশে সকল খ্রিষ্টানকে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু পাকবাহিনী মিশনের অফিস, স্কুলঘর, মহিলা হোস্টেল তল্লাশি করে আওয়ামী লীগ সমর্থক ও হিন্দুদের খোঁজে। খোঁজাখুঁজির পর ৮৬ জন মানুষকে তারা বন্দি করে। পরে একজন বৃদ্ধকে রেহাই দিয়ে বাকি ৮৫ জন লোককে দত্তপাড়া ব্রিজে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ভাগ্যক্রমে অনিল নামে একজন বেঁচে যায়। যদিও তাকে গুলি করা হয়েছিল— কিন্তু সে দৈবক্রমে মারা যায়নি। নাটোরের কুখ্যাত অবাঙালি নেতা হাফেজ আবদুর রহমান অন্যান্য অপারেশনের মতো পাকবাহিনীর সাথে এখানেও উপস্থিত ছিল। পাকবাহিনী যাবার আগে গ্রামবাসী মুসলমানদের ডেকে এনে স্তূপিকৃত মৃতদের ওপর মাটিচাপা দিতে নির্দেশ দেয়।
[৫৮৮] সংকলন
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত