ফতে মোহাম্মদপুর বধ্যভূমি, ঈশ্বরদী, পাবনা
ঈশ্বরদীর অবাঙালি অধ্যুষিত এলাকা থেকে মোহাম্মদপুরের ১০ গজ দূরত্বের মধ্যে দুটি বধ্যভূমি রয়েছে। ১৯৭১ সালে অবাঙালিদের দ্বারা পরিচালিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডে এ বধ্যভূমি দুটির একটিতে বাঙালি পুরুষদের এবং অন্যটিতে নারী ও শিশুদের হত্যা করা হতো। সে সময় পাক আর্মি, রাজাকার ও অবাঙালিদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বাঙ্কার খোঁড়া হয়। ফতে মোহাম্মদপুরের বৃদ্ধ আবদুল জব্বারের পরিবারের ২০ জনকে অবাঙালিরা নির্মমভাবে হত্যা করে এ বাঙ্কার দুটিতে মাটিচাপা দেয়। আব্দুল জব্বারের স্ত্রী করিমন নেসা, ছেলে কাশেম আলী দুলাল, কেরু, মিঠু, মেয়ে সাইদা খাতুন, ভাই সিরাজ, ভাইয়ের স্ত্রী আমেনা খাতুন, ভাইয়ের ছেলে আজাদ এদেরকে অবাঙালি ঘাতকরা নির্মমভাবে কুপিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। জব্বারের ছোটভাই তোফাজ্জেলকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। এছাড়া জব্বারের বোন ভানু বিবি, তার স্বামী ইবাদত হোসেন, তাদের মেয়ে মেহেরুন্নেছা, জরিনা তাদের স্বামী খুরশেদ ও হাবিব এবং মেহেরুন্নেছার ৪ মেয়ে সুফিয়া, মঞ্জু, আঞ্জু ও সঞ্জুকে হত্যা করে। জব্বারের প্রতিবেশী অন্য পরিবারের হোসেন মোল্লা ও তার স্ত্রী মেহেরজান বিবি, তাদের মেয়ে মুদ্রাতুন্নেছা ও তার স্বামী পাচু শেখ ও মেয়ে হাসিনা, হোসেন মোল্লার আরেক মেয়ে আয়শাসহ মোট ১১ জনকে অবাঙালিরা নৃশংসভাবে হত্যা করে। অন্য আরেকটি পরিবারের ৫ জন ইবাদত হোসেন, তার মা, স্ত্রী ও দুই ছেলেকে হত্যা করে এই নরপশুরা। ১৯৭১ সালের ১২-১৩ এপ্রিল আবদুল জব্বারের পরিবারসহ আশেপাশের অন্যান্য পরিবারের ওপর অবাঙালি বিহারিদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী হয়ে রয়েছে এ দুটি বধ্যভূমি। এলাকায় ঘাতক বিহারিরা মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষক রানুকে স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলমাঠে ধরে নিয়ে হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয়। রানু পাশের ধানক্ষেতে ৩ দিন ছটফট করে মারা যায়। ১৯৭১ সালে ফতে মোহাম্মদপুরসহ সারা ঈশ্বরদীতে অবাঙালিরা নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।
[৪৫৩] রফিকুল আকবর
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত