পূর্ণানগর গণহত্যা, সিলেট
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা সদর থেকে গোয়াইন নদীর অপর তীরেই পূর্ণানগর গ্রাম। এই গ্রামেও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একটি শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল। এখান থেকে মাংস ও রুটি নিয়ে প্রায়ই পাকসেনারা নৌকাযোগে রাধানগর ক্যাম্পে যেত। সাথে থাকত তাদের সহযোগী দোসর রাজাকাররা। এই সংবাদ অবগত হয়ে একদিন মুক্তিবাহিনী নদীপথে তাদের নৌকা আক্রমণ করে বসে। উভয় পক্ষের মধ্যে শুরু হয় গুলি বিনিময়। এদিকে নৌকার মাঝিরা প্রাণের ভয়ে নৌকা রেখে পালিয়ে যায়। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে তিনজন পাকসেনা নিহত হয়। কিন্তু পরদিন গ্রামের লোকজন এবং নৌকার অসহায় মাঝিদের তলব করা হয় ক্যাম্পে। শারীরিক নির্যাতন চালায় তারা তাঁদের সকলের ওপর। পরে ক্যাপ্টেন বসারতের নির্দেশ গুলি করে হত্যা করা হয় ইসমাইল আলী, বসারত আলী, জায়ফর আলী (স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য) ও আবদুল কাদিরকে। পূর্ণানগরের এই চারজন নিরস্ত্র বাঙালি হলেন স্বাধীনতার অমর শহীদ। গোয়াইন নদীর তীরে তাঁদের পবিত্র দেহ মাটিচাপা দিয়ে রাখা হয়। পরবর্তীকালে স্থানটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
এভাবে পূর্ণানগর মসজিদের সামনে থেকে পাকড়াও করা হয় দুজনকে। তাঁদের পরিচয় জানা যায়নি। এ গ্রামের বাসিন্দা তো নয়ই, আশপাশের কোনো গ্রামেও তাঁদের বাড়ি নয় বলেই অনেকের ধারণা। এই অজ্ঞাত পরিচয় দুজনকেও তারা হত্যা করে গোয়াইন নদীর তীরে।
[৪৬] তাজুল মোহাম্মদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত