পিপড়ার ডাঙ্গা গণহত্যা, বাগেরহাট
পাকবাহিনীর যে দলটি বাগেরহাটের কালীগঞ্জ বাজারে অবতরণ করে, গানবোট থেকে নেমেই তারা পিপড়ার ডাঙ্গার পথে খাশেরহাট বাজারের দিকে এগিয়ে যায়। যাকে সামনে পায়, তাকেই গুলি করে। তাদের প্রথম গুলিটি বিদ্ধ করে কালীগঞ্জ বাজার সংলগ্ন পিপড়ারডাঙ্গা গ্রামের সখীচরণ প্রামাণিককে। এরপর পাকবাহিনী পিপড়ার ডাঙ্গা গ্রামের পশ্চিম প্রান্তে বিপদ মজুমদারের বাড়ির উত্তর পাশের রাস্তায় ইন্দুভূষণ মল্লিককে প্রথমে পায়ে এবং পরে বুকে গুলি করে হত্যা করে। প্রায় একই জায়গায় দেবেন্দ্রনাথ মল্লিককে পেছন থেকে গুলি করে মারা হয়। এরই কিছু পরে ক্ষিরোদ চন্দ্র মণ্ডলকেও গুলি করা হয়, ফুসফুসের পাশ দিয়ে বুকের হাড় কেটে গুলি বেরিয়ে গেলেও ক্ষিরোদ মারা যাননি। এই জায়গাটার কিছুটা দক্ষিণে পিপড়ার ডাঙ্গা পাঠশালার উত্তর পাশের ধানক্ষেত ও পাটক্ষেতের মধ্যে অনেকে লুকিয়ে ছিলেন। পাকবাহিনীর তিনজন সেপাই সেখানে নারায়ণচন্দ্র মণ্ডল, যোগেন্দ্রনাথ গুহ, অমর গুহ, ছবিরানী গুহ এবং রাধাকান্ত গাইনকে গুলি করে হত্যা করে। ছবি রানী ছিলেন অমর গুহের স্ত্রী। অমরকে গুলি করার সময়ে ছবি রানী তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়ান এবং এক গুলিতেই দুজন বিদ্ধ হন। একই সময়ে নারায়ণচন্দ্রের স্ত্রী পুতুল রানী যখন তাঁর স্বামীর সামনে গিয়ে দাঁড়াচ্ছিলেন, তখন রাইফেলের বাঁট দিয়ে তাঁকে বেদম প্রহার করা হয়। একই সময়ে শরৎ মণ্ডলের কন্যা সুনীতি মণ্ডল এবং হেমন্ত কুমার মণ্ডলের স্ত্রী লক্ষ্মীরানী মণ্ডল শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। রাস্তার উত্তরে একটি খাল তার অপর তীরেই চরবানিয়ারি গ্রাম, শেল নিক্ষেপ করে সেই গ্রামে নগেন্দ্রনাথ বড়ালের বাড়িসহ কয়েকটি বাড়িতে আগুন লাগানো হয়। পাকবাহিনী এরপর খাশেরহাট বাজার, চরবানিয়ারি স্কুল, স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রফুল্ল কুমার রায়ের বাড়িসহ বেশ কয়েকটি ঘরবাড়ি লুটতরাজ ও ধ্বংস করে বেলা চারটার মধ্যে গানবোটে ফিরে আসে এবং মূল ঘাঁটিগুলোতে প্রত্যাবর্তন করে।
[১২৪] স্বরোচিষ সরকার
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত