দৌরশিয়া গ্রাম গণহত্যা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের পশ্চিমে শিবগঞ্জের দৌরশিয়া গ্রাম। পাক সেনাবাহিনী একাত্তরের ১০ অক্টোবর এ গ্রামে হামলা চালায়। রাতের অন্ধকারে সেনাবাহিনী নদী পার হয়ে পাগলা নদীর তীরবর্তী এলাকা দখল করে ফেলে। পাকিস্তান সমর্থনকারীদের সহযোগিতায় ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ ধ্বনি দিতে দিতে তারা দৌরশিয়া গ্রামে প্রবেশ করে। সকাল থেকে শুরু হয় নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর তাদের অত্যাচার। গুলির প্রচণ্ড শব্দে ভীত হয়ে পাখিদের মতোই গ্রামবাসীরাও হালের গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি সবকিছু ফেলে দিশেহারা হয়ে প্রাণের মায়ায় ছুটে পালায়। সেনাদল গ্রামে হানা দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয় বাড়িঘরে। গ্রামবাসীদের আর্তচিৎকার, কান্না আর গুলির শব্দে সেই দিন দৌরশিয়া গ্রামে এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। সেদিন পাকসেনারা দৌরশিয়া গ্রামে ৩৯ জন লোককে হত্যা করেছিল।
সেদিন পাকসেনারা শুধু দৌরশিয়া গ্রামেই হত্যাযজ্ঞ চালায়নি তারা গঙ্গাধারপুর গ্রাম হয়ে মোল্লাটোলা গ্রামে হানা দেয়। এখানে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে আগুন লাগিয়ে ১০ জন সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। বড় নম্পট গ্রামে হানা দিয়ে নারী-নির্যাতনসহ ৪ জনকে হত্যা করে। ছোট নম্পটে ৬ জনকে হত্যা করে এবং নতুন মোল্লাটোলা গ্রামের এক ব্যক্তিকে ধরে সূর্য নারায়ণপুর গ্রামে যেতে রাস্তার মাঝপথে সাঁকোর ওপর দাঁড় করে বুকে কয়েকটি গুলি করে। এদের আস্তানা ছিল সুন্দরপুর ত্রাণশিবির। সেনাদল গ্রামের পর গ্রাম হানা দিয়ে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে সেদিন সন্ধ্যার দিকে আস্তানায় ফিরে যায়।
[৫৯৩] হাসিনা আহমেদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত