ঝালকাঠি গণহত্যা, ঝালকাঠি
১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল হতে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বরিশাল সদর উত্তর মহকুমায় ১৫০০০ এবং সদর দক্ষিণ মহকুমায় ১৫০০ লোক হত্যা করেছে পাকবাহিনী। ঝালকাঠি স্টিমার ঘাটের উত্তর পাশে এবং পৌরসভা অফিসের পূর্ব পাশের নদীর তীর ছিল পাকবাহিনীর ‘মাইলাই’। ঝালকাঠি সিও অফিসে পাকসেনাদের ক্যান্টনমেন্ট ছিল। ক্যাপ্টেন আজমত খানের নেতৃত্বে পাকবাহিনী ঝালকাঠি, নলছিটি ও রাজাপুরের বিভিন্ন গ্রাম থেকে হিন্দু, আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এনে নদীর তীরে গুলি করে হত্যা করে। হত্যা করে লাশ সন্ধ্যা নদীতে ফেলে দিত। বিশ্ববিবেকের চাপে পাক-সরকার জুলাই মাস হতে বাঙালিদের লাশ মাটিচাপা দেয়া শুরু করে। লম্বা গর্ত করে শত শত লাশ একটি গর্তে মাটিচাপা দিত। যাদের হত্যা করা হতো তাদের দিয়ে গর্ত করাত এবং তাদেরই হত্যা করে কখনো জীবন্ত মাটিচাপা দিয়েছে; ঝালকাঠি ছিল পাকসেনাদের পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের লীলাভূমি। ঝালকাঠি মহকুমার পাকসেনারা প্রায় ১২০০০ বাঙালি হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডে ঝালকাঠির সিআই পুলিশ শাহ আলম, ওসি সেকান্দার, রাজাকার ও শান্তি কমিটি সহযোগিতা করে। মুক্তিযোদ্ধা সঞ্জীবের বোন রমাবতী বসুকে পাকবাহিনী ধরে ফেলে। রমা ছিল ঝালকাঠি কলেজের ছাত্রী। পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী রমার ওপর অমানুষিক পাশবিক অত্যাচার করে বেয়নেট দিয়ে হত্যা করে। রমার লাশ নদীর তীরে ফেলে রাখে এবং তা কুকুরে খায়। পাকিস্তানি নরপশুরা ২৩ মে রমানন্দপুর মসজিদে দোয়া ইউনুস পড়ার সময় অনেক মুসল্লিকে হত্যা করে। ৬ মে কুতুবকাটি, ২২ মে কীর্তিপাশা, গোয়ালকান্দা, ৪ জুন গাজিপুথিপাড়া, ১০ জুন শ্রীমন্তকাটি, ১২ জুন ভীমরুলী, ১৭ ও ২৬ জুন বেশাইনখান প্রভৃতি গ্রামে কয়েকশ লোক হত্যা করে। হিমানন্দকাঠির শেফালী রাণী হানাদার পাকসেনাদের ব্যভিচারে রাজি হয়নি। তাই তাকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। তার এক বছরের শিশু মালতীকে আছড়ে মেরেছিল। মুসলিম লীগ দালালের সহযোগিতায় পাকবাহিনী কাঠালিয়া থানার আয়াবুনিয়া ও আনুয়াতে হালাকু ও চেঙ্গিস খানের ন্যায় হত্যা ও ধ্বংসলীলা চালায়।
[১৩৭] সিরাজউদ্দিন আহমেদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত