You dont have javascript enabled! Please enable it! জল্লাদখানা বধ্যভূমি | ঢাকা - সংগ্রামের নোটবুক

জল্লাদখানা বধ্যভূমি, ঢাকা

মিরপুর ১০ নং সেকশনের বধ্যভূমির পরিচিতি জল্লাদখানা বধ্যভূমি হিসেবে। খালের ধারের এ নির্জন এলাকায় ছিল একটি ছোট পাকা ঘর। পয়োনিষ্কাশন ট্যাংকের ওপর ছিল এটির অবস্থান। ১৯৭১-এ শত শত লোককে নির্মমভাবে অত্যাচার করে এখানে হত্যা করা হতো। স্বাধীনতার পর ট্যাংকের গর্ত থেকে উদ্ধার করা হয় অগণিত লাশ। চল্লিশ ফিট গভীর এই ট্যাংকটি ছিল নরকঙ্কালে ভরা। নরকঙ্কাল ও অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র দেখে বোঝা যায়, শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকল বয়সের মানুষকেই ঘাতকরা এখানে হত্যা করেছিল। ১৯৯৯ সনের ১৫ নভেম্বর থেকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ১০ নম্বর সেকশনের ডি ব্লকে অবস্থিত জল্লাদখানা বধ্যভূমির খননকাজ শুরু করে। খননকাজ চলাকালে হাড়গোড়, মাথার খুলি ছাড়াও প্লাস্টিকের জুতা, বুটের শুকতলি, স্যান্ডেল, কাঁচি, বেণীর অংশ, কানের দুল, প্লাস্টিকের চুড়ি ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেডের ৭ম ফিল্ড রেজিমেন্ট ও ৪৩ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি এ বধ্যভূমি থেকে মোট ৭০টি মাথার খুলি ও ছোট-বড় ৫,৩৯২টি হাড়গোড় এবং শহীদের ব্যবহৃত অন্যান্য নিদর্শন উদ্ধার করেন। এখানে অধিকাংশ লোককে ধারাল অস্ত্রের সাহায্যে জবাই করে বা কেটে কুটে হত্যা করা হতো। কাউকে কাউকে রড জাতীয় ভোঁতা অস্ত্রের সাহায্যে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছিল। বেশকিছু হাড়ে বিশেষ করে মাথায় গুলির চিহ্ন এবং ভোঁতা অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। এখান থেকে উদ্ধারকৃত বিভিন্ন সামগ্রীর মধ্যে হত্যা ও নির্যাতন কার্যে ব্যবহৃত বেশকিছু যন্ত্রপাতি পাওয়া যায়। এর মধ্যে আঙ্গুলের অগ্রভাগ এবং নখে চাপ দেবার একটি যন্ত্রও উদ্ধার করা হয়। এখান থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ঐ সময় ব্যবহৃত গোলাবারুদ ও তাজা গ্রেনেড উদ্ধার করে যা খননকার্য চলাকালে নিষ্ক্রিয় করা হয়।
[৩৪] ডা. এম.এ. হাসান

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত