গৌরনদী গণহত্যা, বরিশাল
বরিশাল সদর উত্তর মহকুমার গৌরনদী, উজিরপুর, মুলাদী, বাবুগঞ্জ, হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ থানার হত্যা, লুট, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ দিনের পর দিন চলতে থাকে। একমাত্র গৌরনদী থানায় কয়েক হাজার লোক হত্যা করা হয়। গৌরনদী থানায় রাংতা, খেজগতি, কসবা, বাটাজোড়, শোলক, গৈলা, বাকাই, বাকাল, দত্তপাড়া, জলিরপাড়, সুতারবাড়ি, টরকি, বাগদা, চন্দ্রহার প্রভৃতি গ্রাম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ১৯৭১ সালের ১৫ মে মাদারীপুর হতে একদল পাকসেনা গৌরনদীর বাকাল গ্রাম আক্রমণ করে। তাদের যাত্রাপথের একটি পুল গ্রামবাসীরা খুলে রাখে। ফেরার পথে ৪ জন পাকসেনা খালে পড়ে মৃত্যুবরণ করে। এ হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য গৌরনদী ও মাদারীপুর হতে কয়েকশ পাকসেনা বাকাই, রাংতা, ধানডোবা প্রভৃতি গ্রাম আক্রমণ করে। রাংতা বিলে কয়েকশ কৃষক মাঠে কাজ করছিল। তাদেরও হানাদার বাহিনী পাখির ন্যায় নির্মমভাবে হত্যা করে। সেদিন ছিল বাংলা ১৩৭৮ সনের ১ জ্যৈষ্ঠ। অনেকে রাংতা বিল অতিক্রম করছিল ভারতে পালাবার জন্য। তারা সকলে নিহত হলো। চাঁদনী রাংতায় প্রায় ১০০০ লোক হত্যা করা হয়। ২ জ্যৈষ্ঠ পাকবাহিনী গৈলা, ৩ জ্যৈষ্ঠ বাটাজোড়ে অনেক লোক হত্যা করে। গৌরনদী কলেজ ছিল পাক সেনানিবাস। তারা গৌরনদী কলেজ হতে প্রত্যেক দিন গ্রামের পর গ্রাম অপারেশন করে। যাদের ধরে নিয়ে আসত তাদের গৌরনদী কলেজের পেছনে ও ত্রিমুহনীতে হত্যা করে খালে ফেলে দিত। পাকবাহিনী বরিশালের বিখ্যাত সার্কাসের মালিক লক্ষণ দাসের বাড়ি আক্রমণ করে তাকে হত্যা করে। এমনকি দস্যুরা সার্কাসের হাতিটাকেও গুলি করে হত্যা করে পৈশাচিক আনন্দ করেছিল। ২৫ জুন গৌরনদীর ২৫ জন পাকসেনা বরিশাল ল কলেজের অধ্যক্ষ উপেন্দ্রনাথ ব্যানার্জির শোলনা গ্রাম আক্রমণ করে। তিনি শহর ছেড়ে বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তার পুত্র হাতেম আলী কলেজের বিএ ক্লাসের ছাত্র সুভাষ, ভাই যোগেন্দ্রনাথ, আত্মীয় বীরেন ব্যানার্জি, শান্তিনাথ পুতুণ্ড প্রমুখকে হত্যা করে। উপেন বাবু আত্মগোপন করে বেঁচে যান।
[ ১৩৫] সিরাজউদ্দীন আহমেদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত