খান চা বাগান গণহত্যা, সিলেট
সিলেট শহর থেকে তামাবিল সড়ক ধরে ১২ মাইল দূরেই খান চা বাগান। বর্তমানে এই বাগান জৈন্তাপুর উপজেলার অন্তর্গত। সেদিন ছিল ১৭ এপ্রিল সকালবেলা। বাগানের শ্রমিকরা কিছুক্ষণ আগে তাঁদের কাজকর্ম শুরু করেছেন। হঠাত করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সামরিক কনভয়গুলোকে শহর থেকে সেই রাস্তা ধরে এগুতে দেখা গেল। আকাশে গর্জন শোনা গেল জঙ্গি বোমারু বিমানের। ছুটোছুটি শুরু হলো নিরস্ত্র মানুষজনের। এই অবস্থায় শ্রমিকরা আর বাগানে থাকার ভরসা পেল না। প্রাণভয়ে যাত্রা শুরু করে ভারতের উদ্দেশ্যে। এছাড়া তাঁদের গত্যন্তর ছিল না। যে যেভাবে ছিল, সেভাবেই ছুতে চলল তামাবিল সড়ক ধরে। কিন্তু মাত্র তিন মাইল পথ অতিক্রম করে খরিসের সেতুর ওপর ওঠার সাথে সাথেই পাকবাহিনীর একটি দল পথরোধ করে দাঁড়ায়। তারা সালুটিকর থেকে পায়ে হেঁটে এসে উঠেছে এই সেতুর পাড়ে। অসংখ্য মানুষের এই মিছিলকে ফিরে যেতে বাধ্য করল তারা বাগানে। কারণ বাগানের মালিক একজন অবাঙালি। কিন্তু এসময় যে ঘটনাটি ঘতে, মিছিলকারীদের মতে তা বড় রকমের প্রশ্নের উদ্রেক করে। মিছিলে যেসব শক্ত-সমর্থ যুবক গোছের লোক ছিল, পাকবাহিনী তাঁদের মিছিল থেকে আলাদা করে নেয়। বাদ বাকিদের বলে বাগানে ফিরে যেতে।
আটক এই ১৭ জন যুবক শ্রমিকদের দিয়ে তারা সারা দিন তাঁদের গোলাবারুদ বহন করার কাজে ব্যস্ত রাখে। শুধু তাই নয়, তাঁদের দিয়ে বাঙ্কারও খনন করায়, নানা ফাই ফরমাশ খাটায়। রাতে খরিস সেতুর বাম পাশে খনন করায় তারা আর একটি গর্ত। সেই গর্তেই তাঁদের লুকিয়ে থাকার নির্দেশ দেয়া হলো। সমস্ত দিন এবং রাতের দুই প্রহর পর্যন্ত কঠোর শ্রমের পর এই নির্দেশ এলে, সরল বিশ্বাসে ১৭ জন শ্রমিক সেই গর্তে ঢুকে পড়ে। তাই গর্তের মধ্যে জড়োসড়ো হয়ে বসে পড়ল সবাই। তৎক্ষণাৎ গর্জে উঠলো পাকসেনাদের হাতের রাইফেলগুলো।
নিরব হয়ে গেল ১৭ জন শ্রমিকের দেহ।
[৪৬] তাজুল মোহাম্মদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত