কানাইহাট গণহত্যা, সিলেট
সিলেট জেলা সদর থেকে প্রায় ৩২ মাইল পূর্বে কানাইঘাট উপজেলা সদর। ভারতীয় সীমান্তের কাছাকাছি এই উপজেলা। এখানে স্বাধীনতাকামী জনতার পাশাপাশি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দালালরাও ছিল অত্যন্ত সক্রিয়। দালাল বাহিনী কানাইঘাটের গ্রামেগঞ্জে নিয়ে গেছে হানাদার পাকবাহিনীকে। সহায়তা করেছে খুন, নারী নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ সকল ধরণের অপরাধমূলক কাজে। রাজাকার, আলবদররাও নিজেদের উদ্যোগে করেছে অসংখ্য অপরাধকর্ম। মালীগ্রামে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে তারা।
ফজল গ্রামের পালজুর পাড়ার প্রায় সকল হিন্দু আত্মরক্ষার্থে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। তবু রেহাই পায়নি। উপেন্দ্র দাশের মেয়ে হীরাদাসকে তুলে নেয় রাজাকার আতাউর রহমান আতাই। গৌরিপুর গ্রামেও রাজাকাররা পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় পাকবাহিনীকে। সেই গ্রামের সাদত হোসেনের অন্তঃসত্বা স্ত্রীকে তুলে নিয়ে আসতে চাইলে সাদত হোসেন বাঁধা দেন। তাই সাদতকে তারা হত্যা করে গুলি করে। ১৯৭১ সালে কানাইঘাট থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন ডা. ফয়জুল হক। তাকে রাজাকারদের সহায়তায় ধরে নিয়ে গিয়ে পাকবাহিনী চালায় অমানুষিক নির্যাতন। তারপর নির্যাতন কক্ষে আটক রেখে দিনের পর দিন চালায় পীড়ন। এভাবে থানার সর্বত্র তারা সম্পাদন করে এ জাতীয় বহু অপরাধকর্ম। থানার দাকবাংলোয় কত বাঙালিকে যে পাক হার্মাদদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাঁর কোনো ইয়ত্তা নেই।
পাকবাহিনী ও রাজাকাররা মহেশপুর গ্রামের ফয়জুল হক এবং নন্দীরাইয়ের আব্দুর রহিমকে হত্যা করে। শারীরিক নির্যাতন জালালউদ্দিন, মাহমুদ হোসেন, মানিক উদ্দিনসহ অসংখ্য লোকের ওপর। থানার মন্সুরিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত এক সমাবেশে মাওলানা আবু সায়ীদ এই মর্মে ফতোয়া জারি করে যে, ‘যারা পাকিস্তান ভাঙতে চায় কিংবা যারা স্বাধীনতার পক্ষের লোক, তারা কাফের’।
[৪৬] তাজুল মোহাম্মদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত