বিপ্লবী বাংলাদেশ
১৪ নভেম্বর ১৯৭১
সাহায্য করুন
কালো মেঘের রাহুগ্রাস থেকে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য্য ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে। সেদিন আর বেশী দূরে নয় যেদিন বাংলার মানুষ জয়ধ্বনিতে মুখরিত করে তুলবে বাংলার আকাশ বাতাস।
রূপসী বাংলা, সোনার বাংলা, বাংলাদেশ। ক্রন্দিতা বাংলাদেশের অশ্রু মোচন, নির্যাতিত মানুষের মুক্তির আলোর জন্যই বাংলার তরুণ শক্তি জীবন তুচ্ছ করে এগিয়ে চলেছে সম্মুখের হানাদার হনন করে। প্রতিদিন প্রতিটি রণাঙ্গনে অসংখ্য শত্রু সৈন্যের রক্তে মুক্তি-যোদ্ধাদের প্রতিজ্ঞা আরো সুদৃঢ় হচ্ছে। আর এরই প্রতিফলে মুক্ত এলাকা গড়ে উঠছে।
এই সব মুক্ত এলাকার মুক্ত মানুষের কল্যাণে বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক কাজ কর্ম শুরু হয়েছে অনেক দিন থেকেই। কিন্তু সদ্য মুক্ত এলাকাগুলোতে অচিরেই বাংলাদেশ সরকারকে প্রশাসনিক কাজ কর্ম গ্রহণ করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। কেননা এই সব মুক্ত এলাকায় দীর্ঘ-দিন যুদ্ধ চলার জন্য ফসল বাড়ীঘর বলতে কিছু নেই। মুক্ত এলাকার মানুষরা বর্তমানে এক রকম না খেয়ে উন্মুক্ত আকাশের নীচে বাস করছে। অতএব এই সব মানুষের কল্যাণে সদ্য মুক্ত এলাকাগুলিতে বাংলাদেশ সরকার এগিয়ে না এলে ছিন্নমূল সর্বহারা মানুষের জীবনে করুণ পরিণতি ডেকে আনবে। অবশ্য বাংলাদেশ সরকারের ক্ষমতা আজ সীমিত। মুক্ত এলাকার লক্ষ লক্ষ মানুষকে সাহায্য করা বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে দুঃসাধ্য ব্যাপার। তাই বিশ্বের মুক্তিকামীদেশ ও তার জনগণকে এ ব্যাপারে সক্রিয় হতে হবে। তবেই হয়ত মুক্ত এলাকার ছিন্নমূল সর্বহারা মানুষগুলো বাঁচার অবলম্বন খুঁজে পাবে। বিশ্ব-বিবেক যদি আজ বাংলার দুর্দশাগ্রস্থ মানুষের সাথে বেইমানি করে তাহলে আগামী দিনে এর মাশুল তাঁদের দিতেই হবে। বিলম্বে হলেও কতকগুলো বৃহৎ রাষ্ট্র বর্তমানে যে বাংলা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঠিক মূল্যায়ণ করতে পেরেছে সে জন্য তারা ধন্যবাদার্হ। বিশ্ব ইতিহাসে অনেক মুক্তি যুদ্ধের গৌরবময় কাহিনী রয়েছে তার সাথে বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধও এক নূতন অধ্যায়ের সংযোজন করতে সমর্থ হবে যেদিন সেদিন নিষ্পেষিত সর্বহারা মানুষের বাঁচার সঠিক পথ খুঁজে পাবেন।
সূত্র: বিপ্লবী বাংলাদেশ ফাইল