You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.07 | বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী কে? দুষ্কৃতকারী কে? | বিপ্লবী বাংলাদেশ - সংগ্রামের নোটবুক

বিপ্লবী বাংলাদেশ
৭ নভেম্বর ১৯৭১

বাংলাদেশে
অনুপ্রবেশকারী কে? দুষ্কৃতকারী কে?

চল্লিশ বৎসর পূর্বে হিটলারের রাক্ষস চীৎকারে ইউরোপে আকাশ মুহূর্মুহূ বিদীর্ণ হত। চীৎকার আর্তনাদের। তার বিলাপের বিষয়বস্তু ছিল : অন্য অন্য দেশের আক্রমণাত্মক কার্যে জার্মানী ও জার্মান জাতি বিপন্ন।
অথচ বিশ্বের লোকের চোখে এর বিপরীতটাই সত্য বলে মনে হত। কারণ তারা দেখত যে জার্মানীই আজ অস্ট্রিয়াকে কাল চেকোশ্লোভাকিয়াকে পদাতিক, ট্যাঙ্ক এবং বিমানবাহিনীযোগে আক্রমণ করছে। কারণ প্রকৃতই ঐ বিপরীতটাই সত্য।
আজ চল্লিশ বৎসর বাদে হিটলারের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইয়াহিয়াও রাক্ষস চীৎকারে পাক-ভারত-বাংলাদেশের আকাশ আচ্ছন্ন করছে। বুলি, পাকিস্তান বিপন্ন। ভারতের প্ররোচনায় ভারতের অনুচরবর্গ পাকিস্তানের পুণ্যভূমি আক্রমণ করেছে। তাদের দুষ্কৃতকার্যে ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তান ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বার উপক্রম হয়েছে। এই বিপদ থেকে পরিত্রাণ পাবার একমাত্র উপায় ভারত আক্রমণ।
কিন্তু আজও বিশ্বের লোকের চোখ প্রতিপন্ন হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে যে ইয়াহিয়ার অভিযোগের বিপরীতটাই সত্য। বিশ্বের লোকের সমক্ষে বাংলাদেশের শতকরা ৯৯ জন লোক প্রকাশ্য নির্বাচনে বাংলাদেশের স্বাতন্ত্র্যের দাবী ঘোষণা করেছে। তার কারণ বাংলাদেশের বুকের উপর বসে গত চব্বিশ বছর যাবৎ পশ্চিম পাকিস্তানের মুষ্টিমেয় ধনপতি এবং ভূস্বামী বাঙালীর রক্ত শোষণ করেছে।
বাংলাদেশের শতকরা ৯৯ জন লোক—যাদের বাংলার মাটিতে জন্ম, যারা বাংলার মাটির রসে পুষ্ট—তারা কী “অনুপ্রবেশকারী”? সেই শতকরা ৯৯ জন বাঙালীর আকাঙ্ক্ষা, শোষণাবসানের কামনা যারা রক্ত দিয়ে পূর্ণ করতে যাচ্ছে, সেই বাঙালী মুক্তিযোদ্ধারাই কি “অনুপ্রবেশকারী”?
না কি, সেই সব পশ্চিম পাকিস্তানী ধনিক-ভূস্বামী-রক্তপিপাসু যুদ্ধলিপ্সু সেনাধ্যক্ষরাই অনুপ্রবেশকারী? অবশ্যই তারা অনুপ্রবেশকারী। প্রথমতঃ তারা পাকিস্তানের শাসনযন্ত্রে অনুপ্রবেশ করেছে। কোন নির্বাচনে কে সিকন্দর মির্জা-আয়ুব-ইয়াহিয়া খানকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছে? কেউ নয়। পশ্চিমা ধনিক-ভূস্বামীবর্গ এবং তাদেরই বেরাদর সেনাধ্যক্ষরা পদাতিক, ট্যাঙ্ক এবং বিমানবাহিনীর শক্তির বলে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেজে বসেছে।
হাজার মাইল দূরের পশ্চিম পাকিস্তানী পদাতিক, ট্যাঙ্ক, বিমানবাহিনীর প্রয়োগ দ্বারা বাংলাদেশের শতকরা ৯৯ জনের রায় পদদলিত করে, তাদের প্রাণাধিক প্রিয় নেতা মুজিবকে বন্দী করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। এবং তাদের দুষ্কৃতি চরমে উঠেছে বাংলার গ্রাম জ্বালিয়ে, লক্ষ লক্ষ বাঙালীকে হত্যা করে, লক্ষ লক্ষ বাঙালীকে মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত করে, বাঙালী নারীকে ধর্ষণ ও লাঞ্ছনা করে, বহু বাঙালী বীর সন্তানকে নিরস্ত্র করে নৃশংসভাবে হত্যা করে। দুষ্কৃতকারী পশ্চিম পাকিস্তানী পশুশক্তিই—আর কেউ নয়।
এবং এর হাত থেকে পরিত্রাণ পাবার একমাত্র উপায় মুক্তিবাহিনীর অবিরাম, নিরবচ্ছিন্ন প্রতি-আক্রমণ। তার অবসান পূর্ণ স্বাধীনতায়।

সূত্র: বিপ্লবী বাংলাদেশ ফাইল