বিপ্লবী বাংলাদেশ
৭ নভেম্বর ১৯৭১
প্রতিরোধী গেরিলা বাহিনী
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
১। আক্রমণস্থলে গেরিলারা নীরবতা এবং স্থিরতা যথাযথভাবে পালন করে। গেরিলাবিরোধী সেনাদলের অগ্রবর্তী ছোট নিরাপত্তাদলটিকে প্রধান আক্রমণস্থল অতিক্রম করে যেতে দেওয়া হয়। সেটিকে প্রধান আক্রমণকারী দল বাদে অন্য একটি গেরিলাদল আক্রমণ করে। গুলি ছোঁড়া শুরু হয় এবং প্রধান সেনাদলের প্রথম উপদলটিকে যে গেরিলা উপদল থামিয়ে দেবে তাদের দেওয়া সংকেত অনুযায়ী সমগ্র আক্রমণটি পরিচালিত হয়। আক্রমণ যদি সার্থক হয় তবে গেরিলারা দ্রুততার সঙ্গে ব্যবহারযোগ্য সরবরাহ অস্ত্রশস্ত্র ও সরঞ্জাম হস্তগত করে এবং বাকিগুলো বিনষ্ট করে পালিয়ে যায়। গেরিলা সংগঠনের প্রথম পর্যায়ে গেরিলারা আক্রমণস্থলে পরিত্যক্ত অস্ত্রশস্ত্র এবং গোলাবারুদ অবশ্য সংগ্রহ করবে, কারণ এগুলোই তাদের পুনঃ সরবরাহের প্রধান উপায়।
২। আক্রমণের এলাকায় পৌঁছানো, এলাকাটিকে আক্রমণোপযোগী করে তোলা, এবং আক্রমণের পরে পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে গেরিলারা যথাসাধ্য নিরাপত্তা বিষয়ক ব্যবস্থা অবলম্বন করে। প্রধান আক্রমণস্থল থেকে কিছু দূরে দ্বিতীয় আর একটি আক্রমণ প্রায়ই চালানো হয় প্রতিপক্ষের শক্তিবৃদ্ধিকে বিলম্বিত বা ধ্বংস করার জন্য। প্রায়ই প্রাথমিকভাবে একটি আক্রমণ চালানো হয়—শত্রুকে আর একটি বৃহত্তর আক্রমণের ফাঁদে ফেলানোর জন্য।
৩। আক্রমণকৃত সেনাদলকে বিনষ্ট করার যথেষ্ট ক্ষমতা গেরিলাদের না থাকলে প্রতিআক্রমণ আরম্ভ হওয়ার পূর্বেই পূর্ব নির্ধারিত সংকেত অনুযায়ী আক্রমণ বন্ধ করা হয়। পরে পরিকল্পিতভাবে নিরাপত্তা রক্ষীসহ সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়া হয়। প্রায়ই গেরিলারা বিভিন্ন দরে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন দিকে পালিয়ে যায়, যাতে পিছনে ধাওয়া করা শক্ত হয়। অনিয়মিত গেরিলা অথবা বেসামরিক লোকদেরকে শত্রুর উপরে বাহ্যিকভাবে দৃষ্টি রাখার জন্য, হয়রানি করার জন্য এবং যারা গেরিলাদের খোঁজার চেষ্টা করছে তাদের ব্যাপারে রিপোর্ট করার জন্য রাখা হয়।
(গ) Raid—গেরিলারা রেড পরিচালনা করে স্থায়ী ঘাঁটিগুলিকে ধ্বংস করা এবং গেরিলাদের অস্ত্রশস্ত্র, সরঞ্জাম ও সরবরাহ দখল করার জন্য। কোন ব্যক্তিকে হত্যা বা বন্দী করা এবং গেরিলা বিরোধীদের হয়রানি বা তাদের মনোবলকে নষ্ট করার জন্য। অতর্কিত আক্রমণের মত রেডও পুঙ্খানুপুঙ্খ গোয়েন্দা তথ্য, অনুশীলনসহ বিশদ পরিকল্পনার উপরে প্রতিষ্ঠিত এবং এটা দ্রুততা, আকস্মিকতা এবং তীব্রতার সঙ্গে কার্য্যকরী করা হয়। রেড-কারী গেরিলারা শত্রু ঘাঁটিতে অনুপ্রবেশের পন্থা অবলম্বন করে। এটা সাধারণতঃ রাত্রে করা হয় এবং কড়া নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা ও গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। যে গেরিলারা রেড করবে তাদেরকে সচরাচর তিনটি প্রধান ভাগে বিভক্ত করা হয়। প্রতিটির থাকে একটি বিশেষ কর্তব্য। একটি শাখা প্রহরীদের নিশ্চিহ্ন করে। আকস্মিকতা যেহেতু এ ধরণের আক্রমণের অপরিহার্য অঙ্গ, সেহেতু প্রহরীদের প্রথমেই কৌশলে শেষ করা হয় যেন তারা বিপদ সংকেত দিতে না পারে। এ কাজে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার থেকে সচরাচর বিরত থাকা হয়। প্রহরীদেরকে সরানোর পরে একটি দ্বিতীয় শাখা সামরিক অফিসারদেরকে হত্যা বা বন্দী করে এবং সরঞ্জাম ও সরবরাহ ধ্বংস বা হস্তগত করে। একটি তৃতীয়দল কার্যক্রমটিকে পাহারা দেয় এবং ফিরে যাওয়ার সময় নিরাপত্তার কাজ করে। সময় সময় রেড-কারী দলের ব্যক্তি বিশেষ রেড এর পূর্বেই লক্ষ্যস্থলে অনুপ্রবেশ করে এবং পূর্ব পরিকল্পনারূপে কাজ করে শত্রুদলের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। এরকম সাহায্যকারী ব্যক্তিরা লক্ষ্যস্থলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত থাকে। (ক্রমশঃ)
সূত্র: বিপ্লবী বাংলাদেশ ফাইল