You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.31 | ২টি এল.এম.জি সহ ২০০ চীনা অস্ত্র উদ্ধার | বিপ্লবী বাংলাদেশ - সংগ্রামের নোটবুক

বিপ্লবী বাংলাদেশ
৩১ অক্টোবর ১৯৭১

“মানবের তরে মাটির পৃথিবী দানবের তরে নয়”

কুষ্টিয়া-যশোহর ও খুলনা রণাঙ্গন :
১৮ই অক্টোবর শিজলু ও খুবরি এলাকায় মুক্তি যোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণে, ১০ জন খান সেনা ও ৭ জন রাজাকার নিহত এবং ১৩ জন গুরুতররূপে আহত হয়। গেরিলাদের আক্রমণে ভীতসন্ত্রস্ত মেজর মনসুরকে পাক কর্তৃপক্ষ এ অঞ্চল থেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। ২৬ অক্টোবর ভাটসালা, সাতক্ষিরা, মুক্তি যোদ্ধাদের সাথে পাক হানাদারদের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে ৮ জন পাক শত্রু সেনা নিহত ও অনেক আহত হয়।
২৪, অক্টোবর, খুলনা, শ্যামনগর থানা মুক্তি বাহিনী আক্রমণ করে ৩ জন খান সেনা খতম করেন। ২৩, অক্টোবর, পাটকেল ঘাটায় পাক সেনারা মুক্তি বাহিনীর দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং ১৫ জন শত্রু সেনা খতম হয়। এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে খুলনার আসাশুনি ক্যাম্প মুক্তি বাহিনীর দ্বারা আক্রান্ত হয়। এ আক্রমণে ৬৪ জন রাজাকার নিহত ও ৩৫ জন আহত হয় এবং কয়েকটি রাইফেল ও কিছু পরিমাণ গোলাবারুদ হস্তগত হয়।

পাক সৈন্য বন্দী
বরিশাল :
৭ই অক্টোবর, বিলম্বে প্রাপ্ত এক খবরে জানা গেছে, গৌরনদীর সাহেবের হাটে মুক্তি বাহিনী পুলিস লঞ্চ আক্রমণ করে বরিশালের এস.ডি.ও (নর্থ) ও এডিসনাল এস.পি সহ বেশ কয়েকজন পাক পুলিশকে খতম করেছে। এখানে একজন পুলিশ হাবিলদার মুক্তি বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে; উক্ত পুলিশ লঞ্চটি ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে।
৯ই অক্টোবর, বাটাজোরে গেরিলারা পাক সৈন্যের ছাউনিতে আক্রমণ চালিয়ে বেশ কয়েকজন সৈন্যকে আহত করে। ছাউনিটি ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
৪ঠা অক্টোবর, কাউখালীতে ১৮০ জন পাক সৈন্য ও রাজাকারের সঙ্গে ১৪ জন মুক্তি বাহিনীর তুমুল যুদ্ধ হয়। ফলে ১৭ জন পাক সৈন্য ও ১০ জন রাজাকার খতম হয় এবং প্রচুর পরিমাণে আহত হয়। পরদিন গ্রামের লোকেরা তিনজন আহত আত্মগোপনকারী সৈন্যকে কুড়াল দ্বারা হত্যা করে। পরাজিত পাক সৈন্যরা অস্ত্র-শস্ত্র নদীতে ফেলে পালিয়ে যায় বলে জানা গেছে; পালাতে গিয়ে তিনজন পাক সৈন্য মুক্তি বাহিনীর হাতে বন্দী হয়। বর্ত্তমানে বন্দী তিনজন মুজিবনগরে আছে। এদের নাম জান গুল, বাতেন গুল, আবদুল মল্লিক। আর এক খবরে জানা গেছে ইন্দিরা হাটে এ মাসের ২য় সপ্তাহে পাক হানাদাররা লুটতরাজ শুরু করলে মুক্তি বাহিনী বাধা দেয়। ফলে ৮ জন হানাদার খতম হয়। এখানে ২টি রাইফেল মুক্তি বাহিনীর হস্তগত হয়েছে। এছাড়া এ মাসের মাঝামাঝি জুলুহার নদীতে দু’টি পাট বোঝাই জাহাজে আগুন ধরিয়ে দেয়।

২টি এল.এম.জি সহ ২০০ চীনা অস্ত্র উদ্ধার
ফরিদপুর :
ভেদারগঞ্জ এলাকায় এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মুক্তি বাহিনীর সাথে পাক হানাদারদের এক প্রবল সংঘর্ষে ১৫০ জন খান সেনা খতম ও বহু সংখ্যক গুরুতররূপে আহত হয়। এ ছাড়া ৯ জন খান সেনা মুক্তি বাহিনীর হাতে বন্দী হয় এবং ২ শত চীনা রাইফেল, ২টি এল-এম-জি এবং প্রচুর গোলাবারুদ মুক্তিবাহিনীর হস্তগত হয়।

গানবোট নিমজ্জিত
পটুয়াখালী :
পাথর ঘাটায় কচানদীর মোহনায় এ মাসের ৩য় সপ্তাহে মুক্তি বাহিনী একটি গ্রীন রংয়ের গানবোট ডুবিয়ে দেয়, ফলে গানবোটে যে ক’জন পাক সৈন্য ছিল তাদেরও সলীল সমাধি হয়, পরে মুক্তি বাহিনী গানবোটের ইঞ্জিন এবং অস্ত্র-শস্ত্র উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এছাড়া নেমতিতে দু’টি রসদ বোঝাই লঞ্চ ডুবিয়ে দিয়েছে।
এ ছাড়া মুক্তি বাহিনী বেতাগীর কুখ্যাত আবদুস ছাত্তার ও আবদুল বারেককে হত্যা করেছে। এরা শান্তি কমিটির ৮ জন ডাকাতকেও নিহত করেছে। তুষখালীতে আর এক সংঘর্ষে বারোজন রাজাকারকে খতম করে। এখানে প্রচুর অস্ত্র শস্ত্র মুক্তি বাহিনীর হস্তগত হয়েছে।

সূত্র: বিপ্লবী বাংলাদেশ ফাইল