You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.17 | গাইবান্ধার সন্নিকটে মুক্তিবাহিনী পাক সেনাদের উপর এক আক্রমণ চালিয়ে মেজর শের খান সহ দু্ইজন জুনিয়ার কমিশন্ড অফিসারকে হত্যা করেছে | বিপ্লবী বাংলাদেশ - সংগ্রামের নোটবুক

বিপ্লবী বাংলাদেশ
১৭ অক্টোবর ১৯৭১

দুর্বার মুক্তিবাহিনী এগিয়ে চলেছে
গাইবান্ধার সন্নিকটে মুক্তিবাহিনী পাক সেনাদের উপর এক আক্রমণ চালিয়ে মেজর শের খান সহ
দু্ইজন জুনিয়ার কমিশন্ড অফিসারকে হত্যা করেছে

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টর
৫ অক্টোবর—মুক্তি বাহিনী কামদেবপুরে ১০ জন খানসেনাকে খতম করে। এছাড়াও মুক্তিবাহিনী দর্শনা ও কোটচাঁদপুরের মধ্যে অনেকগুলো রেল কালভার্ট উড়িয়ে দেওয়ায় ঐ অঞ্চলে রেলপথে যোগাযোগের বিপুল ক্ষতি হয়েছে।
মুক্তি বাহিনী কাগমারীর সন্নিকট পাক হানাদারদের ‍উপর আক্রমণ চালালে ৫ জন হানাদার সেনা খতম হয়। একই দিনে কেওমখোলার সন্নিকটের ২ জন পাক হানাদারের মৃত্যু হয় এবং ১ জন জখম হয়। খুলনার পীরগাছা নামক স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে একজন জুনিয়ার কমিশন্ড অফিসার সহ ৩ জন খানসেনা নিহত হয়।
গোপালগঞ্জ মহকুমার ভাটিয়া পাড়া নামক স্থানে মুক্তিফৌজ পাকসেনাদের এক ত্রিমুখী আক্রমণ চালিয়ে ৩০ জন পাকসেনা খতম করে এবং সেইখানে ২০ জন রাজাকারেরও মৃত্যু ঘটে। এ আক্রমণের পর উক্ত এলাকার বহু রাজাকার তাদের অস্ত্রশস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর
৫ই অক্টোবর জগন্নাথ ঘাটে মুক্তিবাহিনীর গোলাবর্ষণে তিনজন পাকসৈন্য নিহত হয়েছে। এর আগে ঐ অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে হানাদারদের এক সংঘর্ষে ২ জন খান সেনা ও ৩ জন রাজাকার খতম হয়েছে। মজুমদারহাটে মুক্তিবাহিনীর গুলিতে ৩ জন পাকসেনা নিহত হয়েছে। আরও ৩ জন খানসেনা খতম হয়েছে বিবিরবাজার অঞ্চলে। পিপুলিয়া ও লালমৈষাগঞ্জের মধ্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-সেতুও মুক্তিবাহিনী ধ্বংস করে দিয়েছে।
মুক্তি বাহিনী “খাজুরিয়া” নামক স্থানের সন্নিকটে পাক হানাদারদের উপর এক আক্রমণ চালিয়ে ৪ জন খানসেনা খতম করে। আজনাপুর নামক স্থানের সন্নিকটে মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকবার আক্রমণ চালালে ১৩ জন খানসেনার মৃত্যুঘটে এবং ৩ জন জখম হয়।

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর
আমাদের মুক্তি বাহিনী রংপুর জেলার হাতিবান্ধা নামক স্থানে ৫ জন শত্রু সেনাকে খতম করে। “দেওরা” নামক স্থানে এমবুস করে ২ জন খান সেনা খতম করে এবং একই দিনে রাজশাহী জেলার “আটপারা” নামক স্থানে রাজাকারদের ঘাঁটি উড়িয়ে দেয় এবং ৫ জন রাজাকার নিহত হয়। দিনাজপুর জেলার “হামজাপুর” নামক স্থানে মুক্তি বাহিনীর ভয়ে ৪ জন রাজাকার তাদের রাইফেলসহ আত্মসমর্পণ করে।
মুক্তি বাহিনী “কসুম্বী” নামক স্থানের সন্নিকট পাক বাহিনীর উপর আক্রমণ চালিয়ে ৪ জন শত্রু সৈন্য খতম করে। “বালটিয়া”র সন্নিকটে এক আক্রমণ চালিয়ে মুক্তি বাহিনী একটি গাড়ী ধ্বংস করে দেয় এবং একজন পাক সেনার মৃত্যু ঘটায়। বুরান্নমারী রোডের উপর মাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মুক্তি বাহিনী ১০ জন পাক সেনার মৃত্যু ঘটায়।

অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার
ময়মনসিংহ-শ্রীহট্ট সেক্টর
৫ই অক্টোবর—মুক্তিবাহীনীর আক্রমণে কামরাইলে ৩ জন খান সেনা খতম হয়েছে। ৬ই অক্টোবর দুধকুড়ায় মুক্তিবাহিনী ২ জন পাকসৈন্য নিধন করেছে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে মুক্তিফৌজ ময়মনসিংহ জেলার কলমাকান্দা, মুক্তাগাছা, নাকলা, এবং আরও অনেকগুলি থানায় আক্রমণ চালায়। ফলে বেশ কিছু সংখ্যক পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ এবং রাজাকার নিহত হয়েছে। এই আক্রমণে মুক্তিবাহিনী ২০টা রাইফল্ উদ্ধার করেছে।
হানাদার বাহিনী ময়মনসিংহ জেলার “দানুয়া” নামক স্থানে মুক্তি বাহিনীকে আক্রমণ করলে, মুক্তিবাহিনীরা সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা জবাব দেয়, ফলে ১০ জন শত্রুসেনার মৃত্যু ঘটে। সিলেট জেলার “কুলানরা” নামক স্থানে হানাদার বাহিনীর উপর আক্রমণ চালিয়ে ৫ জনকে হত্যা করে। এই আক্রমণ কালে ২ জন রাজাকার তাদের রাইফেল সহ মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। ঐ একই দিনে মাইনের সাহায্যে শত্রুবাহিনীর একটি গাড়ী উড়িয়ে দেয় এবং একটি লঞ্চকে ধ্বংস করে।

কাউখালীতে ১০০ জন রাজাকার ও পাঞ্জাবী পুলিশ খতম
বরিশাল :
অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে কাউখালীর কেউন্দিয়া গ্রামে ২০০ শত রাজাকার ও পাঞ্জাবী পুলিশ হানা দিয়ে নিরীহ গ্রামবাসীর উপর বর্বরোচিত অত্যাচার চালাতে থাকলে, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা সংবাদ পেয়ে বীর বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়ে, ১০০ জন রাজাকার ও পাঞ্জাবী পুলিশকে খতম করতে সক্ষম হয়। এরপর বাকী ৪০ জন পালিয়ে যায়। জানা গেছে স্থানীয় জনসাধারণ এই আক্রমণ ঠেকাতে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করে। বর্ত্তমানে কাউখালী মুক্ত এলাকা। আশা করা যাচ্ছে কিছুদিনের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার এখানে প্রশাসনিক কাজকর্ম শুরু করতে পারবেন।
আর এক সংবাদে জানা গেছে মুক্তিবাহিনী বরিশাল ও খুলনার মধ্যে সমস্ত জলযান বন্ধ করে দিতে সক্ষম হয়েছে। রকেট, ষ্টীমার এবং লঞ্চ কিছুই এখন যাতায়াত করছেনা।

পটুয়াখালি
পটুয়াখালি জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তিবাহিনী বিশেষ তৎপরতার সঙ্গে রাজাকার, দালাল ও পাক লুটেরাবাহিনী খতম করে চলছে। ভীত সন্ত্রস্ত সাধারণ দেশবাসী মুক্তিবাহিনীর ব্যাপক তৎপরতায় এখন অনেকটা শান্তিতে দিনযাপন করতে সমর্থ।

সূত্র: বিপ্লবী বাংলাদেশ ফাইল