বিপ্লবী বাংলাদেশ
২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
একটি সাক্ষাৎকার
—মেহেরুন আমিন
আগষ্ট মাসের ন’ তারিখ সকালে আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করি। সবল, সুস্থ, বুদ্ধিদীপ্ত মানুষটি তাঁর ক্যাম্প হেডকোয়ার্টারের চেয়ার বসে। টেবিলে টেলিফোন, কয়েকটি ফাইল এবং পাশে টেবিলের উপর জাতির পিতা শেখ মুজিবের তেজোদীপ্ত ফোটো। দেয়ালে একটি বাংলাদেশের ম্যাপ টানান কিন্তু ম্যাপটি কাপড় দিয়ে ঢাকা। কথাবার্তার মধ্যে তার চোখেমুখে যুগবৎ ক্রোধ ও আনন্দের সঞ্চার লক্ষ্য করি। হঠাৎ এক সময় তিনি উঠে দাঁড়ালেন ও ম্যাপের কাপড়টি সরিয়ে পিন-আঁটা কয়েকটি জায়গা দেখালেন। তখন তাঁর মুখে দৃঢ় আত্মবিশ্বাস ফুটে বেরুচ্ছিল। তিনি যা বল্লেন তা তাঁর ব্যক্তিত্বেরিই বহিঃপ্রকাশ। আমি তাঁর কথা বিশ্বাস করতে বাধ্য হলাম তাঁর অসাধারণ ব্যক্তিত্বের প্রভাবেই।
বেশীদিন আমার দেরী করতে হয়নি। কয়েকদিনের মধ্যেই খবর পেলাম যে তাঁর কথা কতখানি সত্য, এবং সে সাক্ষ্য আজ বহন করছে সাতক্ষীরা মহকুমার বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে বাংলাদেশের নিজস্ব পতাকা পত পত করে উড়ে। এসে গেছে দুটি বিরাট ফরেষ্ট ডিপার্টমেন্টের লঞ্চ প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে। ফাউ এসেছে চারজন ফরেষ্ট কর্মচারী। আরও বলেছিলেন কয়েকটি কথা এবং তাও অতি দ্রুত ফলে গেছে মংলা পোর্ট, মোরলগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, রাজাপুর, মঠবাড়িয়া, ভান্ডারিয়া, কাউখালী, বানরীপাড়া, গৌরনদী, উজিরপুর, বেতাগী, বরিশাল ও অন্যান্য জায়গায়। ঘায়েল হয়েছে অসংখ্য পাঞ্জাবী ডালকুত্তার দল, বিশ্বাসঘাতক দালাল ও রাজাকার বাহিনী, দেশী-বিদেশী জাহাজ, সৈন্যবাহী গানবোট মোটর লঞ্চ ও দেশী নৌকা। তিনি দুঃখ করে বল্লেন যে তাঁর বড়ই দুর্ভাগ্য যে তিনি বঙ্গবন্ধুকে সশরীরে দেখেননি। জানলাম যে তিনিও কোটি কোটি নির্যাতিত নিপীড়িত বাঙালীর মতই বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসেন, শ্রদ্ধা করেন, এবং তিনি জীবনের বিনিময়েও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সফল করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের অসম সাহসী দৃঢ় প্রতিজ্ঞ মুক্তিযোদ্ধা; ৯ নম্বর সেক্টরের কম্যান্ডার মেজর এম-এ জলিল।
সূত্র: বিপ্লবী বাংলাদেশ ফাইল