You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.19 | ভূট্টোর পরিণতি- মেহেরুন আমিন | বিপ্লবী বাংলাদেশ - সংগ্রামের নোটবুক

বিপ্লবী বাংলাদেশ
১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

ভূট্টোর পরিণতি
মেহেরুন আমিন

সিন্ধুর অন্তর্গত লারকানার জায়গীরদার সন্তান কুখ্যাত জুলফিকার ভুট্টোর আবার খায়েস হয়েছে রাজনৈতিক নেতা রূপে নিজেকে জাহির করবার। ভুট্টো কোনদিনই “পলিটিকেল এলিমেন্ট” ছিল না। সোনার চামচ মুখে দিয়ে হয়েছে তার জন্ম। বিলাস ব্যসনের মধ্যে কেটেছে তার কৈশোর ও যৌবন। হঠাৎ “পিতা আয়ুবের” প্রয়োজনে তাকে রাজনৈতিক আসরে টেনে আনা হয়। অফুরন্ত স্বৈরাচারী ক্ষমতা ও দেশ ভ্রমনের আনন্দ তাকে পাইয়ে দেয় এক অপূর্ব স্বাদ। তাসখন্দ চুক্তির ব্যাপক অস্বীকৃতির সুযোগ ভুট্টো নেমে এল আয়ুবের বিরোধিতায়। পশ্চিম পাকিস্তানের “নবাব যুগ ও ধর্মান্ধ মোল্লা গোষ্ঠীর” রাজনৈতিক দালালীতে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ ভুট্টোর লম্বা লম্বা বুলিতে বিভ্রান্ত হয়ে তাকে নেতা বলে স্বীকার করে এবং পরিণতিতে ভুট্টোর পিপলস পার্টি বিপুল সংখ্যক আসনে জয়লাভ করে।
উচ্চাভিলাষী, দাম্ভিক, দায়িত্বহীন অরাজনৈতিক ভুট্টো কিন্তু পাকিস্তানের জনগণের রায় মেনে নিতে রাজী হল না। শুরু হল পাকিস্তানের “চিরাচরিত ষড়যন্ত্রের রাজনীতি”। যে করেই হউক বঙ্গবন্ধুর ছয় দফাকে বানচাল করতে হবে এবং ষড়যন্ত্রকারীরা নিশ্চিন্ত ছিল যে সেক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু জাতির নিকট দেয়া তাঁর ওয়াদা ভঙ্গ করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীত্ব গ্রহণ করবেন না। ভুট্টো গোপন শলাপরামর্শের মাধ্যমে আবার নূতন “পিতা” হিসাবে গ্রহণ করল ডিক্টেটর ইয়াহিয়াকে। আশা দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসাবে প্রধান মন্ত্রীত্বের চাকুরী অবশ্যই সে পাবে। প্রশ্রয় দিল ইয়াহিয়া ভুট্টোকে তার বলগাহীন বানোয়াট ভাষণ চালিয়ে যেতে। অতি চালাক ভুট্টো কিন্তু বুঝতে পারল না যে ইয়াহিয়া তাকে গ্রহণ করেছে “জুতার ফিতা হিসাবে”। রাজনৈতিক মূর্খ সামরিক জান্তার প্রতিটি কার্য্যে সম্মতি নিজের কবর রচনায় হাত দিল। ১৯৭১ সালের ২৮শে জুনের ইয়াহিয়া প্রদত্ত বক্তৃতাই প্রথম তার মদের নেশার আমেজে ভাঙ্গন ধরাল। কিন্তু বড় দেরী হয়ে গেছে। ইতিমধ্যেই ভুট্টোকে ইয়াহিয়া চিনে নিয়েছে দালাল হিসেবে এবং পশ্চিম পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ বুঝে ফেলেছে যে ভুট্টো একটি ‘ক্লাউন’। শেষ চেষ্টা হিসাবে ভুট্টো কয়েক দফা বৈঠকে বসে ইয়াহিয়ার মন গলাতে চেষ্টা করেছে কিন্তু ইয়াহিয়ার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে ‍ভুট্টোর। তাই আজ ভুট্টোকে দূরে বহু দূরে চলে যেতে হবে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে।

সূত্র: বিপ্লবী বাংলাদেশ ফাইল