You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.21 | বিশ্বযুদ্ধের দিকে হাতছানি- শৈলেন্দুবিকাশ মৈত্র | বিপ্লবী বাংলাদেশ - সংগ্রামের নোটবুক

বিপ্লবী বাংলাদেশ
২১ আগস্ট ১৯৭১

বিশ্বযুদ্ধের দিকে হাতছানি
শৈলেন্দুবিকাশ মৈত্র

আজ প্রায় পাঁচ মাসের দিকে চলছে নরপশু ইয়াহিয়া বাঙালীর রক্ত মনের তৃপ্তির সাথে পান করছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে এতেও জঙ্গী শাহীর তৃষ্ণা মেটেনি। ইয়াহিয়ার আসল ইচ্ছাটা এখন আর বিশ্বের গণতন্ত্র পূজারী মানবের বুঝতে বাকী নেই। সাড়ে সাত কোটী মানুষের একমাত্র নির্ভরযোগ্য বলিষ্ঠ প্রতিনিধি, নয়নের মনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে মিথ্যা বিচারের যুপকাষ্ঠে আবদ্ধ করায় বিশ্বের গণতন্ত্র প্রেমিক রাষ্ট্রগুলি নরপশু ইয়াহিয়ার প্রতি ধিক্কার ও তীব্র সমালোচনায় সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার তথা তাঁর মুক্তির জন্য বিশ্বের সমস্ত নেতৃবৃন্দের নিকট আবেদন করেছেন, রক্তপিপাসু ইয়াহিয়ার কাছে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য আবেদন করে বিশ্বের আরও অনেক রাষ্ট্র তাঁর মুক্তির তথা বাংলা দেশের গণ প্রতিনিধির সাথে রাজনৈতিক সমাধান করতে বলায় জঙ্গীশাহী বিস্ময়জনক ও নিরবতার ভূমিকা গ্রহণ করেছেন। সেনাপতি ইয়াহিয়া সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল যে নাদির শা, চেঙ্গিশ খাঁ, হিটলারের অত্যাচারের সঙ্গে তাঁর অত্যাচারের তুলনা নেই। ইতিহাসের নিকৃষ্টতম কলঙ্কের নায়ক ইয়াহিয়া। ইতিহাস তাকে ক্ষমা করবে না। তিনি জানেন যে তাঁর এই নরমেধ যজ্ঞের ক্ষমা কেউ করবে না। তার বিচার পশ্চিম পাকিস্তানের আপামর জনসাধারণের হাতেই হবে। তার কারণ বাংলা দেশ স্বাধীন হওয়ার সাথে সাথেই উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ও বেলুচিস্তান স্বাধীনতার জন্য জেহাদ ঘোষণা করবে; এর মানে পাকিস্তান ধ্বংস হয়ে যাওয়া।
এ ধ্বংসের হাত থেকে পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখবার ব্যর্থ প্রচেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠেছে ইয়াহিয়া। ভারত যদিও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে হস্তক্ষেপ করছেনা। তথাপি তার অপরাধ আশি লক্ষ উদ্বাস্তু শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছেন তাঁর মাটিতে। পাক সরকার সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের অস্ত্রশস্ত্র ও আর্থিক সাহায্যে পরিপুষ্ট হয়ে ভারতকে হুমকি দেখাচ্ছে অর্থাৎ ভারতকে আক্রমণের পর উপরিল্লিখিত রাষ্ট্রগুলির সার্বিক অস্ত্রশস্ত্র সাহায্য পাবে। রাষ্ট্র সংঘের পর্যটকরা এসে ভারতের শরণার্থী ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন করে ভারত সরকারকে আর্থিক সাহায্য করেছেন এবং এ সম্বন্ধে সত্যতা প্রকাশ করে বিবৃতি প্রচার করেন। নর পশু ইয়াহিয়ার মিথ্যা অপবাদ ও ধোকাবাজি তাঁদের (রাষ্ট্রসংঘের সাংবাদিকদের) কাছে ধরা পড়ছে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, বিশ্বের আরও অনেক মানব হিতৈষী রাষ্ট্রগুলি সাড়া দেওয়া সত্ত্বেও সাম্রাজ্যবাদ মার্কিন সরকার ও চীন সরকার অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করছে! এদের সাহায্যে পরিপুষ্ট হয়ে জঙ্গী ইয়াহিয়া বিশ্বযুদ্ধের হাত ছানি দিচ্ছে। যে সমস্ত রাষ্ট্র আমাদের মুক্তি যোদ্ধাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করেছেন তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু যে সমস্ত রাষ্ট্র আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রতি সহানুভূতি ও সমর্থন জ্ঞাপন করছেন না উপরন্তু পাক সরকারকে অস্ত্রশস্ত্র সাহায্য করছেন তাদেরকে আমাদের বলার কিছু নেই তবে তাদের কাছে আমরা স্বাধীনতা রক্ষার জন্য লড়াই করব। ইনসে্ আল্লাহ্ আমরা এ যুদ্ধে জয়ী হ’ব।

সূত্র: বিপ্লবী বাংলাদেশ ফাইল