You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.21 | ঘৃণ্য ১৪ই আগষ্ট | বিপ্লবী বাংলাদেশ - সংগ্রামের নোটবুক

বিপ্লবী বাংলাদেশ
২১ আগস্ট ১৯৭১

ঘৃণ্য ১৪ই আগষ্ট

আজ থেকে ২৪ বছর পূর্বে কুচক্রীদের চক্রান্ত জালে বাংলাদেশের মানুষের জীবনে এক কলঙ্কিত দিবস রূপে দেখা দেয় এই ১৪ই আগষ্ট।
নরখাদক পশ্চিম পাকিস্তানী এবং তাদের পুঁজিপতিদের ষড়যন্ত্রের ফলে বাংলাদেশের কোটী কোটী মানুষ তথা পৃথিবীর পূর্ব দিগন্তের ন্যায় ও বিবেককে এই দিনে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।
নবাব বাদশার দল, পীরজাদা আর খানদের দল পশ্চিমী শক্তিগোষ্ঠীর আফ্রিকা শোষণের মত বাংলাদেশকে লুটেরার সম্পত্তি, এবং তাদের বিবি বেগমদের বিলাস বাসনের উপকরণ যোগানোর ঘাঁটী রূপে লৌহ-শৃঙ্খল পরিয়ে দিল বঙ্গোপসাগরের শ্যামলা নারীকে। আর কোটী কোটী আদম সন্তানদের চেপে ধরল পায়ের তলায়।
তাই ১৪ই আগষ্ট বাঙালীর জীবনে স্বাধীনতার দিবস নয়; বন্ধনের দিবস, গ্লানির দিবস, ঘৃণার দিবস। পরাধীনতার দিবস।
এই দিবস পশ্চিম পাকিস্তানী জঙ্গী শাসক এবং খুনে জল্লাদ ও ধনকুবেরদের কাছে বাঙালী জাতির দাসখৎ লিখে দেবার দিবস।
যেমন করে একদিন মিরজাফরি ষড়যন্ত্রের ফলে দুইশত বৎসর পূর্বে বাঙালীকে দাসখৎ লিখে দিতে হয়েছিল ইংরেজের কাছে, হারাতে হয়েছিল তার আজন্মলালিত স্বাধীনতাকে, তেমনি করে কায়েদে আদম জিন্নাহ, লিয়াকৎ প্রমুখ মুসলীম পুঁজিপতিদের মুখপাত্রদের মিথ্যা ধর্মীয় জিগিরের কাছে বাঙালী মুসলমানরা আত্ম বিক্রয় করতে বাধ্য হয়েছিল।
১৯৪৭ সালের ১৪ই আগষ্টের কলঙ্কিত পাপকে বাঙালী তাই কোন দিন ভুলতে পারেনা। ক্ষমা করতে পারেনা।
শঠতা আর প্রবঞ্চনা দিয়ে গড়া যে জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি, ২৪ বছর ধরে সেই মিথ্যার জালে বেঁধে একটা জাতির ধন সম্পদ এমনকি জাতীয় জীবনের প্রাণশক্তিটুকু পর্যন্ত তারা শোষণ করে চলেছে।
পুঁজিপতিদের মুখপাত্রদের মিথ্যা ধর্মীয় জিগিরের কাছে বাঙালী মুসলমানদের আত্ম বিক্রয় করতে বাধ্য হয়েছিল চব্বিশ বছর আগের অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগষ্টের দিনে।
শঠতা প্রবঞ্চনা আর মিথ্যা জাতীয়তাবাদের নামে আজ ২৪টি বৎসর ধরে বাঙালীর হাতে পায়ে শৃংখল বেঁধে তারা শোষণ চালিয়ে যাচ্ছে।
যেদিন থেকে বাঙলামায়ের সু-সন্তানেরা বুঝতে পেরেছে খান সায়েবদের শোষণের কৌশল, সেই দিন থেকে চঞ্চল খান-বাদশার দল জাতির মাথায় ডান্ডা মেরে ঠান্ডা রাখার নীতি গ্রহণ করে আসছে। ইস্কান্দার-আয়ুব-ইয়াহিয়া এদের সকলের নীতি ও কৌশল সেই দিক থেকে এক, অনন্য। কিন্তু যখনি আঘাত লেগেছে তাদের শাসনের বনিয়াদে তখনি কায়েমী শান শৌকতের বাদশাহী তখতকে আরো মজবুত করে তুলতে অন্যায় অবিচার ও অত্যাচারের বন্যায় বাঙালী মুসলমানদের ডুবিয়ে মারার নীতি গ্রহণ করে আসছে।
তাই ১৪ই আগষ্ট স্বাধীনতার দিবস নয়, বাঙালী জাতীর কলঙ্কের দিবস। বেদনার দিবস। দুঃখ দারিদ্র্যময় অবমাননার দিবস।
আমাদের চাষী ভাইরা প্রতি বছর সোনালী আঁশ উপহার দেবে পশ্চিম পাকিস্তানকে—ধান দেবে, চাল দেবে, মাছ দেবে, ঘী দুধ দেবে, দেবে রাজ্য শাসন করবার জন্যে, হিসেব নিকেশ করবার জন্যে দলে দলে শিক্ষিত যুবকদের। আর তাই নিয়ে প্রতি বছর ট্যাক্সের বোঝা উপহার দেবে প্রভুরা।
প্রভুরা বেগমদের জন্যে দিতে হবে গায়ের রক্ত আর প্রভুদের জন্যে মেপে মেপে গায়ের মাংস। ১৪ই আগষ্ট বাঙালীর জীবনে যখন দাসখতের এই বন্ধন চুক্তি স্বাক্ষরিত করেছে তখন বাঙালী আর সেই বন্ধনকে স্বীকার করেনা।
তাই এই কলঙ্কিত দিবস আর তার নিদর্শন পতাকাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নিঃশেষ করে দেবার প্রতিজ্ঞা নিয়েছে বাঙালী।
১৪ই আগষ্টের কলঙ্কের অবসান করতে সাগর সমুদ্রের প্রবল প্রবাহের মত, আকাশের সপ্তকোটী সূর্যের মত নৈসর্গের কোটী কোটী ধূমকেতুর মত সহস্র সহস্র বিদ্যুৎ ঝঞ্ঝার মত বাঙালী জেগে উঠেছে।
তার ন্যায় সত্য প্রতিষ্ঠিত যৌবনের সূর্য্যশক্তি দিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে মুছে দেবে ১৪ই আগষ্টের জাতীয় কলঙ্গ।

সূত্র: বিপ্লবী বাংলাদেশ ফাইল