রাষ্ট্রভাষা ও ভাষানী
গত রবিবার ঢাকার কোন একখানি বাংলা দৈনিক আজাদে নহে পাসবনের স্টাফ রিপাের্টারের সহিত মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাষানীর সাক্ষাৎকারে, রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গে সে বিবরণ প্রকাশিত হইয়াছে তাহার প্রতিবাদ পূর্বপাকিস্তান আওয়ামীলীগের জনাব আতাউর রহমান খান ও জনাব শেখ মুজিবুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন যে, রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে মওলানা ভাষানীর অভিমত অত্যন্ত সুপরিচিত এবং তৎসম্পর্কে কোনরূপ অপপ্রচারের অবকাশ নাই।
মওলানা ভাষানী এবং আমরা সব সময়ই উৰ্দর সহিত বাংলাকেও পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করা হউক বলিয়া দাবী করিয়া আসিয়াছিল। মওলানা ভাষানীর বক্তৃতার বিবরণের মধ্যে এমন একটি ছত্র নাই যেখানে তিনি বলিয়াছেন যে, উর্দই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হইবে।
পাসবানে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারের বিবরণ শত মাইল ব্যবধানের বিষয় আলােচনা করিতে যাইয়া তিনি (মওলানা ভাষানী) বলেন যে, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের উভয় অংশের ঐক্য বন্ধন অটুট রাখিতে হইলে যে সম্পর্কের প্রয়ােজন, তাহা হইতেছে এছলাম উর্দু ভাষা। পাকিস্তানের এই অংশকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য পাকিস্তানের দুশমনের সবচাইতে বড় কাজ হইবে উক্ত দুইটা সম্পর্কের বিনাশ সাধন করা।
তিনি আরও বলেন, উর্দু ভাষাকে আমি পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা বলিয়া মনে করি এবং আমি কখনই ইহার বিরােধিতা করিতে পারি না। কেননা পাকিস্তানের এক প্রদেশের সহিত কেবল এই একমাত্র ভাষাতেই কথা বলা সম্ভব এবং এই করণেই আমি উর্দু ভাষাকে পাকিস্তানের লীভেকায়াফ্রাঙ্কা বলি। কিন্তু যখন সরকারী ভাষার প্রশ্ন উঠে তখন আমার অভিমত এই যে, বাংলা ভাষাকেও সরকারী ভাষারূপে স্বীকৃতিদান করা হউক। তাহা হইলে এই অংশের মুসলমানদের মনে তাহাদের ভাষাকে ধ্বংস করিয়া দেওয়া হইবে বলিয়া যে আশভকা জন্মিয়াছে তাহা দূর হইয়া যাইবে। তিনি এই বিষয়ের উপর জোর দিয়া বলেন, দেশের অধিবাসীদের একজাতি ও একভাষী হওয়ার জন্য উরদু ভাষা খুব তাড়াতাড়ি শিক্ষা করা প্রয়ােজন। কেননা এই ভাষা ছাড়া জাতি বােঝা হইয়া থাকিবে।
ঢাকা প্রকাশ
৩১ এপ্রিল, ১৯৫৩
পৃ. ২:
সূত্র: ভাষা আন্দোলনের দলিলপত্র – রতন লাল চক্রবর্ত্তী সম্পাদিত