অক্টোবর ১৯৭১
আইজ একটা ঘটনার কথা মনে পইড়া গেল। বচ্ছর দশেক আগেকার কথা। আমাগাে ছকু ঠ্যাটা মালেকার জেলা কুষ্টে আর যশাের বেড়াইবার গেছিলাে। দিনা পনেরাে বাদ ছক্কু মিয়া টেরনে কইর্যা ঢাকায় ফেরত আইলাে। তখন সিদ্দিক বাজারের বগল দিয়া ফুলবাড়িয়া স্টিশনে নামন লাগতাে। ছক্কু কুস্টে আর যশােরের মাইদ্দে দেখছে হেইখানে কেতাবের বাংলায় Public-এ কথা কয়। অনেক কষ্ট কইর্যা ছক্ক এই কেতাবী বাংলা রপ্ত করছিল। টেরেনের থনে ফুলবাড়িয়া স্টিশনে নাইম্যা ভাবলাে এখন থাইক্যা কুষ্টেযশােরের ভালাে বাংলা কইতে হইবাে। ইস্টিশন থাইক্যা বাইর হইয়াই একটা চচকা দেইখ্যা রিকশাওয়ালারে বােলাইলাে। “ওহে রিকসাওয়ালা ভাড়া যাবে? যামু না কীর লাইগ্যা- কই যাইবেন? আহেন, আহেন’। সদরঘাট যেতে কত নিবে?’- আরে কন কি? আপনার কাছ থনে তাে আর বেশি লমু কী? বারাে আনা পহা দিয়েন আর কী? আমাগাে ছক্ক অক্কর ভেড়া হইয়া গেল। এলায় করে কী? কেতাবী বাংলা কওনের ঠ্যালায় চাইর আনা ভাড়া বারাে আনা হইয়া গেল। কেইসটা কি? ছক্ক একটুক Think কইর্যাই বুঝলাে ট্রিক্স কইর্যা বুঝাইতে হইবাে যে হেতােনে ঢাকার মাল। তাই আঙ্কা কথা কওনের আসল ভাঁজটা বাইর কইর্যা ফেলাইলাে। কি হইলাে মিয়া বারাে আনা কীর লাইগ্যা? টেকা অউগ্যা পুরাই লইয়েন। কিন্তুক গাং পার কইর্যা থুইয়া আহন লাগবাে। হেই যে বুড়িগঙ্গা হেইডার হেইপার যাওন লাগবাে কিন্তুক। ছকুর গলার ভাঁজ থনেই রিকসাওয়ালা বুইঝ্যা ফেলাইলাে- মাল কোন্ খানকার। ব্যাডায় জিবলার মাইদ্দে একটা কামড় দিয়া কইলাে ‘আহেন, আহেন সাব- এটু চান্সিং কারবার টেরাই নিছিলাম। মাফ কইর্যা দিয়েন। চাইর আনা পহা দিয়েন আর কি? কেমন বুঝতাছেন? আমাগাে ঠ্যাটা মালেকায় রিকসাওয়ালা হইয়া গেছে। খালি চান্সিং কারবার চায়। আর বিচ্ছুগুলার ভাঁজ পাইলেই ল্যাজ গুটাইতাছে। | এইদিকে চেইত্যা গেছেন। সেনাপতি ইয়াহিয়া সা’বে চেইত্যা গেছেন। ইসলামাবাদের সামরিক জান্তার পররাষ্ট্র ছেক্রেটারি ছােলতাইন্যা মস্কো থাইক্যা ধাওয়া খাইয়া ফেরৎ আহনের গতিকে খান সা’বে হের উপর চেইত্যা গেছেন। বেড়ার লগে এতাে ড্রাম তেল আর মাখন পাডাইলাম- তবুও কিছু করতে পারলাে না। উল্ট ধাওয়া খাইলাে। সােভিয়েট রাশিয়া অখন কইতে শুরু করছে, বাঙালিগাে যে রায়- হেই মতােই সমস্যার সমাধান হইবাে। আমাগাে মেরহামাত মিয়া একটা টুলের মাইদ্দে ঝিমাইতেছিল। আঙ্কা একটা গুয়ামারি হাসি দিয়া কইলাে, বাঙালিগাে রায় তাে আগেই দিয়া দিছে। ১৬৯-এর মাইদ্দে ১৬৭টা শেখ সা’বের আওয়ামী লীগে। অক্করে World Record কইর্যা বইয়া আছে। এর মাইদ্দে শুরু হইছে বিক্ষুগুলার গাবুর মাইর। আইজ সাড়ে ছয়মাস ধইরা মছুয়াগুলা খালি কোবানী খাইতাছে। অখন বলে আবার বিচ্ছুগুলার আসল মাইর শুরু হওনের টাইম আইছে। এক লগে হাজার হাজার বিচ্ছুর ট্রেনিং পরায় Complete, এই রকম একটা গেনজাম কারবার দেইখ্যা ইয়াহিয়া সা’বে শ্রীহট্ট নিবাসী চুষ-পাজামা মাহমুদ আলীরে জাতিসংঘে পাড়াইছে। বেডায় কী কান্দন। থাইক্যা থাইক্যা আংরেজিতে হিচকি পর্যন্ত তুলছে। পররাষ্ট্র ছেক্রেটারি ছােলতাইন্যা যা লেইখ্যা দিছে, চুষ-পাজামা খালি ঘুইর্যা ফিইর্যা পুরানা কথাবার্তাই কইতাছে। মুছলমান-মুছলমান ভাই ভাই, Murder করি আপত্তি নাই। বঙ্গাল মলুকে দশ লাখ মানুষ মার্ডার করণের পর চুষপাজামা কি সােন্দর ভুল ইংরাজি উচ্চারণে কইছে এইডাও ইন্ডিয়ার কারসাজি। মাইনষে বুড়বক্ হইলে এই রকমের কথা বার্তাই কয়। ব্যাড়ায় বিয়া করইন্যা মাতারিরে কুমারি। বানাইবার টেরাই করতাছে।
২৬শে মার্চ যেইখানে ইয়াহিয়া সা’বে করাচীতে ভাইগ্যা যাইয়া রেডিওতে কইলাে, ‘আমি বাঙালি Murder-এর Order দিছি, হেইখানে অহন চুষ-পাজামারে দিয়া কড়া কিসিমের ফলসিং কারবার চালাইতাছে। মনে লয় দুনিয়ার মাইনষে কিছুই বােঝে না। এজন্যই নিউইয়র্কে পঞ্চাশটা জোট নিরপেক্ষ দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীগাে সম্মেলনে। ইসলামাবাদের সামরিক জান্তার কোনাে বেডারেই ঢুকতে দেয় নাইক্যা। এছাড়া আবার প্রস্তাব পাশ কইর্যা ইয়াহিয়া গবর্ণমেন্টের গতরের মাইদ্দে থু দিছে। এই খবর পাইয়া খান সা’বে ছােলতাইন্যার উপর কি রাগ? আমাগাে চুষ-পাজামা মাহমুদ আলীর আবার জাতিসংঘের আপিসে সাংবাদিক সম্মেলন করণের চিকিৎ হইলাে। ব্যাস সাংবাদিকগাে প্রশ্নের ঠ্যালায় বেডার কি কাঁপন! শেষে হাে গিয়া ভাই-মানে কিনা সাদা রং-এর চুষ পাজামা বাসন্তী Colour হইয়া গেল। এক সাদা চামড়ার রিপাের্টার জিগাইলাে, আপনে এইবারের Election-এ ডাব্বা মারা সত্ত্বেও কেমতে কইর্যা প্রতিনিধি দলের নেতা হইলেন?’ চাইর পাঁচবার ঢােক গিইল্যা মাহমুদ আলী কইলাে, ‘খালি Election-এ জিতইন্যা বেডারাই দেশের প্রতিনিধি দলে আইবাে এমন কোনাে ব্যবস্থা থাকতে পারে
আমরাও তাে মানুষ। আমাগাে আব্বাজান মানে কিনা ইয়াহিয়া সা’বে পাড়াইছে। এলায় কেমন বুঝতাছেন হেগাে কারবার সারবার! আবার প্রশ্ন হইলাে, “আপনাগাে দ্যাশে কি সংখ্যাগুরুর সরকার না সংখ্যা লঘুর সরকার? চুষ-পাজামায় বনটা ঢিলা কইরা কাঁপতে কাঁপতে কইলাে, আমাগাে দ্যাশে Election-এ জেইন্যা বেডাগাে ক্ষেমতা দেওয়া হয় নাইক্যা। আর একজন রিপাের্টার কইলাে, আপনি তাে’ ইন্ডিয়ার কথা খুবই কইলেন- ‘এলায় আপনারা বঙ্গাল মুলুকে যে মানুষ মারুন্য কারবার করতাছেন, তার একটুক কাথা কন? চুষ-পাজামা খালি বারবার কইর্যা রুমালে মুখ মুইচ্ছা হের Local গার্জিয়ান পাকিস্তানর আগা শাহীর দিকে তাকাইলাে। তারপর বাইশ হাজার টাকা দামের একটা হাসি দিয়া কইলাে, সব ইন্ডিয়ার দুষ। মেহামত মিয়া অক্করে ফাল্ পাইডা উঠলাে, তয় কি জেনারেল টিক্কা ইন্ডিয়ান জেনারেল আছিলাে নাকি- না মছুয়া পাঁচ ডিভিশন সােলজার মার্চ মাসে ইন্ডিয়াই পাড়াইছিল? কিন্তু চুষ-পাজামা অক্করে হিজড়া। বেড়ায় আরাে কইলাে, বঙ্গাল মুলুকে আগা থাইক্যা গােড়া পর্যন্ত হগগললেই বেসামরিক লুক।’ খালি বেড়ায় নিউইয়র্ক আহনের টাইমে কেন জানি না ওয়াইপ আর মাইয়ারে কুর্মিটোলায় মছুয়াগাে হেফাজতে রাইখ্যা আইছে। আর হেই কুর্মিটোলার সেকেন্ড ক্যাপিট্যালে একটা ভােমা সাইজের মছুয়া জেনারেল পিয়াজী বইস্যা খালি ডান্ডা ঘুরাইতাছে। ঠ্যাটা মালেক্যা থাইক্যা শুরু কইর্যা মন্ত্রী ছলু মিয়া, কাসেম্যা, ওবায়দুল্লাহ, মওলানা ইউসুপ্যা হলে দুইবেলা তারে সেলাম ঠুকতাছে। ঠ্যাটা করিছে রাজ্য শাসন, ঠ্যাটারে শাসিছে কে? নাম তার জেনারেল পিঁয়াজী।
এই দিককার কারবার হুনছেন নি? জেনারেল টিক্কা খান পিন্ডিতে ফেরৎ যাইয়া আইজ-কাইল আবার নাকি ট্রিক্স করতে শুরু করছে। হেতানে কইছে, জেনারেল পিয়াজী কোনােই কামের না। বিক্ষুগুলার ডরে মছুয়াগুলারে মউতের হাতের থনে বাঁচাইবার জন্যি খালি ভাগতাছে। আর বিচ্ছুগুলা এই ফাঁকে রাজাকার মাইর্যা শেষ করলাে। জেনারেল পিয়াজী অক্করে Good for Nothing- আরও কত কিছু। বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকার একুশটা Reception centre-এ এখন নাকি খালি খেকী কুত্তা আর হাডিড বাইর করা গরু ঘুমাইতাছে। বেডায় পিয়াজী একটা রিফিউজিও ফেরত আনতে পারে নাই। এইদিকে আবার সােলজারগগা Supply খুবই গড়বড় হইয়া গেছে। বিদুগুলা ঢাকা Town-এর নাকের ডগায় মাওলানা ইছাহাকরে তক্তা বানাইছে। তাই টিক্কা কইছে, আমারে তোে’ আগে সরাইছিলা, এলায় পিয়াজীরেও সরাও। পাকিস্তানী মছুয়াগুলার মাইদ্দে কী সােন্দর নতুন কিসিমের খেইল জইম্যা উঠছে।
সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল