অক্টোবর ১৯৭১
চই কারবার। বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকায় আইজ-কাইল অক্করে চই কারবার শুরু হইয়া গেছে। আবে ওই ছক্কু মিয়া হুনছােনি? কি হইলাে, ঝিম ধইর্যা রইছাে কীর লাইগ্যা? ঝিমাইবার আর জায়গা পাইলা না? এ্যাঃ, হারা রাইত বিক্ষুগুলার ফুটফাট আওয়াজ পাইছিলা নাকি? এক হাপৃতা-দুই হাতা, এক মাস, দুই মাস-এমতে কইরা সাত মাসের পর আটাত্তর বছর বয়সের একটা বুড়া বিল্লী ছালার মাইদ্দে থাইক্যা ফুচি মারতাছে। আঃ হাঃ এখনও আন্তাজ করতে পারলা না? হেই যে বায়ান্ন সালে ঢাকায় গুলি কইর্যা ছাত্রগাে রক্ত দিয়া গােসল করছিল। আর হেই যে চুহান্ন সালের ইলেকশনের মাইদ্দে ডাব্বা মারছিল- হেই খুনী নুরুল আমীনের আবার চিরকিৎ হইছে। মওলবী সাবে আজিমপুরে আজরাইল ফেরেশতার লগে মােলাকাৎ করণের আগে একবারে জন্যি হইলেও সেনাপতি ইয়াহিয়া খানের পেয়াদা, মানে কিনা পেরধান মন্ত্রী হইতে চায়। এসােসিয়েটেড প্রেস অব আমেরিকার এক রিপাের্টারের কানের মাইদ্দে আস্তে কইর্যা কইছে, সেনাপতি ইয়াহিয়ার গেনজাম মার্কা গণতন্ত্রে যেমন কইরা সব Bye-Election হইতাছে, হগ্গল হারু পাট্টি মিইল্যা গবর্ণমেন্ট হাইসে বইস্যা সিট ভাগাভাগি করতাছে-তাতে কইর্যা আমার পেরধান মন্ত্রী হওনের খায়েশ হইছে।
বেডারে মরনে Call করছে। হেইর লাইগ্যাই বেডায় পেরধান মন্ত্রীর গদিতে বহনের লাইগ্যা খুউব হিসাব কইর্যা কাম করতাছে। এই বারের ইলেকশনে সমস্ত বঙ্গাল মুলুকের মাইদ্দে নান্দাইলে একটা জায়গা থনে খুনী নুরুল আমীন জেতনের পর একবারও চিন্তা কইর্যা দেখলাে না যে আগের ঘুনে ধরা মালগুলার চেহারা সুরৎ কেমন আছিলাে। কিন্তুক বেড়ায় অনেক দিন থাইক্যাই পর্দার পিছনে খেলতে শুরু করছে। অখন বােরখার নেকাব তুইল্য বাতওয়ালা ঠ্যাংডারে লেড়াইতে লেড়াইতে অক্করে স্টেজের উপর ত্রিভঙ্গমুরারী হইয়া খাড়াইয়া পড়ছে। রেডিও গায়েবী আওয়াজ থনে যখন কইছে যে বঙ্গাল মুলুকের কেদো আর প্যাকের মাইদ্দে না যাইয়াও ৭৮টার ৫০টা সিটে স-অ-ব হারু মালগাে কামিয়াবী হইছে, তখন বুড়া চাপাবাজী শুরু করছে।
What is called টেকী? Two Man ধাপুর ধুপুর One man clearing, that is called সেঁকী। বিচ্চুগাে হেই সেঁকীর মাইদ্দে পাড় খাওনের লাইগ্যা খুনী আমীনেরও চিরকিৎ হইছে। মােনাইমার নতীজা দেইখ্যাও বেড়ার কোনাে শিক্ষা হইলাে না। মােনাইম্যায় তবুও গুলি খাইয়া Gone ফট হইছে। আর এই মাল? এইটার সামনে বিচ্ছুগুলা এতে খাড়াইলেই তাে এইটা আখেরী দম খিচতে শুরু করবাে।
হ-অ-অ-অ এই দিককার খবর তাে কওয়াই হয় নাই। এতাে কইর্যা না করলাম। যাইস্ না, যাই না। কুমিল্লা-ময়নামতী, কসবা-শালদিয়া, ফেনী-নােয়াখালীর হেইমুড়া। যাইস না। অইজ-কাইল। বিষ্টুগুলা মছুয়া মারতে মারতে অক্করে পাগলা হইয়া উঠছে। আরে মাইর রে মাইর। নাহ্, হুনবাে না। দিনা দুই এয়ার ফোর্সরে দিয়া বােম্বিং কইরাই ভাবছে বাজী মাৎ কইর্যা ফেলাইছে। তারপর। আহারে গেরামের মাইনষে হেমতে কইর্যা মুরগির বাচ্চারে আধার খাওয়াইয়া ঘুইনটা’র মাইদ্দে তােলে- বিক্ষুগুলা হেইরকম একটা কড়া কিসিমের ডােজওয়ালা কারবার কইর্যা বইছে। কুমিল্লা টাউন আগেই ধুয়া । Public আর নাইক্যা। এই খবরের লগে লগে মাইনষে যেতে পানটি দিয়া গরু কোবায়, বিচ্ছুগুলা হেতে কইর্যা মছুয়া কোবাইতাছে। আংরেজ-আমেরিকান রিপাের্টাররা খবর পাড়াইছে, কুমিল্লা টাউনের আশেপাশে বাংকার- ক্যাম্প থনে মছুয়ারা কোনােমতে বাইয়াই অক্করে দাদা-দাউদকান্দির মুহি দৌড়। অখন ময়নামতী ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বিক্ষুগুলার তুফান মেরামতি কারবার চলতাছে। গেলাে বুধবার দিন এই ময়নামতীতে হানাদার সােলজারগাে লাশ অক্করে পাহাড় হইয়া গেছে। এই খবরের গতিকেই নাকি তেলেসমাতিওয়ালা বাই-ইলেকশান গুলাতে দালাল বনাম দালাল আর Contest হইবাে না। আল্লায় সারাইছে! গেরামে গেলেই তাে’ Candidate-Polling Officer হগলেই গায়েব হইয়া যাইবাে। অখন কেমন সােন্দর গবর্ণমেন্ট হাউসের। মাইদ্দেই Election হইতাছে। ঠ্যাটায় মাল-পানি কামাইতাছে আর নুরুল আমীন। গুয়ামারি হাসি দিতাছে।
এইদিককার কারবার হুনছেন নি? মেরিন কমান্ডাে মানে কিনা নয়া কিসিমের বিছু। এইগুলা পানির তলা দিয়া সল্ সল্ কইর্যা যাতায়াত করতাছে। সাতক্ষীরা, খুলনা, বরিশালের দক্ষিণমুড়া, গােপালগঞ্জের নদী, বিল হাওড়ের মাইদ্দে অক্করে হােড়ল কারবার শুরু কইর্যা দিছে। খুচরা আনি দুয়ানির মতাে মছুয়া-রাজাকার এইদিক-ওইদিক যা আছিলাে Clear হইয়া গেছে। বরিশালের এক জায়গায় তাে’ বারাে দিন বারাে রাইত ধইর্যা বিচ্ছুগুলা মছুয়াগাে ঘেরাও দিয়া থুইছে। কাছিমের মতাে মাথা বাইর করলেই উঁই-ই-ই। বিক্ষুগুলা কইতেছে, দেখি মছুয়াগুলা কদিন দানা পানি ছাড়া থাকতে পারে? বরিশালের দক্ষিণ মুড়া একজন এসডিওসহ একদল হানাদার সােলজার গায়েব হওনের পর হেগাে মাইদ্দে মহরমের মাতম্ পইড়া গেছে। খালি চিল্লাইতাছে, হায় ইয়াহিয়া ইয়ে তুমনে কেয়া কিয়া? হামলােক কেদো আউর প্যাককো অন্দর আকে মরু গিয়া।।
রাস্তাঘাট আর রেল লাইন তাে’ আগেই ডাবিশ হইছে- এলায় দরিয়ার মাইদ্দে তুফান কারবার শুরু হইছে। যাঁহাতক মছুয়ারা টের পাইছে যে, বিচ্ছুগুলা বেশুমার রকেট লাঞ্চার, মর্টার দখল করছে, লগে লগে বেড়ারা খালি কান খাড়া কইর্যা থােয়- খালি একটুক আওয়াজের দরকার। তারপর অক্করে মেজিক কারবার। ব্যাংকার ধলি, খালি ৪৪০ রেস। ঢাকা জিমখানার ডাইমন্ড কুইন, পবন বাহাদুরের মতাে ঘােড়া পর্যন্ত দৌড়ের মাইদ্দে Defeat খাইয়া যাইবাে।
হেইদিকরার কারবার হুনছেন নি? সেনাপতি ইয়াহিয়া সমানে ট্রিকসের পর ট্রিক্স চালাইতাছে। যদি কোনােমতে একটারে বাজাইতে পারা যায়। বেডায় সাত মাসের মাইদ্দে একুশ রকমের ট্রিক্স করছে। এক একটা ট্রিক্স করে আর খুশিতে গুলগুল্লা হইয়া যায়। তারপর যহন দেহে ট্রিকসের জন্যি গেনজাম আরও বাইড়া গেছে, তহন আস্তে কইর্যা আরেক নম্বর ছাড়ে। পয়লা ২৫শে মার্চ বাঙালি Murder-এর Order দিয়া কি চোটপাট আর চাপাবাজী। রেডক্রসের পেলেন ঢাকায় যাইতে দিমু না, ৩৩ জন ফরিন journalist খেদাইয়া দিলাম; বঙগাল মুলুককে Internal Affair চলতাছে। হেরপর বিদেশ থনে মাল-পানি হাতাইবার জন্যি মালেক্যারে Advisor কইর্যা রিফিউজী Reception সেন্টার বানাইল্যাম। প্রিন্স ছদরুদ্দিনরে দাওয়াত কইরা দেখাইলাম কি সােন্দর খেকী কুত্তাগুলা Reception সেন্টারে বইয়া আছে।
আচ্ছা ছু মন্তর ছু কইয়া পাঁচশ’ আর একশ’ টাকার লুট বেআইনী করলাম। এতেও কাম হইলাে না দেইখ্যা বেগম আখতার ছােলায়মান আর আলহাজ্ব জহিরুদ্দিনরে ময়দানে নামাইলাম। কি এত বড় কাথা! আমার সােলজার মরতাছে? চোর-গুন্ডাবদমাইশ দিয়া রাজাকার বানাইলাম। কেইস কি? রাজাকাররা সব বিচ্চুগাে কামানের খােরাক হইতাছে আর দুনিয়ার মাইনষে সামরিক জান্তার গতরের মাইদ্দে থু মারতাছে। তা’ হইলে আওয়ামী লীগ নেতাগাে সম্পত্তি নীলাম করলাম আর ৭৮ জনের Election বাতিল করলাম এতেও হইলাে না। টিক্কারে ঘেড়ি ধইর্যা ফেরৎ আনলাম আর নুরুল আমীনের বুদ্ধিতে ঠ্যাটা মালেকারে গভর্ণর, চুষপাজামারে জাতিসংঘে পাডাইলাম। মহা গেনজাম দেখতাছি- এই ট্রিসেও কাম হইল না। তা হইলে India র লগে বাচিত করবাম। কিন্তুক আমারে Consult না কইর্যা India Insult করলাে। বাচিত করবাে
তাহইলে হে আমেরিকা, হে জাতিসংঘ, হে নয়া মামু, আমারে আটকাও। নইলে আমি India Attack করমু। কী হইলাে India আমার চিরৎি ঠাণ্ডা করবাে। কিন্তু তার আগেই যে বিক্ষুগুলাই আমাগাে হামাম দিস্তা করতাছে।
অখন করি কী? অখন করি কী? হে উত্থান্ট, হে শ্যাম চাচা, হে নয়া চীনা মামু বঙ্গাল মুলুকের পুরা কেইস External হইয়া গেছে। তােমাগাে কি একটু দয়া রহম নাই? শীঘ্রি আইস্যা একটা কিছু করাে। তখন এই ক্যাদোর থনে ঠ্যাং তুলি কেমূতে? ছকু পচ্চৎ কইর্যা একগাদা পানের পিক ফেলাইয়া কইলাে, ভাই সাব কইছিলাম না- এক মাঘে শীত যায় না। আমাগাে টাইমও অইবাে। অখন কাঁদলে কি হইবাে?’
সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল