You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11 | চরমপত্র - সংগ্রামের নোটবুক

নভেম্বর ১৯৭১

কেইসডা কী? আগায় খান পাছায় খান, খান আব্দুল কাইয়ুম খান, স্যার শাহনেওয়াজ ভূট্টোর কেতাবী পােলা লাড়কানার লাড়কা জুলফিকার আলী ভুট্টো, আর ৭৮ বছরের বুড়া বিল্লী ময়মনসিংহের খুনী নুরুল আমীন এই তিনজন মিইল্যা পাকিস্তানে জোর পাবলিক মিটিং শুরু করছে। বঙ্গাল মুলুকে World এর Best পাইটিং ফোর্সের হাজার হাজার মছুয়া পটল তােলনের খবরে অখন পাকিস্তানে মহা গ্যানজাম কারবার শুরু হইয়া গেছে। হেইখানরকার পাবলিকরা রেডিও গায়েবী আওয়াজের ভােগা কথাবার্তা আর হুনবার চাইতাছে না। একদিন-দুইদিন, এক হাফতা-দুই হফতা, একমাস-দুইমাস এমতে কইর‌্যা সাড়ে সাত মাস পার হইয়া গেছে। কিন্তু পাকিস্তান থাইক্যা রাইফেল-মেসিনগান কান্ধে কইর‌্যা ভােমা ভােমা সাইজের পােলাগুলা মােছে তা’দিয়া হেই যে যাদু-এ বঙ্গালে গেল, হেইগুলা তাে আর ফেরত আওনের নাম করে না। হায় খােদাবনতালা, তয় কী বিষ্টুগুলা কেদো আর প্যাকের মাইদ্দে আইয়া সব সাবাড় কইরা ফেলাইলাে নাকি? এই রকম একটা ক্যাডাব্যারা অবস্থায় পাকিস্তানের লােকদের মনের জোর ইট্ররং করণের লাইগ্যা সেনাপতি ইয়াহিয়ার অর্ডারে ভুট্টো-কাইয়ুম-আমিন এই তিন ব্যাডায় আম জলসা করতাছে। গেল বুধবার ভুট্টো লাহুরে, কাইয়ুম করাচীতে আর পালের গােদা নুরুল আমীন লায়ালপুরে মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়াইয়া মিছা কাতার ফোয়ারা ছুটাইছে। কিন্তু মস্কোপিকিং থনে ধু-হ-অ চিকার হওনের পর আর ওয়াশিংটনের গা মােচড়-মুচড়ি দেইখ্যা মওলবী সা’বগাে গলার আওয়াজ খুবই মিমিন্ করতাছে। পিকিং থনে ধাওয়া। খাওনের পর ভুট্টো সা’বে রাওয়ালপিণ্ডিতে ফেরত আইস্যা কইছুইন, বড় বড় Country গাে সম্বন্ধে উল্ট-পাল্ডা কাথা কওন ঠিক নয়। আর নুরুল আমিন, কাইয়ুম খান অক্করে ঘং ঘং কইর‌্যা কাইন্দা দিছে। হেতনরা কইছুইন, টাইম আইলেই সেনাপতি ইয়াহিয়া খান ক্ষেমতা হাত বদল করবােই।
কত কষ্ট কইর‌্যা ইয়াহিয়া সাবের তেলেসমাতি মার্কা মেলেটারি গণতন্ত্রে ১৮৩টা উপনির্বাচনের ১২৮টাতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারবার করাইছি। অক্করে মেজি খেইল। সত্তর সালের নির্বাচনে যেইখানে বঙ্গাল মুলুকে ছয় পাট্টি মিইল্যা ৪৬৯টা সিডের মাইদ্দে মাত্র চাইরটা সিট পাইছিলাে; হেইখানে ভােটের গেনজামের মাইদ্দে না যাইয়াই হারু পাটিগুলা ১২৮ ডা সিট পাইয়া বইছে। এর পরেও কী ক্ষেমতা পাওন যাইবাে না?
‘গাছে কাঁঠাল, গোঁফে তেল। বাঘে একবার রক্তের গন্ধ পাইলে ধানক্ষেতে নাইম্যা আসে। মছুয়া ম্রাট যখন একবার গদীতে বইতে পারছে, তখন বেড়ারে ছ্যাচড়াইয়া না। নামানাে পর্যন্ত এইডার শেষ নাই। এরপর তাে আবার আর একটা বুড়ায় রইছে। হেইডারে চিনবার পারেন না? মছুয়া মহারাজ জেনারেল আব্দুল হামিদ খান। হেই বেডারও একবারের জন্যি ইসলামাবাদের গদীতে বহনের চিরকিৎ হইছে। খালি বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকায় বিক্ষুরা সমস্ত হিসাবপত্র গড়বড় কইরা দিতাছে।
হ-অ-অ-অ এই দিককার কারবার হুনছেন নি? অংপুর জেলার বােনারপাড়াভরতখালিতে বিচ্ছুগুলা ৯০ জন মছুয়াকে ভর্তা বানাইছে রে। এগুলা কুট থাকা আলােরে? অ্যাঃ চেংড়া-পেংড়ারা না বেবাক মছুয়া গুড়া কইর‌্যা ফেলাইয়া দিলােরে! ক্যারে হা-করা, ক্যারে আওয়াল, উটি গেছলু ক্যা? জেনারেল পিয়াজী অর্ডার দিছলাে? ওই আইসব্যার করে- ওই আইসব্যার ক’। উই এনা আইস্যা দেইখ্যা যাক-কোবানী কা কয়?
এইদিকে ঢাকার থনে সাদা চামড়ার রিপাের্টার Clare Hollingworth জব্বর খবর পাড়াইছে। বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকায় আইজ-কাইল চল্লিশ হাজারের উপর বিছু নিজেগাে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা কইর‌্যা আরামে কারবার চালাইতাছে। এইগুলা ঠাওর করা হানাদার সােলজারগাে কাম না। হেই দিন দিনে-দুপুরে চিটাগাং টাউনে বিক্ষুগুলা দিব্বি আইস্যা দুইজন মছুয়া অর একজন পাঞ্জাবি পুলিশরে খতম করছে। এই পয়লা বার গেরিলারা Street Fight করছে।
এদ্দিন পর্যন্ত বিচ্ছুরা খালি রাইতেই কারবার করতাে। অখন দিনের বেলাতেও কাম শুরু হইয়া গেছে। Hollingworth তার রিপাের্টের মাইদ্দে আরাে লিখুখি, ঢাকার কথা আর কওন যায় না। পেরতেক রাইতেই বিচ্ছুগুলার তিনচাইর জায়গায় কারবার চালাইতাছে। পুরান ঢাকারথনে রাইতে জোর গুলির আওয়াজ পাওয়া যাইতাছে। পেরতেক দিন সকালে কয়েকটা কইর‌্যা দালালগাে লাশ বাইরাইতাছে। এইতাে হেইদিন একটা মােটর মেরামতির কারখানা আর পেট্রোল পাম্পের বােমাবাজীর কারবার হইলাে। এর মাইদ্দেই ঢাকা টেলিভিশন বিল্ডিং-এও বােমা ফাটছে। এই সাদা চামড়ার রিপাের্টাররে এককজন মেলেটারি অফিসার কইছে, সমুন্দর থাইক্যা যেমতে কইরা বান আহে, গেল দুইমাসে বাঙালি আদমী লােগ হেইরকম কইরা মুক্তি বাহিনীরে Support দিতাছে?” এর মানে বুঝতাছেন। বঙ্গাল মুলুকে মছুয়াগাে অবস্থা অক্করে ছেরাবেরা হইয়া পড়ছে। হেগাে আখেরী ভাগনের টাইম খুবই নজ্বদিক। বিক্ষুগুলা খুবই একটা মজার কারবার পাইছে। বর্ডারের জেলাগুলাতে সােলজার পাডাইলে ভিতর বাড়িতে গাং করতাছে আর ঢাকা এলাকায় সােলজার রাখলে বাইর বাড়ি Clear করতাছে। তাই অহন একটার পর একটা এলাকা মছুয়া গাে হাত ছাড়া হইতাছে। Hollingworth কইছুইন, মুক্তি বাহিনীর কারবার এখনকার রেইটে চলতে থাকলে অবস্থা Control করার মতাে ক্ষেমতা সামরিক জান্তার নাইক্যা। মাইনষ্যে খাজনা পাতি দেয় না, ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। অনেক স্কুলে বিচ্চুগাে বােমাবাজীর গতিকে দালালগাে পােলাপানও আর যায় না। বহু ব্যাংক ডাকাতি হইতাছে। গেরিলারা এইরকম ডেইনগারাস হইয়া উঠছে যে, হেইদিন বরিশাল স্টিমার ঘাটের কাছে এক হাজারের মতাে গেরিলা স্বাধীন বাংলাদেশের ফ্লাগ উড়াইয়া মিডিং করছে। এই খবর না পাইয়া মাত্র তিন মাইল দূরে মেলেটারি ক্যাম্পের মাইদ্দে বইস্যা মছুয়াগুলার কি কাঁপন! খালি আল্লাহ-বিল্লাহ করতাছিল; কখন না জানি। বিচ্ছুগুলা Attack কইর‌্যা বসে। জেনারেল পিয়াজী মহাগরম। বরিশাল সেক্টর। কম্যান্ডারের কাছে কৈফিয়ত চাইয়া বইছে। বেডায় জবাব দিছে, পয়লা খতরনাক দরিয়া। দু হামলােগ তাে’ কমলি ছােড় দিয়া- মগর কলি তাে হামলােগকো ছােড়তা নেহী?
আরে এইটা কি? এইটা কি? আমাগাে বকশি বাজারের নাড়ুয়া ছক্কু মিয়া কাঁদতাছে কীর লাইগ্যা? কী হইছে? আমাগাে ছকুরে মারলাে কেডা? পরনের তপন দিয়া নাক চোখের পানি মুইছ্যা ছকু কইলাে, ভাই সাব, বিচ্ছুরা এর মাইদেদই ঠ্যাটা মালেক্যার পেয়ারা আল সামস আল আলবদররে কোবায়া তক্তা বানাইছে। মওলবী বাজারের কসাইরা যেমতে কইর‌্যা খাসীর চাম খােলে, বিক্ষুরা সাম্স বদরের হেইরকম কারবার কইরা ফেলাইছে। লাশের অক্করে পাহাড় হইয়া গেছে। আমি কইলাম আবে এই ছক্ককেইসডা একটুক খুইল্যা ক’। আমিতাে আল সাম্স আর আলবদররে চিনতে পারলাম । এইগুলা কি জিনিষ?
ছক্কু গলার মাইদ্দে একটা জোর খ্যাকরানি দিয়া কইলাে, ভাইসাব আপনে অখনও আন্ধারের মাইদ্দে রইছেন। ঠ্যাটা মালেকায় রাজাকারগাে ঠিক মতন ঠাহর করণের লাইগ্যা একেক জেলায় একেক নাম দিতাছে। সাম্স আর বদর হইতাছে জামাতে ইসলামীর ট্রেনিং দেওয়া রাজাকার কোম্পানির নাম। ঢাকার গভর্ণমেন্ট হাউসের বিলেক বাের্ডের মাইদ্দে এই সব নাম লেখা রইছে। বিক্ষুগুলার ঘষাঘষির কারবার হইলে চক দিয়া বাের্ডের মাইদ্দে লিইখ্যা থােয় ৮ই নভেম্বর আল-শামসের ২৬২ জন কইম্যা গেল। ৯ই নভেম্বর আল বদরের ১৯২ জন ছারেন্ডার করলাে। পাবলিকেরে ভােগা মারনের লাইগ্যা রাজাকারগাে ইসলামী নাম দিয়া গােলাম আজম ঠ্যাটা মালেকা-পিয়াজী কি খুশি? কিন্তুক অখন বাের্ডের মাইদ্দে চক দিয়া লম্বর লেখতে লেখতে মওলবীসা’বগাে হাত খড়ি মাটির গুড়ায় সাদা হইয়া গ্যাছে। অ্যাঃ অ্যাঃ! চুষ-পাজামার জেলা সিলেটে হাসপাতালের মাইদ্দে জখমি মছুয়াগাে আর জায়গা হইতাছে না। এইদিকে কুমিল্লা সেক্টরে বিক্ষুগুলা গ্রামের পর গ্রাম মুক্ত করতাছে। গ্রাম-শহর, নগর-বন্দর, নদী-নালা হগুগল জায়গায় হাজারে হাজারে বিক্ষু খালি মছুয়াগাে ধাওয়াইয়া বেড়াইতাছে। পাইলেই মাইর, পাইলেই মাইর। চাইর দিকে আওয়াজ উঠছে ‘জিন্না মিয়ার পাকিস্তানআজিমপুরের গােরস্থান। হের লাইগ্যাই কইছিলাম কেইসটা কি? আল্লাহ্র মাইর দুনিয়ার বাইর।

সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল