নভেম্বর ১৯৭১
চিনলাে কেমৃতে? হেরা সেনাপতি ইয়াহিয়ারে চিলাে কেমতে? আঃ হাঃ অস্থির হইয়েন না ,অস্থির হইয়েন না, সবই খুইল্যা কইতাছি। করাচীর থনে রয়টার এক জব্বর খবর দিছে। গেল জুম্মার দিন সক্কাল বেলায় হারা রাইত ঘুম না হওনের গতিকে সেনাপতি ইয়াহিয়া খান ইসলামাবাদের প্রেসিডেন্ট হাউসের বাগানের মাইদ্দে হাওয়া খাইতে বাইরাইছিল। মারী পাহাড়ের হেইমুড়া থাইক্যা ঝির ঝির কইর্যা একটা সােন্দর বাতাস অইতাছিল। খান সাবের হাতের মাইদ্দে বাঙাল মুলুক থাইক্যা জেনারেল পিয়াজীর একটা খতরূনাক টেলিগ্রাম। এই টেলিগ্রামে খারাপ খবর রইছে। খুলনার সাতক্ষীরা, রাজশাহীর চাপাইনবাবগঞ্জ, রংপুরের কুড়িগ্রাম, দিনাজপুরের ঠাকুরগাঁ, সিলেটের সুনামগঞ্জ, টাঙ্গাইলের কালীহাতি থানার উত্তরমুড়া, নােয়াখালী রেল ইস্টিশনের দক্ষিণমুড়া ছাড়াও বরিশালের নদীর মাইদ্দে, গােপালগঞ্জের বিল, সিরাজগঞ্জের চর এমন কি গাইবান্দা আর চাঁদপুরের বগল দিয়া দুশমনগগা রাজ্য কায়েম হইয়া গেছে।
এইসব জায়গায় অফিসার পাডাইলে লাপাত্তা হইয়া যায়। সােলজার পাডাইলে ভাগােয়া হয়। রাজাকার পাড়াইলে সারেণ্ডার করে। এর মাইদ্দে আবার ছিক্রেট রিপাের্ট আইছে যে, দুশমনগাে হাজারে হাজার রেগুলার সােলজার বলে তৈরী হইয়া গেছে। এইদিকে বিক্ষুগুলাও আইজ-কাইল মর্টার আর রকেট লাঞ্চার লইয়া আক্রমণ করতাছে। বঙ্গাল মুলুকে আমাগাে পাঁচ ডিভিশন সােলজারের এক ডিভিশন আগেই খতম হইছে, এক ডিভিশনের মতাে মিসিং লিস্টি আর হাসপাতালে রইছে। মাত্র তিন ডিভিশন দিয়া শীতের টাইমে পাইট করা ইমপস’- মানে কিনা অসম্ভব কারবার।
এইদিকে ঠ্যাটা মালেকা মাল-কড়ি খাইয়া মন্ত্রীর সংখ্যা বাড়াইয়া তেরাে বানাইয়া ফেলাইছে। এলায় করি কি? যেমন মনে হয় আমাগাে ফুইট্যা পড়নের টাইম অইস্যা গেছে। জেনারেল পিঁয়াজীর টেলিগ্রামটা হাতে লইয়া সেনাপতি ইয়াহিয়া বাগানের মাইদ্দে Walking করতাছিল আর ভাবতাছিল মাসের পর মাস ধইর্যা এতাে বাইল পটুকি লাগাইলাম তবুও কিছুই করতে পারলাম না?
আচ্ছা পাকিস্তানীদের কইয়া দেই, বঙ্গাল মুলুক হতছাড়া হইলে কি হইবাে, আমরা কাশ্মীর দখল কইর্যা ফেলামু। লগে লগে হিস্ হিস্ আওয়াজ হুইন্যা মওলবী সা’বে দ্যাহে কি? তার বাগানের মাইদ্দে তিনডা গাবুর সাইজের গখুর সাপ ঝির ঝির হাওয়া পাইয়া কি সােন্দর খেলতাছে! ছদর ইয়াহিয়া অক্করে চিল্লাইয়া উড়লাে ‘ইয়ে তাে শয়তান হ্যায়। শয়তান কা নজর মেরা উপর কেইসে গিয়া?’ একদল মছুয়া গার্ড দৌড়াইয়া আইস্যা আরে গুলি রে গুলি, বাগানের বারােটা বাজানাে সারা। কিন্তুক সাপ মারলাে না। শ্যাষে কম্বাইও মেলেটারি হাসপাতালর বেডের থনে এম.এম. আহম্মক এ্যাডভাইসিং পাডাইলাে। স্যার, সাপুড়ে দিয়া টেরাই করলে কেমন হয়? এইদিকে বেগম ইয়াহিয়া খান কি রাগ! চব্বিশ ঘণ্টা পরেই এই বাগানে তার লাড়কার হাংগা হইবাে। হাংগার পরেই আম জলসা মানে কিনা পার্টি- এইদিকে এটা কি গেনজাম্।
হ-অ-অ-অ এই দিক্কার করবার হুনছেন নি? এতাে কইরা না করলাম যাই না যাই না। চুষ পাজামা মাহমুদ আলীর বাড়ি সিলেট জেলায় যাইস না। হেইদিকে বিচ্ছুগুলা খুবই গরম হইয়া আছে। রাস্তাঘাট গায়েব। যেখান-সেখানে মাইন বইছে। নাহ্ আজরাইলে Call করণের লগে লগে মচুয়াগুলা সিলেট টাউনের থনে অক্করে ট্রাক ভর্তি হইয়া রওয়ানা হইলাে। আহা রে মাইল কয়েক যাওনের পরেই খালি একটা আওয়াজ হইলাে। ট্রাক ভর্তি মছুয়াগুলার হেই কারবার হইয়া গেল। এই রিপাের্ট পাইয়া ঢাকার সেকেন্ড ক্যাপিটালে জেনারেল পিয়াজী মহা খাপচুরিয়াস্ হইয়া উঠলাে। মেজর সালেকের ডাক পড়লাে। বেড়ায় হইতাছে পাবলিসিটির চার্জে। খটটাস কইর্যা একটা স্যালুট দিয়া কইলাে, স্যার, ইয়ে রিপাের্টকা ম্যায় দুসরা তরিকাসে Publicity দুঙ্গা। ব্যাস্, মেজর সালেক তার ঘেটুগাে খবর দিলাে। |
ঢাকেশ্বরী রােডের ছহি আজাদ অফিস থাইক্যা হরলিকসের বােতল ছৈয়দ ছাহাদত হােসেন আইলাে, পূর্বদেশ থাইক্যা ইলেকশনে হারু পাটির নেতা মাহবুবুল হক ঢিলা ফুলপ্যান্ট উপরের মুহি টানতে টানতে দৌড়াইলাে, পুরানা পল্টনের ব্ল্যাক মেইল কাগজের আজিজুর রহমান বিহারী বােতল হাতে হাজির হইলাে, মাল খাইতে খাইতে নিচের ঠোট বুলাইয়া মর্নিং নিউজের এস.জি.এম. বদরুদ্দিন ইয়েচ চ্যার কইলাে। খালি দৈনিক পাকিস্তানের সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দিন সা’ব মেটেনী শাে সিনেমা ‘ঘােড়া কা-মােচ’ দেইখ্যা লেটে আইলাে। সংগ্রাম কাগজের মাওলানা ফারুক্যা আগের থনেই মেজর সালেকের লগেই আছিলাে। এইবার এগারাে নম্বর বেইলী রােডে মিটিং বইলাে।
শেষে ঠিক হইলাে সিলেটের এই খবরা খবরের কাগজে ছাপাইতে হইবাে; তবে একটুক এথি-উথি করণ লাগবাে। ট্রাকের বদলে বাস কইতে হইবাে, সােলজারের বদলে চা-শ্রমিক বইল্যা ছাপাইতে হইবাে। আর বিচ্ছুগুলার কারবার না কইয়া হিন্দুস্থানী এজেন্টের ব্যাপার লিখতে হইবাে। তা হইলেই তাে বাঙালিগাে ভােগ মারণের সুবিধা হইবাে। নিজেগাে বুদ্ধিতে নিজেরাই তাজ্জব বইন্যা গেল। যেইরকম বুদ্ধি হেইরকম কাম। ক্যামন আন্তাজ করতাছেন, হেগাে কারবার সারবার?
এইদিকে কেইসটা কি? ঢাকা University র নয়া মাতব্বর বজ্জাত হােসেনের কোনাে খবর পাওয়া যাইতাছে না ক্যান? এই বেডারে বিক্ষুগুলা মেরামত করলাে নাকি? নাকি Under Ground-এ ভাগলাে?
এ্যার মাইদ্দে চুয়াডাঙ্গায় জেনারেল পিয়াজীর অর্ডারে আর একটা কারবার হইয়া গেছে। মছুয়াগুলার Morale এন্ট্ররং করণের লাইগ্যা ফসিং মাইর্যা ঢােল দিছে, ‘বিচ্ছুগুলার কম্যান্ডার যে মেজর মঞ্জুরের ডরে আপনারা তাম্বু থাইক্যা বইরাইতে চাইতেন না , হেরে Arrest করা হইছে। চুয়াডাঙ্গার মাইল কয়েক দূরে একদল বিচ্চুর লগে মেজর মঞ্জুর বইস্যা, এই খবর পাইয়া হাইস্যা দিছে। এরপর বুঝতেই পারতাছেন মছুয়াগুলা হাঁটি হাঁটি পা পা কইরা তাম্বুর থনে বাইরাইনের লগে লগে গাবুর মাইর। চাই-ই। হেই কারবার হইয়া গেল।
আহ্ হাঃ! চিটাগাং পাের্টের মাইদ্দে একটা গ্রিক জাহাজ আবার মছুয়াগাে লাইগ্যা তেল লইয়্যা আহনের লগে লগে বিক্ষুগুলা ডাবি করছে। বঙ্গাল মুলুকের দখলীকৃত এলাকায় এখন একটা ক্যাডাভ্যারাস্ অবস্থা চলতাছে। পাট-চা-চামড়ার এক্সপাের্ট Stop. পাবলিকে মার্চ মাসের থনেই ট্যাক্স দেওন বন্ধ করছে। মফঃস্বলের টাউনগুলার মাইদ্দে কোনাে ভদ্রলােক নাইক্যা। বিক্ষুগুলা গেরামে দালাল দারােগাগগা মাইর্যা ছা করছে। মুসলমান লীগ, জামাতে ইসলামী, পি.ডি.পির দালালরা ওয়াইফ-পােলাপান স-অব ঢাকায় পাডাইয়া মাল-পানি কামানের তাল করতাছে। এর মাইদ্দে মাসের পর মাস ধইরা কেদো আর প্যাকের মাইদ্দে বিক্ষুরা অহন হেই দালালগাে খুঁইজ্যা বেড়াইতাছে।
আহ্হঃ ! এই দিককার কেইস কওয়া হয় নাই, না? আমেরিকা Declare দিছে, ইসলামাবাদের সামরিক জান্তারে আর অস্ত্রপাতি দিব না। বৃটেনের লেবার পার্টি অক্করে সাফ জবানে সেনাপতি ইয়াহিয়ার গতরে থুক মাইরা বাঙালিগাে দিকে রায় দিছে। সােভিয়েত রাশিয়াতে বাঙালিগাে সমর্থনে জনসভা হইতাছে। পশ্চিম জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান, পাকিস্তানকে এক পহাও দিব না বইল্যা ঠিক করছে। একদিকে বাঙালি Marder আর একদিকে বাকীর কিস্তি শােধ না দেওনেই এইসব দেশ মাল-পানি বন্ধ করছে। বাঙ্গাল মুলুকের খতরনাক খবর আর লন্ডন, নিউইয়ক, প্যারিস থাইক্যা এইসব খবর পাইয়া সদর ইয়াহিয়া রাগে অগ্নিশর্মা হইছেন।
নদীর চরে বক্, চখা এইসব পাখি ফান্দের মাইদ্দে পইড়া যেতে চিল্লায় মওলবী সাবে হেতেই চিল্লাইয়া উঠছে, “হে আমেরিকা, হে নিকসন, হে আব্বাজান আর মাইর সহ্য করতে পারতাছি না। হে নতুন মামু, আমি কিন্তুক ইন্ডিয়ার লগে লাড়াই লাগাইয়া দিমু। আমাগাে ছক্কু মিয়া একটা গুয়ামুরি হাসি দিয়া কইলাে, ‘বেডা মাইর খাইতাছােস বাঙালি বিক্ষুর হাতে আর লাড়াই করতে চাস্ ইন্ডিয়ার লগে। হেই-ই পুরানা ট্রিক্স। তা’এইবার তাে ফায়দা হওনের কোনাে চান্সিং নাইক্যা। যতই ট্রিক্স করাে, তােমারে বধিবে যে বাংলাদেশে বাড়িছে সে। ভাসুরের নাম মুখে লও আর না লও, মাইর যহন। শুরু হইছে, তহন এই হাটুরিয়া মাইর দিয়াই তগাে ভাগােয়াট করমু ।
এই দিকে এক মেমসা’বের হাসব্যান্ড কুষ্টের ঠ্যাটা মালেকারে হফতা দুই গর” খোজা কইর্যা আরও তিনডা কড়া কিসিমের ভেড়ুয়া মালের খবর বাইর করছে। আবার রেডিও গায়েবী আওয়াজ এইগুলার আসল খবর চাপিস্ করছে। এই তিন মন্ত্রীর লম্বর হইতাছে একের পিটে এক এগার এ.কে.এম. মুশাররফ। একের পিঠে দুই বারাে পাউট্টা জসিম। একের পিঠে তিন তেরাে পাগলা রহমান।
ছক্কু অক্করে ফাল পাইড়া উঠলাে- ঠ্যাটা মালেকার যেমন লাগে Brain খেলতাই হইতাছে? বেডায় কি সােন্দর সােন্দর মাল বাইর করতাছে। এইগুলারে চিনলাে কেতে? হেইর লাইগ্যাই কইছিলাম, চিনলাে কেমৃতে? রাওয়ালপিন্ডিতে গাবুর গখুর সাপগুলা সেনাপতি ইয়াহিয়া খানরে চিনলাে কেমনে?
সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল