You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.16 | চরমপত্র - সংগ্রামের নোটবুক

১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

চামচিকাও আবার পাখি, ঠ্যাটা মালেকাও গবর্ণর। আমাগাে বখশি বাজারের ছকু মিয়া অক্করে ফাল পাইড়া উঠলাে, ‘হ-অ-অ বুঝছি বুঝছি, বড় বড় বটগাছের মাইদ্দে সন্ধ্যা। লাগলেই যে জিনিষগুলা উবতা হইয়া ঝুলতে থাকে, হেই গুলাইতাে চামচিকা-না?” অক্করে কাপে কাপ। কুষ্টের ঠ্যাটা মালেকা ঠিক হেমতে কইর‌্যা মছুয়াগাে লগে উবৃতা হইয়া ঝুলছে। দিন কয়েক হয় ওস্তাদ-সাগরেদ, মানে কিনা ইয়াহিয়া-মালেকা দুইজনেই ড্রাম ভর্তি তেল লইয়া ঘুরতাছে। আপেনেরা ভাবাতছেন কেইসটা কি? কেইস হইতাছে হেই মাখনবাজী আর ট্রিক্স। যদি-কোনােমতে ডাইল গলে। এখনও বঝুলেন ? তয় খুইল্যা কইতাছি।
বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকার লাড়াই তাে ছয় মাস পার হইলাে। এর মাইদ্দে পাকিস্তান থাইক্যা ছয় ডিভিশন সােলজার ছাড়াও পরায় হাজার চল্লিশেক প্যারা মিলিশিয়া-পুলিশ আইছে। এরপর আর সােলজার পাঠানাে খুবই অসুবিধা। নতুন সাহেবের পয়লা মােছ গজাইলে নাকি আয়না দিয়া দাহে। ঠ্যাটা মালেকাও তাই মছুয়া। সােলজারগাে হিসাব দেখতাছিল। ব্যাডা ল্যাড়লেড়া বুড়ায় দ্যাহে কি? এক ডিভিশনের উপর মছুয়া বাংলাদেশের ক্যাদো আর প্যাকের মাইদ্দে হুইত্যা রইছে। আর এক ডিভিশনের মতাে আজরাইল ফেরেশতার দরবারে যাওনের লাইগ্যা Waiting লিস্টিতে রইছে। পাকিস্তানী পুলিশ আর প্যারামিলিশিয়ার দল টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহে কাদেরিয়া বাহিনীর বিচ্ছুগুলার হাতে গাবুর মাইর খাওনের গতিকে আর ঢাকা-কুর্মিটোলার বাইরে যাইতে চাইতাছে না। আইজ-কাইল দলে দলে সব ছুটির দরখাস্ত করতাছে। মুক্তি বাহিনীর বিষ্টুগুলার নমুনা কায়-কারবার দেখনের পর এগাে এই অবস্থা হইছে। লগে লগে ঠ্যাটা মালেকায় আব্বাজান ইয়হিয়ার কাছে এই কুফা অবস্থার কথা জানাইছে। এলায় উপায়? ইয়াহিয়া সা’বে ইরান যাওনের আগে মালেক্যারে অর্ডার দিছে, মুক্তি বাহিনীর কামানের খােরাকের জন্যে চোর, ছাচ্চোর, বদমাইশ, ডাকুগাে লইয়া রাজাকারের নম্বর বাড়াও। আলি মছুয়াগুলারে আর নষ্ট করা যাইবাে না।।
জার্মানিতে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের টাইমে এই রকম একটা কারবার হইছিল। ব্যাস্ তিন টাকা রােজ আর লুটপাটের ঢালাও হুকুম লইয়া মওলবী সা’বগাে রাজাকার বাহিনী নতুন চেহারায় ময়দানে আইতাছে। তারপর বুঝতেই পারছেন, বিচ্ছুগুলার কোবানী। এই রকম এটা ক্যাডাভেরা অবস্থায় সেনাপতি ইয়াহিয়া একটা পুরানা ট্রিক্স লইয়া, মানে কিনা বাংলাদেশের গেনজাটা পাকিস্তান আর ইন্ডিয়ার মাইদ্দে গেনজাম্ বইল্যা চালু করণের লাইগ্যা ইরান গেছিলাে।
আকা ইসলামাবাদ থাইক্যা কি জানি একটা ছিক্রেট খবর আইলাে। আগা মােহাম্মদ ইয়াহিয়া খান আরে দৌড়-রে-দৌড়। অক্করে খুঁটি তুইল্যা দৌড়। মাত্র চব্বিশ ঘণ্টার মাথায় বেড়ায় তেহরান থাইক্যা দ্যাশে ফিইর্যা আঃ-আঃ-আঃ হাঁপাইতে শুরু করলাে। কেইসটা কি? আঃ হাঃ বারবার বিরক্ত করলে তাে কথা কওনের Flow নষ্ট হয়ে যায়। সেনাপতি ইয়াহিয়ারে খাকী পােষাক পরুইন্যা একটা ভােমা সাইজের জেনারেল নাকি লাং মারণের বুদ্ধি করছিল। হেই খবর পাইয়া আগা সা’বের এই অবস্থা হইছে।
এইদিকে আমাগাে ঠ্যাটা মালেকা করছে কী? হেইদিন রেডিও গায়েবী আওয়াজ থাইকা বাঙালি রিফিউজিগাে লাইগ্যা কি কান্দন! আপনারা যে যেখানেই থাকেন ফেরত আইস্যা পড়েন। আপনাগাে জমি-জিরাত, ঘর-বাড়ি ফেরত দিমু। এর মাইদ্দে আমাগাে লােকজনের মাইদ্দে এইসব ঘর-বাড়ি জমিজিরাত বিলি করলে কি হইবাে, আপনারা মেহেরবানী কইর‌্যা আইলেই সব ফেরত পাইবেন। ছকু আর মেরামত মিয়া অক্করে এক লগে ফাল্ পাইড়া উডলাে, ‘আমি কমু আমি কমু? হেগাে চিল্লা-চিল্লিতে মেজাজটা খুবই খারাপ হইয়া গেল। ধমক দিয়া কইলাম, “চোপ্। দুইজনেই খামুশ। হ্যা ঠিক আছে। আইজ ছক্কর কওনের চান্স দিলাম। আমাগাে ছক্কু মিয়া গলার মাইদ্দে একটা জোর খ্যাকরানি মাইরা কইলাে ‘বুছছি, বুছছি ‘ছিবড়া’ Left’. মেহামত মিয়া আস্তে কইর‌্যা কইলাে, আবে এই ছকু, এই যে কইলি ছিবড়া Left- এই কথাডা একটু খুইল্যা ক’। ছক্ক একটা বাইশ হাজার টাকা দামের হাসি Angle কইরা মাইরা কইলাে, মাইনষে যেমতে কইর‌্যা ঝুনা নারিকেল খাওনের পর নারিকেলের ছােবড়া ফেলাইয়া দেয়, হেতে কইর‌্যা মছুয়া সােলজার আর রাজাকারের দল বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকায় বেশুমার মানুষ মার্ডার আর বাকিগুলারে লুটপাট কইর‌্যা অক্করে ছিবড়া বানাইয়া ফালাইছে। এলায় বুঝছেন ছিবড়া Lelt কারে কয়?
আমি আবার ছক্করে থামাইয়া দিয়া শুরু করলাম। রাজাকারের মাইদ্দে যারা নতুন নাম লেখাইছে, তারা ঠ্যাটা মালেক্যারে কইছে, ছ্যার তিন ট্যাকা রােজে তাে আর পােষাইতাছে না। লুটপাট করবার পারমিশন দিছেন বটে কিন্তু অখন তাে ছিবড়া Left, কোনাে ব্যাডার কাছে কিছু নাইক্যা, আমরা এলায় করি কি?’ এইদিকে বিক্ষুগুলার কোবানীর চোটে পেরতেক দিন আমাগাে বহুত দোস্ত পটল তুলতাছে। যেমতে কইর‌্যা পােয় হেইরকম একটা ব্যবস্থা কইর‌্যা দেন। লগে লগে ঠ্যাটা মালেকায় রেডিও গায়েবী আওয়াজ থাইক্যা গলার সুর কি সােন্দর নরম কইর‌্যা রিফিউজিগাে দ্যাশে ফেরনের ডাক দিছে। যদি নতুন রাজাকাররা রিফিউজি বাঙালিগাে কাছ থনে কিছু মালপানি বানাইতে পারে। ক্যামন বুঝতাছেন? মালেকার কারবার-সারবার। মনে লয় কেউই হের ট্রি বুঝতে পারছে না। ব্যাডায় আবার বুড়বকের মতাে কইছে, রাস্তাঘাট আর রেললাইন গড়বড় হওনের গতিকে মছুয়াগুলা দরিয়ার মাইদ্দে দিয়া যাতায়াত করনের টেরাই করতাছে।’
কিন্তু হেই যে কইছিলাম বিচ্ছু- হেই বিচ্চুগাে যন্ত্রণা খুবই বাইড়া গেছে। আইজকাইল বিক্ষুগুলা আবার কামান লইয়া ঘুরতাছে। হেইদিন রাজশাহীর বগলে মছুয়াগুলারে পাইয়া আরে কোবানী রে কোবানী। এইদিকে আবার আইতে শাল যাইতে শালের কারবার হইয়া গেছে। পেরতেক দিন বরিশালে গাং-এর মাইদ্দে মহা গেনজাম কারবার চলতাছে। চাইর দিক থনে খালি চুবানীর খবর পাইয়া জেনারেল পিয়াজী কি রাগ! এর মাইদ্দে আবার কেমতে জানি খবর পাইছে এই বর্ষার টাইমে বলে হাজার হাজার মুক্তিবাহিনীর ট্রেনিং চলতাছে! এই খবর না পাইয়া জেনারেল পিয়াজীর হাঁটু অক্করে থর থর কইরা কাঁপতাছে।
এলায় করি কি? ঠিক আছে মছুয়া সােলজারগাে Morale মানে কিনা মনের জোর ঠিক করনের লাইগ্যা কইয়া দেই বর্ষার মাইদ্দে বিক্ষুগুলার হাতে মাইর খাইলে কি হইবাে- শীতকালে আমরা দেখাইয়া দিমু। ব্যাডার মাথায় বুদ্ধি অক্করে গজগজ করতাছে। মুক্তিবাহিনীর বিক্ষুগুলার পুরা ট্রেনিং-এর খবরেই পিঁয়াজী সা’বে ঘন ঘন মালেক্যারে কইতাছে, কড়া ডােকা ভােগাছ লাগাইয়ে, নেহি তাে, বাকি জওয়ান লােগকা মউৎ ইয়ে বঙ্গাল মুলুকমে হাে যায়েগা। এই অর্ডার না পাইয়া ঠ্যাটা মালেকা পয়লা থনেই উল্ট-পাণ্ডা কইতে শুরু করছে।
হায় হায়! এদিককার খবর হুনছেন নি? পাকিস্তানে কারবার শুরু হইয়া গেছে। Voice of America কইছে ছদর ইয়াহিয়ার Advisor এম.এম. আহাম্মকরে শিয়াল কোটের মােহাম্মদ আসলাম কোরেশী নামে এক হেই জিনিষ ছােরা মারছে। এম.এম. আহাম্মক অক্করে ঘেঁাৎ কইরা উঠছে। রাওয়ালপিন্ডির মেলেটারি হাসপাতালে ব্যাডায় অখন আজরাইল ফেরেশতার লগে তুফান ফাইট করতাছে। এইদিকে আবার জেনারেল নিয়াজীর জাতির চোটে ঠ্যাটা মালেকায় আবার আরেক টিরিক্স করছে। বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ লাগছে, কইয়া আমেরিকার থনে খাবার চাইছে। কিন্তু আস্তে কইর‌্যা কইছে, ‘চাইলের বিশেষ দরকার নাইক্যা, আটা গম পাঠাইলেই চলবাে।’ এলায় বুঝছেন কিয়ের লাইগ্যা এই কারবার করছে। বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকায় আইজ-কাইল মছুয়াগুলার দানাপানি Short পড়ছে। হেইর লাইগ্যা একদিকে কইতাছে দুর্ভিক্ষ লাগছে, আরেক দিকে চাউল পাঠাইতে না করতাছে। কিন্তুক শ্যাম চাচায় নাকি কেইসটা ধইরা ফালাইছে। তবুও ঠেটা খালি হ্যাঃ হ্যাঃ কইর‌্যা দাঁত বাইর কইর‌্যা রইছে। হের লাইগ্যাই কইছিলাম চামচিকাও আবার পাখি, ঠ্যাটা মালেকাও গবর্ণর।

সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল