You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10 | চরমপত্র - সংগ্রামের নোটবুক

অক্টোবর ১৯৭১

‘আইতে শাল, যাইতে শাল হের নাম বরিশাল।এতাে কইরা না করলাম, যাইস না, গাংগের মাইদ্দে যাই না। নাঃ আমার কথা হুনলাে না। মছুয়াগুলার লাগছে মরণ। আমার কথা হুনবাে কীর লাইগ্যা? রিয়ার এডমিরাল ছরিফ সা’বের ভােগা কথাবার্তায় মছুয়াগুলা কী খুশি! গেডমেড কইয়্যা বরিশাল-পউট্টাখালি রওয়ানা হইলাে। পাবলিকে টের পাইবাে গতিকে জাতিসংঘ থাইক্যা পাকিস্তানী খয়রাতি লঞ্চ আর স্পিড বােটগুলার রং পাল্টাইয়া লইলাে। চাদপুর পার হওনের লগে লগেই ঠাস্ ঠাস্ কইর‌্যা সব আওয়াজ হইতে শুরু করলাে। ডরাইয়েন ন, ডরাইয়েন না- এই সব গুলির আওয়াজ না। এমতেই মছুয়ারা ভিমরী খাইয়া চিত্তোর হইয়া পড়ছিল। চাদপুর পার হওনের পর মেঘনা নদীর সাইজ দেইখ্যা মচুয়াগুলার এই অবস্থা হইছে। এইমুড়া-হেইমুড়া বারাে মাইল। কেইসডা কী! এইডা কি দরিয়া, না সমুন্দর? সবুর সবুর আর একটুক আগৃগুয়া লউন দেখবেন, আসল বঙ্গাল মুলুক কারে কয়? মাদারীপুর, বরিশাল, পউট্টাখালি, সপি, হাতিয়া আহাঃ এইসব জায়গায় কোনাে রেল লাইন নাইক্যা। দুইশ’ বছর আংরেজ রাজত্বে হেতাইনরা এক ইঞ্চি রেল লাইন বহাইতে পারে নাই। আর চব্বিশ বছর মছুয়া রাজত্বে। বেডাগুলা এইসব এলাকায় রেল লাইন বহাইবার কোনাে কোশেশই করে নাইক্যা। হেই টেকা খরচ কইর‌্যা আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার থনে হাওয়াই জাহাজে ঘাস আইনা তারবেলা বাঁধের উপর লাগাইয়া সবুজ করছে। তখন মওলবী সা’বরা ভাবছিল, ‘খালি মুছলমান মুছলমান ভাই ভাই’ কইয়্যা বাঙালিগাে উপর ডান্ডাবাজিতে রাজত্ব চালাইবাে। আর মাল-পানি কামাইবাে। বঙ্গালমুলুকের কোনাে উন্নতি না করলেও চলবাে। ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারে নাই যে বঙ্গাল মুলুকের কেদো আর প্যাকের মাইদ্দে তাদের মউত তৈরী হইতাছে। ইলেকশনের পর বোেরা বেশি চালাকি করেই বাঙালি Murder কইর‌্যা নিজেগাে রাজত্ব চালু রাখতে চাইছিল। মুছলমান-মুছলমান ভাই-ভাই 23 Kill করি আপত্তি নাই’- এইসব শ্লোগানে আর কোনােই কাম হইলাে না। বহুত লেইট কইরা ফালাইছেন। এর মাইদ্দেই মছুয়াগাে আক্রমণে বাংলাদেশের হগ্গল ফ্যামিলির একভাবে না একভাবে লোেকশান হইছে। কারাে বাপ-মা, কারাে ভাই-বােন, আবার কারাে নিকট আত্মীয় মার্ডার হইছে।
নেংটার আর বাটপারের ভয় কী? অখন বাটপার মারনের টাইম। পাকিস্তানী হানাদার সােলজার আর বাটপারের মাইদ্দে কোনােই ফারাক নাইক্যা। ভাইসব বাটপারবদমাইসগাে কোবায়ে আরাম কইর‌্যা লন। এই বেডারাই হইতাছে ইসলামের সব চাইতে বড় দুশমন। হাতে মেশিনগান লইয়া বেডারা আমাগাে মসজিদ-মন্দির ধ্বংস করছে; মাইয়াগাে উপর অত্যাচার করছে, ভাই-বেরাদারগাে Marder করছে; পালাপানগাে বেয়ােনেট দিয়া খেচাইছে। অখন বিচ্চুগাে পাল্টা কোবানীর চোটে মুসলমান-মুছলমান ভাই ভাই’ কইয়া বুক ভাসাইতাছে। অরির শেষ রাখিতে নাই’। এইগুলা সাপের জাত। একটা সাপ আর মছুয়ার মাইদ্দে পয়লা মছুয়া মাইর্যা পরে সাপ মারতে হইবাে। লাখাে শহীদের আত্মার খােদার কসম খাইয়া মছুয়া-রাজাকার-দালাল, Murder করণ লাগবে। এইদিকে বিচ্চুগুলাও আপনাগাে দোয়া-খায়ের লইয়া তুফান কেকা মাইর শুরু কইরা দিছে। চাইর দিন চাইর রাইত ধইর্যা সিলেটের ছাতকে মুছুয়াগুলা খালি ইয়ানসি, ইয়ানসি করতাছে। লাশের পাহাড় হইছে গতিকে জেনারেল পিয়াজী অখন এয়ার। পাের্সরে আরাে বােম্বিং করতে পাঠাইছে। রিয়াল এডমিরাল ছরিফ সা’বে স্পিড বােড আর লঞ্চে মছুয়া পাঠাইছে। ইজ্জতের ছাওয়াল কিন্তু স-অ-ব One way Trafic। যেই-ই যায় বঙ্গে মউত যায় সঙ্গে।
এইদিকে Associaed Press of America রাওয়ালপিণ্ডির থনে কইছে বিক্ষুগুলার কারবারে এখন মছুয়াগাে এয়ার পাের্স কুমিল্লা সেক্টরেও Action করতাছে। বঙ্গাল। মুলুকের কারবারই আলাদা। বােম্বিং করনের মতাে খাস কইরা কোনাে জায়গাই নাইক্যা। খালি কেঁদো আর পানি। বােমা ফালাইলেও বেশির ভাগই মাটির মাইদ্দে হান্দাইয়া যায় । মছুয়াগাে কেইস খুবই খতনাক। এদিকে বেটা মালেকা সিলেটে বিচ্চুগাে কারবারের নমুনা না পাইয়া অক্করে ময়মনসিংহে ভাগােয়াট হইছিলেন। হ-অ-অ রংপুর-দিনাজপুর এলাকার খবর হুনছেন নি? হেইখানে সাড়ে ছয়মাস ধইরা হানাদার সােলজাররা বাংকারের মাইদ্দে থাকতে থাকতে আইজ-কাইলপাগলা হইয়া উঠছে। এক একজনের আধ হাতের মতাে দাড়ি বাইর হইছে। Identity কার্ডের ফটোর লগে বেড়াগাে চেহারা মােবারকের আর মিল লাইক্যা। বিছু আর পাবলিকে মিইল্যা হেগাে ঘেরাও কইর‌্যা থুইছে। আকা আমাগাে বকশী বাজারের চকু মিয়া বাঘইর কইয়া এক একটা চিকুর দিয়া বইলাে।
কী হইলাে ছক্কু মিয়া চিল্লাইয়া উঠলা কির লাইগ্যা?
ভাইসব বরিশালের কারবার কইতাছিলেন, অখন যে অক্করে রংপুরের মাইদ্দে যাইয়া হাজির হইছেন, কেইস কী?
আমি জিলার মাইদ্দে একটা কামড়া দিয়া কইলাম, কইতাছি, কইতাছি।’ ঢাকার থনে আমেরিকান News Agency UPI একটা খবরে কইছে, ঠ্যাটা মালেক্যার অফিসাররা এই মর্মে আশংকা প্রকাশ করেছে যে, গত ৮ই অক্টোবর তারিখে বাঙালি গেরিলারা বরিশাল এলাকায় গাংয়ের মাইদ্দে মছুয়া সােলজার ও পাকিস্তানী পুলিশগাে একটা দলরে পাইয়া বারাে জনরে হালাক করছে। ঠ্যাটা মালেকার অফিসাররা আরও বলেছেন যে, বিক্ষুগুলা একজন এস.ডি.ও. সা’বরে পর্যন্ত শেষ কইর‌্যা ফালাইছে।’ UPI আরাে জানিয়েছে যে, হরিবল হকের পাকিস্তান অবজারভার কাগজের মতে এইসব হানাদার সােলজার আর লাহাের-রাওয়ালপিন্ডির পুলিশরা এস.ডি.ও. সা’বের লগে গৌরনদী থানা এলাকায় বিক্ষুগুলার গাবুর বাড়ির চোটে যখন বরিশাল কেধার হ্যায়, বরিশাল কেধার হ্যায়’, কইয়া, ভাগতাছিল, তখন ছিপ নাও লইয়া বাঙালি গেরিলারা কারবার কইরা ফালাইছে। পাকিস্তান অবজারভার কাগজ ঘং ঘং কইর‌্যা কাইন্দা আরাে খবর ছাপাইছে। বিক্ষুরা আমেরিকান আর চাইনিজ Automatic হেই জিনিষ দিয়া একটা লঞ্চ ডুবাইছে। ঠেটা মালেক্যা-পিঁয়াজীর এই বিরাট দলটার মাত্র এগারাে জন। কোনােমতে গতরের মাইদ্দে গুলির জখমী লইয়া বরিশাল টাউনে ফেরত আইছে।
ছকু কইলাে, ভাইসাব হেতানেরা যখন কইছে যে বারােজন খতম হইছে, তখন ডাহিনা মুড়া খালি একটা শূন্য বহাইয়া দেন, তা’ হইলেই আসল লম্বরডা ধরা পড়বাে। আইজ-কাইল ঢাকায় চাইরাে মুড়ার থনে এতাে কুফা খবর আইতাছে যে, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী খালি একটা কইর‌্যা অংক কমাইয়া হানাদার সােলজারদের মউতের খবর কইতাছে।
এইদিকে সেনাপতি ইয়াহিয়া খান আবার ট্রিকস্ করছে। বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকায় বিক্ষুগুলায় কোদালিয়া মাইর যখন জইম্যা উঠছে, তখন আস্তে কইর‌্যা। প্যারিসের একটা খবরের কাগজরে কইছে, আমি ইন্ডিয়ার লগে বাতচিত্ কইর‌্যা হল কেচাল মিটাইয়া ফেলামু।’ বেডা একখান! মাথার মাইদ্দে বুদ্ধি অক্করে গজগজ করতাছে। মাইর চলতাছে বঙ্গাল মুলুকে। তােমার Order-এ হানাদার সােলজাররা বাঙালি মার্ডার করণের গতিকে বাঙালি বিক্ষুরা অখন বদলা লইতে শুরু করছে। বেসুমার মছুয়া-রাজাকার-দালাল কোবাইতাছে। তােমার কাপড়া যহন বাসন্তী Colour হইছে, তােমার অবস্থা যহন কেরাসিন হইছে, তােমার Fighting পাের্স যহন বঙ্গালমুলুকের কেদোর মাইদ্দে গাইড়া গেছে, তখন যতােই মুখ খিস্তি করা, কেন, মুজিবনগর গবর্ণমেন্টের কাছে Appeal করতেই হইবাে। এইটাই দুনিয়ার নিয়ম। আর যদি তােমারে আজরাইলে জাবড়াইয়া বইয়া থাকে, তাইলে তাে তােমার হগুগল মছুয়ার। মউত এই জাদুয়ে বঙ্গালের মাইদ্দেই রইছে। তুমি কলি ছাড়াইবার লাইগ্যা টিরিক্স করলে কী হইবাে, কলি তােমারে ছাড়বাে না।তােমাগাে ল্যাং মারনের হগ্গল কায়দাকানুনই বিক্ষুগুলা হিইক্যা ফেলাইছে। এখনই তাে তােমার হানাদার সােলজারগাে রাইতে বাইরাইন বন্ধ হইছে। হগ্গল সেক্টরে এইসব মুছয়াগগা খালি ঠ্যাং কাঁপতাছে। হেইদিকে আরও বলে হাজারে হাজারে বিচ্ছু তৈরী হইয়া গেছে। এগাে নিশানা কী রকম পইট হের আন্দাজ তােমার পেয়ারা জেনারেল টিক্কা খান আর পিঁয়াজীরে জিগাও। গাছের গুড়ির মাইদ্দে যেমন গেরামের মানুষরা কুড়াল দিয়া কোবায়, অনেকক্ষণ পর্যন্ত ঠাওরই করা যায় না যে,এই গাছটা কাইত হইবাে। হেরপর পয়লা আস্তে, তারপর গড় মড় আওয়াজ কইর‌্যা জমিনের মাইদ্দে হুইত্যা পড়ে- শেষের দিকে কুড়ালের কোবানী আর লাগে না। তােমাগােও হেই অবস্থা। বিছুরা কুড়াল দিয়া কোবাইতাছে- অখন গড় মড় আওয়াজের টাইম আইস্যা গেছে। হেইর লাইগ্যা কইছিলাম, আইতে শাল, যাইতে শাল, হের নাম বরিশাল।

সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল