You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10 | চরমপত্র - সংগ্রামের নোটবুক

অক্টোবর ১৯৭১

ভাইল পটকি। সেনাপতি ইয়াহিয়া খান অখনও পর্যন্ত ভাইল-পটকি মাইর্যাই চলতাছে। বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকায় বিক্ষুগুলার কায়কারবার যতই বাড়ছে, হের ডাইলপটুকি ততই বাড়ছে। খান সা’বে আবার বাঙালি রিফিউজি ফেরত আওনের দাওয়াৎ দিছে। আইজ-কাইল ব্যাডায় রিফিউজিগাে নাম-ধাম ধইর্যা ডাকতে শুরু করছে। শ্যাম চাচায় তারে বুদ্ধি দিছে- পেরতেক মাসেই একবার গলার আওয়াজ খু-উ-ব নরম কইর‌্যা ডাক দিবা। যদি কোনােমতে কিছু রিফিউজি ফেরত আসে, তা হইলেই তাে রাজাকারগাে লুট করার চান্সিং হইবাে। না হইলে যেরকম অবস্থা চলতাছে, তাতে কইর‌্যা বিচ্ছুগুলার গাবুর কোবানীর মুখে তিন টেকা রােজের রাজাকারগাে কন্ট্রোল রাখা খুবই মুস্কিলের ব্যাপার।
আমাগাে বকশি বাজারের ছক্কু মিয়া আকা ফাল পাইড়া উঠলাে, ভাই সা’ব আইজ পর্যন্ত রেডিও গায়েবী আওয়াজ আর ঠ্যাটা মালেকা মিইল্যা রিফিউজি ফেরত আহনের। যে হিসাব দিছে, তাতে তাে পশ্চিম বাংলায় আর রিফিউজি বাকী নাইক্যা। তা হইলে কীর লাইগ্যা মছুয়া সম্রাট ইয়াহিয়া মাসে একবার কইর‌্যা ভ্যা ভ্যা করতাছে? ছক্কর কথা হুইন্যা তাে আমি অক্করে থ’। ব্যায় তাে বাইশ হাজার টাকা দামের কথা জিগাইয়া বইছে। আমি কইলাম, ‘আবে ছকু- এলায় বুঝবার পারছােস যে, গবর্ণরের চাকরি ঠিক রাখনের লাইগ্যা ঠ্যাটা মালক্যায় কি রকম ভােগাছ মারতাছে। বেডা চোখে মুখে মিছা। কথা কয় দেইখ্যাই হের নাম ঠ্যাটা হইছে। এই দিকে বিচ্ছুগুলার ডরে পালের গােদা সেনাপতি ইয়াহিয়া গেল সাত মাসের মাইদ্দেও বঙ্গাল মুলুকে আইতে পারে নাই। গতিকে মালেকায় মছুয়া সােলজার দিয়া ঘেরাও করা গবর্ণমেন্ট হাউসের মাইদ্দে বইস্যা ইচ্ছামতাে কারবার করতাছে। ময়দানে না পাডাইয়াই পঞ্চাশ আর ছেচল্লিশ এই ছিয়ানব্বই জন হারু মালরে খাতা কলমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় Elect কইর‌্যা কি খুশি! খুনী মাওলানা মওদুদীর জামাতে ইসলামের আমীর গােলাম আজম জীবনে টাঙ্গাইলে না যাইয়্যা ঢাকায় বইস্যাই Elect হইছে। মওলবী ছাবরা World-এর মাইদ্দে আর একটা রেকর্ড কইর‌্যা বইলেন।
হ-অ-অ-অ এই দিক্কার কারবার হুনছেন নি? লন্ডনের সানডে টাইম্স মতিঝিলে বিচ্ছুগুলা যে বােমাবাজী করছে তার ফডাে ছাপাইয়া দিছে। ছদর ইয়াহিয়া কি রাগ! ঢাকার গবর্ণমেন্ট হাউসের পােয়া মাইলের মাইদ্দে এই রকম কারবার কেমতে হইলাে? জেনারেল পিয়াজী, ঠ্যাটা মালেকায় কি বইস্যা বইস্যা গাব দিতাছে নাকি? Sunday Times-এর এক সাদা চামড়ার আংরেজ রিপাের্টার বঙ্গাল মুলুকের হগ্গল রিপাের্ট আর পিকচার বগলদাবা কইর‌্যা অক্করে লন্ডনে যাইয়া হাজির। ব্যাডায় লিখছে, খােদ ঢাকা টাউন আর তার আশেপাশে বিক্ষুগুলার বেশুমার কারবার চলতাছে। পরায় আটশ’ বিচ্ছু এই কামের মধ্যে লাইগ্যা পড়ছে। দিকা দিন হেইগুলার লম্বর বাইড়া যাইতাছে।
সাদা চামড়া দেইখ্যা জেনারেল রাও ফরমান আলী অক্করে খুশিতে গুলগুল্লা! ব্যাড়ায় একটুক ঘােরাঘুরি করবার পারমিশন দিছিলাে। ব্যাস্ উচ্ছা কারবার হইয়া গেছে। আংরেজের বাচ্চায় লিখৃখিস্, ঢাকায় মছুয়ারা কতকগুলা কাঠের মিস্ত্রী ধইরা নিয়া রাইত দিন লম্বা লম্বা সাইজের বাক্স বানাইতাছে। হানাদার অফিসাররা পটল তােলনের লগে লগে এইসব বাসের মাইদ্দে কইর‌্যা সব লাশ পাকিস্তানে পাডাইতাছে। পি.আই.এ. লাশ-ঢওয়াইন্যা খেপ মারতে মারতে অস্থির হইয়া উঠছে। Sunday Times-এর রিপাের্টার আর একটা জব্বর কথা কইছে। বঙ্গালা মুলুকে এখন এক লাখ বিচ্ছু ইচ্ছামতাে কারবার কইর‌্যা চলতাছে। যেকোনাে টাইমে যেকোনাে জায়গায় বিচ্ছুরা ঘুইর্যা বেড়াইতাছে। আর মচুয়ারা বাংকারের মধ্যে বইস্যা খালি ইয়া নসি, ইয়া নসি করতাছে। এই দিকে গেল এতােয়ারের রাইতে রেডিও গায়েবী আওয়াজ অক্করে কাপেকাপের কারবার কইরা বইছে। এক ব্যাডায় লেকচার দেওনের টাইমে কইছে, ‘হানাদার সােলজারগাে শ্যাষ পর্যন্ত পালাইতেই হইবাে। এগাে Mind খুবই দুলা। এরা হলেই ভেড়ুয়া মার্কা। কেইসড়া কি?
রাও ফরমান আলী এই রিপাের্ট পাইলে জিলুর সা’বের গতরের চাম্ খুইল্যা ফেলাইবাে। হাজার মাখনবাজী করলেও আর বাঁচতে পারবাে না। এইডারে কয়, কি পােলারে বাঘে খাইলাে। অ্যাঃ অ্যাঃ! এইদিকে ছদর ইয়াহিয়া বঙ্গাল মুলুকের ছিক্রেট রিপোের্ট পাইয়া অক্করে পাগলা হইয়া উঠছে। ঠাস্ কইরা একটা আওয়াজ হইলাে। ডরাইয়েন না, ডরাইয়েন না ছদর সা’বে চেয়ার থনে কাইত হইছিলাে। আল্লায় সারাইছে। জেনারেল পীরজাদা ব্যাডারে ধইরা বইছে। আস্তে কইর‌্যা ফাইল খুইল্যা দ্যাহে কি? রংপুর, দিনাজপুর, সিলেট ও কুমিল্লা সেক্টরে তুফান বাইড়া-বাইড়ি কারবার শুরু হইয়া গেছে। মছুয়া সােলজার ভাগােয়াট হইয়া গতরের কাপড় খুইল্যা কইতাছেকভি নেহী ম্যায় পাকিস্তান Army কা জওয়ান থা। ম্যায় তাে’ Businessman হুঁ। এইসব ভাগােয়া সােলজারগাে ধরনের লাইগ্যা জেনারেল পিয়াজী আবার একটা ছিক্রেট Department খুলছে। কেমন বুঝতাছেন? হেগাে কায়কারবার অখন কোন স্টেজে যাইয়া খাড়াইছে।
এদিকে ঢাকা টাউনের মাইদ্দে অবিরাম বােমাবাজির কারবার শুরু হইয়া গেছে। বিসমিল্লাহ বইল্য ভােটার ছাড়া তেলেসমাতি মার্কা Election-এর রিপাের্ট বাইরাইনের লগে লগে শান্তিনগরের Election অফিসে কি যেন একটা বিতিকিচ্ছি ব্যাপার হইয়া গেছে। বিচ্ছুরা একটু ঘষাঘষি কইরা দিছে। একজন খতম হওন ছাড়াও অফিসের কাগজপত্র শ্যাষ। পােলাপানরা জেনারেল পিয়াজীর লগে আইজ-কাইল জোর গােল্লাছুট খেলা খেলতাছে।
টাই-ই-ই-ই। কিছু না, কিছু না। স্টেট ব্যাংক বিল্ডিং-এ বােমা ফাটলাে আর একটা জুট মিল-এ কি জানি কি হইলাে। টাই-ই-ই-ই। গবর্ণর হাউস থনে ঢিল মারলে লাগ পাওন যায়, হেই টেলিভিশন স্টেশনে বিচ্ছুরা একটা Normal কারবার করলাে। ২৮শে অক্টোবর মনিং নিউজ কাগজে এই খবর না ছাপাইয়া S.G.M. বদরুদ্দিনের কি কান্দন। টাই-ই-ই-ই। কি হইলাে? কি হইলাে? ২৭শে অক্টোবর পােলাপানরা গবর্ণমেন্ট হাউসের বগলের পেট্রোল পাম্পড়া ডাবিস্ করলাে। ঠ্যাটা মালেক্যার কি কাঁপন? মনে লয় আজরাইল ফেরেশতা হের দিকে হাত বাড়াইছে। আঃ হঃ আবার কি হইলাে? হরিবল হক চৌধুরীর পাকিস্তান অবজার্ভার পরচার মাইদ্দে ২৭শে তারিখে ছাপাইছে জুরাইনের ম্যাচ ফ্যাক্টরি গুড়া হইয়া গেছে। | হ-অ-অ-অ একই টাইমে কম্যান্ডাররা স্টোভ ফ্যাক্টরি Burst করছে। বিচ্ছুগুলা মানুষ
জ্বীন? এইগুলা ঠ্যাটা মালেকা আর পিয়াজীর জিলা বাইর কইরা ছাড়ছে। এছাড়া মােনাইম্যা Murder, মেডিকেল হােস্টেলের সামনে তিনজন রাজাকার Murder, হরিবলের প্যাকেজেস ইন্ডাষ্ট্রি শ্যাষ করণের কথা তাে কওয়াই হয় নাইক্যা। হের লাইগ্যাই কইছিলাম ডাইল-পটুকি। একটার পর একটা কুফা খবর পাওনের গতিকেই সেনাপতি ইয়াহিয়া খান ডাইল-পটুকি মারতাছে।

সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল