You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.28 | চরমপত্র - সংগ্রামের নোটবুক

২৮ অক্টোবর ১৯৭১

লাহুর-ঢাকার থনে আবার কড়া কিসিমের খবর আইছে। অখন হেগাে মাইদ্দে তুফান মাইর পিট লাইগ্যা গ্যাছে। কনভেনশন মুছলমান লীগের বঙ্গাল মুলুকের পেরধান শামছুল হুদারে পাকিস্তান মুছলমান লীগের পাঞ্জাবি ছেক্রেটারি মালিক মােহাম্মদ কাশেম্যায় আকা ডিশমিশ কইরা বইছে। শামছুল হুদাও কম যায় নাইক্যা। ব্যাডায় কইছে যেইখানে মুছলমান লীগের কাউন্সিলরা আমারে Elect করছে, হেইখানে Working Committee-র ডিশূমি করনের কোনাে ক্ষেমতাই নাইক্যা। এই কথা না। কইয়া হুদা সা’বে ঢাকায় খাওয়াজা হাছন আসকারী সাবের শাহবাগের জমিনের উপর তৈরি করা মুসলমান লীগের বিল্ডিং আর অফিস দখল কইর‌্যা বইছে। মাইর খাওনের চান্সিং হওনের গতিকে মালিক মােহাম্মদ কাশেম্যায় তার লিডার ফকা, চৌধুরীর লগে। চুপচাপ একটা হােটেলের মাইদ্দে মিডিং করছে। হেরপর ফকায় কইছে শামছুল হুদার মেম্বারশিপ পর্যন্ত কেনচেল কইরা দিলাম। আমাগাে পাতলা খান গল্লীর মেরহামত মিয়া খস্ খস্ কইরা ঠ্যাং খাউজাইয়া কইলাে, ভাইসাব, বাঙালিরা তাে’ চুয়ান্ন সালের Election-এর টাইমেই মুছলমান লীগরে ঘাউয়া বানাইয়া থুইছে। তা হইলে হগল Election-এ ডাব্বা মাইরাও এই ব্যাডারা চলতাছে কেমতে? আর এই মুসলমান লীগের মাইদ্দে এতােগুলা ভাগাভাগি হইলাে কেমতে? | মেহামত মিয়ার Brain আইজ কাইল খুবই খাতাই হইতাছে। বেড়ায় অখন History জানবার চাইতাছে। তয় কইতাছি। খেয়াল কইরা হুনিস্। সেনাপতি ইয়াহিয়া খানের ওস্তাদ আইয়ুব খান আটান্ন সালে মেসিনগান-কামান দেখাইয়া ক্ষেমতা দখল করণের পর হগুগল পাট্টি বেআইনী কইরা থুইলাে। বচ্ছর কয়েক বাদে মওলবী সাবে। খাতির জমা কইরা Power-এর থাকনের লাইগ্যা করাচীতে সমুন্দরের পাড়ে শরাবন তহরার ফোয়ারা দিয়া মুছলমান লীগরে জিন্দা কইরা নিজেই এইডার পেরধান হইয়া বইলাে। এইডারই নাম হইতছে কনভেনশন মুছলমান লীগ। কিন্তু পাঞ্জাবের মিয়া মমতাজ মােহাম্মদ খান দৌলতানা, মাইনকাচরের আবুল কাসেম্যা আর কুমিল্লার দাড়িকুল ইসলামে মিল্য দুই লম্বর কাউন্সিল মুছলমান লীগ বানাইয়া বইলাে। আগায় খান। পাছায় খান পেশােয়ারের খান আব্দুল কাইয়ুম খান দেখলাে হেরে কেউ পােস্ট দেয় নাইক্যা। তাই অন্য কেউ যাতে কইর‌্যা পরে হের পাট্রিডারে কাইড়া নিতে না পারে, হেইর লাইগ্যা নিজের নামেই একটা মুছলমান লীগ খুইল্যা বইলাে। এইডা এই যেমন লাগে ফুলবাড়িয়া হাটের মাইদ্দে ছালা পাইত্যা একটা আদা-রশুনের দোকান খুইল্যা বইলাে আর কি? এই তিন লম্বরের নাম হইতাছে কাইয়ুম মুছলমান লীগ।
কনভেনশন মুসলমান লীগের ফাটাফাটি কাথা তাে আগেই কইছি। এলায় কাউন্সিল মুছলমান লীগের ক্যাচকা মারামারির History কইতাছি। আসলে এইডা হইতাছে দুইজনে তিনডা পাট্টি। আঃ হাঃ! আগেও একদিন কইছিলাম। আইজ Reference আইলাে বইল্যা কইতাছি। ঠ্যাটা মালেকার মিনিস্টার ছলু মিয়ার হইতাছে One Man পাটি। হেতােনেই গােল কিপার আবার হেতেনেই সেন্টার ফরােয়ার্ড। কিন্তুক কাউন্সিল মুসলমান লীগের কাসেম্যায় একজন পাট্টি আবার দাড়িকুল ইসলাম একজন পাটি । দুইজন একলগে বইলেই Number থিরি পাট্টি। কাসেম্যা ভােগা মাইরা ঠ্যাটা মালেক্যার মিনিস্টার হওনের পর দাড়িকুল ইসলাম কি রাগ? হেশে গেনজাম করবাে দেইখ্যা দাড়িকুলরে আমেরিকা সফরে পাড়াইছে। এইদিকে কাইয়ুম মুসলমান লীগের মহা কেলেংকারিয়াস ব্যাপার হইয়া গেছে। রংপুরের ন্যাশ’ কাদের, ময়মনসিংহের হাসিম উদ্দিনের লগে মিইল্যা আঙ্কা কাইয়ুম খানরে ধুম গাইল। এইসব গাইল পশতুতে তর্জমা হওনের লগে লগে ইচিশতে উ না খুরী বুদামের কারবার হইয়া গেছে। কাজী কাদের আর হাশিম উদ্দিন তিন লম্বর মুছলমান লীগ থনে অক্করে গেট আউট হইয়া গেছে। আমাগাে ঢাকার নবাব ফেমেলির থুড়ি হাটখােলা রােডের ন্যাশ’ কাদের অখন টের পাইছে যে খুলনার ছবুর সা’বে পর্দার পিছন থাইক্যা জব্বর খেইল করছে।
বেডায় কাদের আর হাশিম উদ্দিনের তােপের মুখে ঠেইল্যা দিয়া পিছন থনে কাডিং করছে। কাদের্যায় কি রাগ? একটা লম্বা Statement দিয়া কইছুইন, খান ছবুর অনেক দিন থাইক্যাই ডাবল গেম খেলতাছে। এই বারের Election-এ আওয়ামী লীগ জেতনের পর ছবুর সা’বে একটুক লাইন করণের টেরাই নিছিলাে। কিন্তুক হেরে আওয়ামী লীগওয়ালারা অক্করে ধাওয়াইয়া খেদাইছে। ন্যাশ’ কাদের আর হাশিমউদ্দিন পানিতে পড়ছে দেইখ্যা, ভুট্টো সাবের পিপিপি পাট্টির মাওলানা কাওসার নিয়াজী দুই ব্যাডারে Certificate দিয়া কইছে, বঙ্গালমুলুকের এই দুইজন লেতাই হইতাছে। সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী- হেরা ppp তে Join করবাে। খবরের কাগজে এই রিপাের্ট দেইখ্যা দুই মিয়ার চক্ষু অক্করে টেরা হইয়া গেছে। চিল্লাইয়া উঠছে না-না-না; আমরা সমাজতন্ত্রী নই, আমরা চাইর লম্বর মুছলমান লীগ বানাইতাছি। ছক্ক আঙ্কা গলার মাইদ্দে খ্যকরানী মাইরা কইলাে, যেমন মনে লইতাছে ঈদুল ফেতরের আগেই হালি দুয়েক মুছলমান। লীগ তৈরী হইবাে। কিন্তু Election-এর Result তাে গােল্লার লগে গােল্লা যুগ করলে গােল্লাই থাকে।
হ-অ-অ-অ এই দিকে ভুট্টো সা’বে আবার একটা ডেইনগারাস্ কাথা কইছে। জুলফিকার আলী ভুট্টো কইছে, ইলেকশনের টাইমে সেনাপতি ইয়াহিয়া খান দল ভারী করণের লাইগ্যা কাইয়ুম খাঁরে বিশ লাখ টাকা দিছিলাে। লগে লগে কাইয়ুম খানের পাঠান ঘেটু লুন্দােের, লাহুরের হীরামন্ডিতে সাংবাদিক সম্মেলনে চিল্লাইয়া উঠছে, এইডা। অক্করে বানােয়াট মিছা কথা- ঝুট বাত্। ভুট্টো সা’বে Drink কইরা উল্ডা পান্ডা করতাছে। অল্প পানিতে পুঁটিমাছ খুব ফরফর করে। খুনী মাওলানা মওদুদীর জামাতে ইসলামীর গােলাম আজম বায়তুল মােকাররমের সামনে চাইরশ’ জনের একটা বিরাট Public মিডিং-একইয়া বইছে, ‘পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ভুট্টো আসলে Anti Pakistani। ক্ষেমতায় যাওনের লাইগ্যা এই বেডায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যেকোনাে কাম পর্যন্ত করতে পারে। | ব্যাস কেইস খুবই খারাপ। পিপলস পাটির কাওসার নিয়াজী তারিখে ইস্তেকলাল পাটির এয়ার মার্শাল আসগর খানের লগে সুর মিলাইয়া কইছুইন, বঙ্গাল মুলুকে রাজাকাররা স-অ-ব হইতাছে গুণ্ডা, বদমাইশ আর খুনীর দল। জামাতে ইসলামওয়ালারা। এগাে দলের মেম্বার কইরা রাজাকার বানাইছে। হেইদিকে ডেরা ইসমাইল খানের। ১৭জন পিপিপি লেতা এক Statement দিছে, দলে দলে বুড়া আইয়ুব খানের Supporter বা পিপল্স পাট্টিতে ঢুইক্যা পড়ছে। এগাে লাত্থাইয়া খেদাইতে হইবাে।
এ্যাঃ এ্যাঃ! এইদিকে জমিয়তে ওলেমার মওলানা শাহ মােহাম্মদ নুরানী সেনাপতি ইয়াহিয়া খানের কাছে দরবার দিছে, এই মুহূর্তে কাদিয়ানী এম.এম. আহম্মদকে খেদাইতে হইবাে। আর কাফের কর্ণেলিয়াসরে দিয়া শাসনতন্ত্র বানানাে না জায়েয কারবার হইবাে। এইসব মহা গেনজাম কারবারের মাইদ্দে হগগলের উপর টেক্কা মারছে। লাড়কানার লাড্ড ভুট্টো। বেড়ায় ফরিনে যাওনের আগে এক মিডিং-এ Declare করছে ২৭শা ডিসেম্বরের মাইদ্দে পার্লামেন্ট না ডাকলে কেইস খুবই খারাপের দিকে যাইব।’ কেমন বেডা একখান!
এই ছকু হেগাে মাইদ্দে ফাটাফাটি আর গেনজামের কথা হুইন্যা হা কইর‌্যা রইছাে কীর লাইগ্যা? বুঝছেস্ সেনাপতি ইয়াহিয়া এই হগল পাটিরে এক কইর‌্যা বিচ্চুগাে লগে পাইট করণের হপন দেখতাছে।
হেইদিকে তাে’ নরায়ণগঞ্জের কালীরবাজার আর মুন্সীগঞ্জের গাজুরিয়ায় বিক্ষুগুলার গাজুরিয়া মাইর আরম্ভ হইয়া গেছে। পশ্চিম দিকে সাতক্ষীরা, সুন্দরবন, গােপালগঞ্জ, গৌরনদী, বানারীপাড়া এইসব এলাকায় বিক্ষুরা গরু খোজা কইর‌্যাও আইজ-কাইল আর মছুয়া পাইতাছে না। অক্করে ধলি। সব মছুয়াই অখন ভাগােয়াট কারবারের মাইদ্দে পড়ছে। কসবা, শালদিয়া, কুমিল্লা, ফেনী, চৌদ্দগ্রাম, ময়নামতির হেইমুড়া খালি কারবারের পর কারবার চলতাছে। মছুয়ারা কিল মারতে আইলেই বিচ্চুগাে হাতে গাবুর সাইজের থাপ্পড় খাইতাছে। গুতাইতে আইলেই লাথি খাইতাছে, চিরকি হইলেই মেরামত হইতাছে। সিলেটের হাওড় এলাকায় মছুয়ারা গেলেই হাওয়া হইয়া যাইতাছে। রংপুর-দিনাজপুরের একই কারবার চলতাছে। আজরাইল ফেরেশতা অখন নতুন কেতাব বানাইয়া তুফান দৌড়াদৌড়ি করতাছে। খালি অমুক খান, তমুক খান, ডট ডট খান গয়রহ শিয়ালকোট, লাহুর, মন্টগােমারী-পিন্ডি লিইখ্যা থুইতাছে। আর সেনাপতি ইয়াহিয়া সােবেহ সাদেকের টাইমে আজানের সুরে খালি তার ফরিন গার্জিয়ানগাে ডাকতাছে। | কিন্তুক বিক্ষুগুলার গাবুর বাড়ি যখন একবার শুরু হইছে তহন এউগুলারে থামাইবাে কেডায়। হে মছুয়া সম্রাট ইয়াহিয়া, সাতমাস ধইর্যা বহুত ট্রিক্স করছিলা- InternalExternal কত কিছু? অখন তাড়াতাঢ়ি কইর‌্যা পােলার হাংগা দিয়া মক্কায় যাওনের বুদ্ধি করলে কি হইবাে? বঙ্গাল মুলুকের ক্যাদো আর প্যাকের মাইদ্দে যে সব মছুয়া ঠ্যাং হান্দাইছে তাগাে বাঁচাইবাে কেডায়? হেইর লাইগ্যাই কইছিলাম, লাহুর আর ঢাকার তনে আবার কড়া কিসিমের খবর আইছে।

সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল