৬ আগস্ট ১৯৭১
মহব্বত করকে ভি দেখা মহব্বত মে ধােকা হ্যায়! দালালী করকে দেখা দালালী মে ভি ধােকা হ্যায়! যা ভেবেছিলাম তাই-ই হয়েছে। ইসলামাবাদ থেকে লন্ডন আর ওয়াশিংটনে ভয়ানক দুঃসংবাদ যেয়ে পৌঁছেছে। জঙ্গী সরকার লন্ডন আর ওয়াশিংটন থেকে তাদের দুই দালাল মহারাজকে ডেকে পাঠিয়েছে। এ দুজন হচ্ছে রাষ্ট্রদূত আগা হিলালী অর ছলেমান আলী। দালালীর পর দালালী কইরাও এই দুই ব্যাড়ায় রক্ষা পাইলাে না। হেগাে টাইম হইয়া গেছেগা। ফেরৎ আহনের লগে লগে এই দুইডারে গুদামে তুইল্যা রাখা হইবাে। আগা সা’ব আমেরিকায় আর ছলেমান সা’ব ইংলন্ডে খবরের কাগজ, রেডিও আর টেলিভিশনগুলারে কন্ট্রোলের মাইদ্দে আনতে পারে নাইক্যা। এইসব খবরের কাগজ রেডিও আর টেলিভিশনে কসাই যেমূতে কইর্যা খাসীর চাম ছিলে, হেমতে কইর্যা সেনাপতি ইয়াহিয়ার জঙ্গী সরকারের উপর কারবার করতাছে। সকালদুপুর-বিকাল-রাইত খবরের কাগজ খােলেন, রেডিও শােনেন কিংবা টেলিভিশন দেখেন- এ কারবার জঙ্গী সরকাররে তুলা ধােনা করতাছে। মুক্তি বাহিনীর বিচ্ছুগুলার খবর ফটো দিয়া ছাপাইতাছে। আর ইংরাজিতে যে গালাগালি করতাছে হেইগুলারে একত্র করলে নতুন কিছিমের কেতাব তৈরী হইবাে।
এছাড়া ছৈয়দ বজ্জাত হােসেন, ডাঃ হাসান জামান থাইক্যা শুরু কইর্যা হাজব্যান্ড ওয়াইফ His second, Her first মানে কিনা ইপিআইডিসির ছামছুল হুদা চৌধুরী, লায়লা আর্জুমান্দ বানু পর্যন্ত যে চিডিটার মাইদ্দে দস্তখত করছিল, সেই চিডিটা বিলাতআমেরিকার একটা খবরের কাগজেও ছাপা না হওনের গতিকেই আগা হিলালী আর ছলেমান সা’বের কপাল পুড়ছে। এর মাইদ্দে আবার একটা সিংহাতিক কারবার হইয়া গেল। লন্ডন, ওয়াশিংটন আর নিউইয়র্কে জঙ্গী সরকারের দূতাবাস থেকে দলে দলে বাঙালি অফিসাররা বেরিয়ে এসে সেখানকার মার্কেট গরম করে ফেললাে। এই ব্যাপারেও আগা হিলালী আর ছলেমান সাবের গুনাহ-এ-কবিরা হইয়া গেল। কেন হেতনরা বাঙালি অফিসারগাে ঠ্যাকাইয়া রাখতে পারলাে না?
ব্যস, লেঃ জেনারেল মােহাম্মদ ইউসুফের ডাক পড়লাে। সেনাপতি ইয়াহিয়া এইবার লন্ডনে ইউসুফ সা’বরে পাডাইবাে বইলা ঠিক করছুইন। আহ্ হাঃ। ইউসুইপ্যারে চিনলেন না? হেই যে মেম সাব কসবি ক্রিশ্চিয়ান কিলারের দালাল ইউসুফ, এইডা হেই ইউসুইপ্যা। হেতনে আগেও একবার লন্ডনে হাইকমিশনার আছিলাে হেই সময় ইয়াহিয়ার ওস্তাদ আইয়ুব খানরে আলতাফ গহরের লগে বুদ্ধি কইর্যা একটা পুকুরের মাইদ্দে কিলারের লিগ জলকেলী (থুক্কু) পানিকেলী করতে দিছিলাে। ক্যামন বুঝতাছেন? সেনাপতি ইয়াহিয়া অহন কি ধরনের কারবার করণের লাইগ্যা রাস্তা করতাছে।
দালালের বহুত রকমফের রইছে। একেক রকমের দালাল একেক কামে লাগে। কিন্তুক, কাম শ্যাষ হওনের লগে লগে দালালরা নারিকেলের ছিবড়ার মতাে রাস্তা আর নালার মাইদ্দে পইড়া থাকে। না হইলে বিক্ষুরা হেইকাম কইর্যা দেয়। দালাল কত রকমের আছে জানেন। পরায় তেইশ রকমের দালাল রইছে। এইগুলারে আনি দুয়ানি খুচরা কইতে পারেন। এর মাইদ্দে কাড়ুয়া-দালাল, নিম-দালাল, আতি-দালাল, পাতিদালাল, ঘেটুদালাল, চাচা-দালাল, উপ-দালাল, এছলামী-দালাল, রাজাকার-দালাল, ইউ.জি. দালাল, আর ফুককে দালাল গাে আইজ-কাইল একটু বেশি রকম চিরকিৎ হইছে। এছাড়াও রইছে দালাল সম্রাট আর দালাল মহারাজ। অহন কয়েকটা উদাহরণ দিলেই বুঝতে পারবেন। যেমন ধরেন ঘেটু-দালাল- রংপুরে আবুল কাশেম। আদি বাড়ী আসামের মাইনকার চরে। চাচা দালাল-জয়পুর হাটের আব্বাস আলী। আদি বাড়ী পঃ বাংলায়। রাজাকার-দালাল- পাবনার ক্যাপ্টেন জায়েদী। ইন্ডিয়ান রিফিউজি। ইউ জীদালাল- এগাে পরায় সবাই খবরের কাগজে কাম করে। কিন্তু বেনামীতে লিইখ্যা মালপানি কামাইতাছে- যাউকগা আইজ আর হেগাে নাম কইলাম না।
এসলামী দালাল- ইসলামের যম, গােলাম আজম। চামচা-দালাল- আলহাজ্ব জহির উদ্দিন- আদিবাড়ী কলিকাত্তায়। ফুচকে-দালাল- ভেরবের এস.বি. জামান- ব্যাডায় কি জানি একটা খ্যাডামেডা কারবারের মাইদ্দে পইড়া Arrest হইয়া গেল নাকি? নিমদালাল- হরলিক্সের বােতল ছৈয়দ ছামাদ হােসেন। বাড়ী আসামের হেই দিকে। কাডুয়া-দালাল-পাকিস্তান অবজার্ভারর মাহবুবুল হক, চো পাজামা মাহমুদ আলী। আর দালাল সম্রাট ফকা-ফরিদ, খাজা খায়ের, সবুর গয়রহ্ ওহ্ হাে দালাল মহারাজগাে কথা। কই নাই। নাঃ। হেইডার মাইদ্দে কো-অপারেটিভ ব্যাংকের টাকা মারুইন্যা গােপালগঞ্জের ঠাণ্ডা মিয়া আর এ্যালেন বেরীর ড্রাম হরিবল হকের মতাে লােক রইছে।
এই দিকে আর একটা কারবার হুনছেন নি? ঢাকার রমনায় বেইলী রােড ধইর্যা। যাইতে থাকলে আকা দেখবেন একটা বাড়িতে কোনাে নম্বর নাইক্যা। এই লালদোতলা এগারাে নম্বর বাড়িতে আইজ-কাইল তেলেসমাতি কারবার হইতাছে। এইখানেই দুইডা হেই জিনিষের অফিস- একজন হইতাছে কর্ণেল মুখতার সাইয়িদ, আর একজন মেজর নাসের। মনে পড়ছে? মনে পড়ছে? এই দুইজনাই ভােগা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় সাক্ষী তৈরী করছিল। এইবারও মেলেটারি ইনটেলিজেন্সের এই দুই ব্যাডায় বঙ্গবন্ধুর মামলার জন্যি ১১ নম্বর বেইলী রােডে বইস্যা বিলাফ সাক্ষী বানাইতাছে। হেইখানে খবরের কাগজের একেক জন রিপাের্টার আর ফটোগ্রাফাররে লইয়া যাইয়া পাঁচ-ছয় পৃষ্ঠা টাইপ-করা কাগজের মাইদ্দে সি.আর.পি.সি-র ১৬৪ ধারা মতাে দস্তখত লইয়া পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠাইবার ব্যবস্থা করতাছে। ঢাকার খবরের কাগজের এডিটররা এই অফিসে বইস্যা কাডুয়া-দালালী করতাছে। হেরা কইয়া দিতাছে যে পেরতেটা Statement-এর মাইদ্দে ফলসিং কইর্যা হইলেও কইতে হইবাে আওয়ামী লীগওয়ালারা পয়লা মার্চ থাইক্যা ২৫শে মার্চ পর্যন্ত খুবই অত্যাচার করছে না হইলে কেইসটা ঠিক মতন সাজানাে যাইবাে না। ক্যামন বুঝতাছেন হেগাে কারবার-সারবার?
হ-অ-অ-অ। এই দিকে বিচ্চুগাে কারবার হুনছেন নি? সিলেট টাউনে ১৪ই আগষ্ট ডেপুটি কমিশনারের অফিসের উপর পপত্ কইর্যা বাংলাদেশের ফ্ল্যাগ উড়তাছে। সুনামগঞ্জ টাউনেও হেই কারবার। কেইস কি? বিচ্ছুগুলার ডরে আইজ-কাইল রিক্সার টায়ার ফাটলে পর্যন্ত আওয়াজের চোটে মছুয়াগুলা হাতের মেশিনগান মাডিতে থুইয়া দুই হাত উপরে তুইল্যা খাড়াইয়া পড়ে। How to surtrender? মানে কিনা কেতে মাফ চাই মহারাজ কইতে হয়, এর একটা স্পিশিল ট্রেনিং হওনের পর এই রকম কারবার শুরু হইছে। পরায় সাড়ে চাইর মাস ধইর্যা টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহের মধুপুর জঙ্গলের আশেপাশে যাওনের জন্য যতবার মছুয়াগুলা টেরাই করছে, ততবারই বিচ্ছুগুলার গাবুর মাইরের মুখে ফাতাফাতা হইয়া অহন আসমান দিয়া যাইয়া জঙ্গলে খামুখা বম্বিং করতাছে। মুক্তি বাহিনীর গেরিলাগুলা বাংকারের মাইদ্দে বইস্যা হাসতাছে।
আর ঢাকা টাউনে বিচ্ছুগুলার টেস্টিং কারবারে টিক্কা সা’ব ১৪ই আগস্ট পুলিশমেলেটারির প্যারেড বাদ দিয়া গুণ্ডা সমাবেশ থু রাজাকার সমাবেশের ব্যবস্থা করছেন। এই দিকে বিচ্ছুগুলা যেভাবে মালীবাগ আর সিদ্দিরগঞ্জের পাওয়ার স্টেশন ডাবিশ করছে, হেইডা যাতে মাইষে টের না পায় তার জন্যে নয়া মামু-শ্যাম চাচাগাে কাছ থনে পাওয়া জেনারেটর ট্রাকের উপর বহাইয়া ঢাকা-কুর্মিটোলায় ঠ্যাকা কাম চালাইতাছে। হেইদিন তাে ঢাকার Hotel Intercontinental-এ একটা ছেরাবেরা কারবার হইছে। জেনারেল পিয়াজীর Prestige অঙ্কুরে ঢিলা হইয়া গেছে। মেলেটারি ঘেরাও করা হােডেলডাতে হাত বােমার ঠ্যালায় একজন আমেরিকান ছাড়াও ১৯জন মছুয়া জখমি হইছে। আমেরিকার টাইম ম্যাগাজিনের মিঃ ডেভিড গ্রীণওয়ে বিক্ষুগুলার এইরকম কারবার না দেইখ্যা অক্করে তাজ্জব বইন্যা গেছেন। ভিয়েতনামের সাফান আর ঢাকা টাউনের মাইদ্দে কোনােই ফারাক নাইক্যা। ছুঃ মন্তর ছুঃ । দিনে সােলজার রাইতে বিছু।
সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল