১১ জুলাই ১৯৭১
হামাম দিস্তা। হামাম দিস্তার মাইদ্দে দেশী হেকিম-কবিরাজ যেমতে গাছ-গাছড়া থ্যাঙ্ক্ষা কইর্যা ছত্রিশা মহাশক্তি জীবন রক্ষা বটিকা’ বানায়, হেই রকম সেনাপতি ইয়াহিয়ার জঙ্গী সরকার অহন ক্যাম্তে জানি হামাম দিস্তার মধ্যে থ্যালা হইতাছে। সেনাপতি ইয়াহিয়ার জঙ্গী সরকারের অবস্থা অহন অক্করে ক্যাডাবেরা হয়ে গ্যাছেগা। খালি কলসের আওয়াজ বেশি। তাই জঙ্গী সরকারের চোপার চোটপাট আইজ-কাইল খুবই বাড়ছে। পশ্চিম পাকিস্তান আর বাংলাদেশের দখলকৃত এলাকার সংবাদপত্রের উপর গত তিন মাস ধরে পুরা সেন্সরশিপ জারি রেখে এখন পশ্চিমী দেশগুলাের রেডিও টেলিভিশন আর খবরের কাগজের উপর হেতাইনরা খুবই চ্যাছেন। এর মধ্যেই ইয়াহিয়া সরকার ব্রিটেনকে জানিয়েছে যে, ব্রিটিশ হুকুম যদি হেইখানকার পরচা, টেলিভিশন, বিবিসি আর পার্লামেন্টের মেম্বরগাে কন্ট্রোলের মাইদ্দে না আনতে পারে, তা অইলে খুবই খারাপ একটা কিছু হইতে পারে। ইংলিশস্থানের লগে তাগাে যে Connection রইছে হেইডা পাংচার করতে পারে। একশ বিশ ঘণ্টার মাইদ্দে ইসলামাবাদ দুই নম্বর ছাড়ছেন। মানে কিনা দুইটা Warning দিছেন। ডর-ভয়, লজ্জা-শরম হেগাে সব গ্যাছেগা। হেরা খেল বর্মন অইছেন।
কি কইলেন? খেল বর্মন কেডা তা চেনেন না? তয় কই হােনেন- এর মাইদ্দে পঁচাগড়-ঠাকুরগাঁ গেছিলাম। হেইখানে খেল বর্মনের লগে দেখা। হের সমস্ত মুখের মাইদ্দে একটা মাত্র দাঁত রইছে।
হেরে জিগাইলাম, আপনার নাম? একটা ফোকলা হাসি মাইরা কইলাে, ‘মােকতাে মাইনষে খেল বর্মন কহি ডাকে। তােমরাও লা খেলই কহিবা পারেন। | আমি আবার জিগাইলাম আপনার বয়স?”
এইবার মােক্ষম জবাব আইলাে তােমরা লা লেখাপড়া শিখিছেন, তােমরা গেট মেট ইংরাজী কহিবা পারেন। তােমরা এতাে কিছু জানেন তাে মােক দেখি মাের বয়স কহিবা পারেন না? মুই তাে নেখাপড়া শিখি নাই, মুই ক্যানে বয়স কহি?”
এলায় খেল বর্মনের চিন্ছেন, কেমন মাল একখান?
সেনাপতি ইয়াহিয়া অহন খেল বর্মন অইচে। বিদেশী সাংবাদিক, পার্লামেন্ট সদস্য, বিশ্ব ব্যাংকের মেম্বর আর জাতিসংঘের প্রতিনিধি যারাই তাকে বাংলাদেশের গণহত্যার কথা জিজ্ঞেস করছেন, তাঁদেরই তিনি বলছেন, আপনারা হিটলার-মুসােলিনীতােজো’র কারবার দেখছিলেন আর ভিয়েতনাম কাম্বােডিয়ার খেইল দেখতাছেন। আপনারা আমারে দেইখ্যা Understand করতে পারেন না বাংলাদেশে হেগাে ঠাণ্ডা করণের লাইগ্যা আমি কতটুকুই বা করতে পারি?’
কোরবানীর গরুর যেমন দাঁত দেইখ্যা বয়স আন্দাজ করে, হেই রকম ইয়াহিয়ার কাটা-কাটা কথা হুইন্যা হগলেই কারবারটা বােঝনের লাইগ্যা একবার কইর্যা বাংলাদেশে আইছিল।
তারপর, বুঝতেই পারতাছেন। World Bank-এর মিঃ কারঘিল কইছেন। ইসলামাবাদের জঙ্গী সরকারকে আর এক পহাও দেয়া যায় না। বৃটেনের প্রাক্তন মন্ত্রী আর্থার বটলী বলেছেন, পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্য যে কাণ্ড করে চলেছে, তা জিন্দেগীতেও হুনি নাই বা দেহি নাই। টিক্কা খানের Upper chamber খালি। আর সেনাপতি ইয়াহিয়া একজন ক্ষমতালােভী জেদী মানুষ। ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল দলীয় সদস্য মিঃ জেসেল বলছেন, একজন রিফিউজিরেও দেশে ফেরনের কথা কওন যায় না। ব্রিটিশ শ্রমিক দলীয় সদস্য মিঃ স্টোন হাউস বলেছেন, ইয়াহিয়ার হানাদার বাহিনী বীভৎস গণহত্যায় হিটলারকেও ছাড়িয়ে গ্যাছে। লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকা বলেছে, নৃশংসতাই হচ্ছে পূর্ব বাংলার নিত্যকার ব্যাপার। নিউজ উইক হগুগলের উপর টেক্কা মারছে। এই আংরেজী পচা মে লিখুখি, টিক্কা খানের রক্তস্নান। এদিকে বিবিসি নিউইয়র্ক টাইমস্, ওয়াশিংটন পােস্ট, ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর আর লন্ডন টাইমস্ পত্রিকা ধােপ যেতে নদীর ঘাটে কাঠের উপর কাপড় বাইড়ায়, হেতে কইরা জঙ্গী সরকাররে বাইড়াইতেছে। কানাডার পার্লামেন্টের মেম্বর মিঃ এ্যানড্র ব্রুডইন আর আইরিশ এম.পি. মিঃ কোনার্ড ও ব্রায়েন জাতিসংঘরে দিয়া ইয়াহিয়া সরকাররে মেরামতের কথা কইছেন।
এতাে সব কারবার হইতাছে দেইখ্যা সেনাপতি ইয়াহিয়া এলায় টিরিক্স করছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দালাল শিরােমণি ডাঃ সাজ্জাদ হােসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাঃ দীন মােহাম্মদ আর ডাঃ মােহর আলীরে নিউইয়র্ক পাডাইছেন। কিন্তু আমাগাে বাঙালি পােলাপানেরা হেগাে হােডেলের মাইদ্দে ঘেরাও কইর্যা থুইছে। হেই খবর পাইয়া পাকিস্তানের প্রাক্তন ফরিন মিনিস্টার হরিবল হক চৌধুরী ইউরােপে যাইয়া লাপাত্তা হইছেন। উনি আবার ফরিনে খুব পপুলার কিনা? আর পশ্চিম পাকিস্তানের রুস্তম ভুট্টো সাবে পিপলস পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি জে,এ, রহিমরে বগলদাবা কইর্যা তেহরান গেছেন। কিন্তুক এই লােকগুলাের সার্টের মাইদ্দে এখনও রক্তের দাগ রইছে। তাই হেতাইনরা Silent work মানে কিনা U.G. work করতাছে। না হইলে মাইনষে যদি গতরের মাইদ্দে থু দ্যায়।
এদিকে আবার ধূকর যেমতে কইর্যা লেহাপ বানানাের সময় তুলা ধধানে, ঠিক হেতে কইর্যা মুক্তিফৌজের গেরিলারা ইয়াহিয়ার সােলজারগাে দূতাছে। ব্রিটিশ এম.পি. মিঃ জন স্টোন হাউস আর পশ্চিম জার্মানির স্টেট মন্ত্রী ডঃ আর্নেষ্ট হেইনসেন তি জুলাই বাংলাদেশের মুক্ত এলাকা সফর করেছেন। মুক্তিফৌজরা তাগাে পাসপাের্টের মাইদ্দে বাংলাদেশ গবর্ণমেন্টের সিল মাইর্যা লগে কইর্যা যহন ভিতরে নিয়ে গেছে, তহন হেরা তাজ্জব বইন্যা গ্যাছে। গ্রামের মাইনষে মেহমান গাে জয় বাংলা’ আর ‘শেখ মুজিব জিন্দাবাদ’ কইয়্যা ওয়েলকাম করছে। হের পর হেরা একটুক Action দেখছে। মারই রে মাইর! বাংলাদেশের মাইদ্দে মুক্তিফৌজের অহন হাটুরিয়া মাইর শুরু অইছে।
হেগাে অবস্থা অহন তা-না-না-না হয়ে গ্যাছেগা। রংপুরের অমরখানায় হানাদার বাহিনী অক্করে সাফ। মরণের আগে হেরা চিল্লাইছিল, ইয়া আল্লাহ ইয়ে কেয়া গজব আ গিয়া। এদিকে আবার রাজশাহী-নাটোর রাস্তা ক্যামতে জানি কাটিং হইয়া গ্যাছেগা। পাবনায় রাইতের বেলায় হেগাে একটা পেট্রোল গায়েব। ঠাকুরগাঁ আর বগুড়ায় অহন দাঁইড়াবান্দা খেইল শুরু অইছে। কুমিল্লার জাঙ্গালিয়াতে কি জানি একটা কারবার হইছে। বিবিসির খবরে কইছে ঢাকার থনে মাত্র ৩২ মাইল দূরে শ্রীপুরে পাক ফৌজ মাইর খাইয়া তক্তা হয়ে গেছে। মনে লয় এই সব গেরিলারা আমান থাইক্যা আঙ্কা আইয়া হাজির হইতাছে। না হইলে টিক্কা সা’বে কয়, ‘সব কুচ্ Normal হ্যায়। আর ময়দানে নামলেই আজরাইলে ধাওয়ায়। কেইসটা কি?
সেইজন্য বলেছিলাম হামাম দিস্তা। হামাম দিস্তার মাইদ্দে দেশী হেকিম-কবিরাজ যেতে গাছ-গাছড়া থ্যাল্লা কইল্যা ছত্রিশা মহাশক্তি জীবন রক্ষক বটিকা’ বানায়, হেই রকম সেনাপতি ইয়াহিয়ার জঙ্গী সরকার অহন কেমূতে জানি হামাম দিস্তার মাইদ্দে। থ্যালা হইতাছে।
সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল