১৫ জুলাই ১৯৭১
আরে গাইল রে গাইল। হেইদিন করাচী রেডিওর থনে World Bank-এর গুষ্টি তুইল্যা গাই। বহুত কোশেশ করণের পরও যহন World Bank সেনাপতি ইয়াহিয়ার জঙ্গী সরকাররে কোনাে মাল-পানি দিলাে না আর Pakistan aid Consortium-এর হগল মেম্বাররে একটা পয়সাও না দেওনের সুপারিশ করলাে, তখন ইয়াহিয়া সাবে World Bank-রে গাইলাইয়া সুখ করলাে। শুধু তাই-ই নয়, ইসলামাবাদের জঙ্গী সরকারের যক্ষ্মা হইছে বইল্যা World Bank যে রিপাের্ট দিলাে, আর যে রিপাের্ট আমেরিকার খবরের কাগজের মাইদ্দে ছাপা হইলাে, তহন ইয়াহিয়া সবে একটা ট্রিক্স করলাে। গাইল দ্যাওনের জন্য যে কোম্পনিডা আছিল, হেইডারে কামে লাগাইলাে। বহুত মালপানি খরচ কইর্যা এসােসিয়েটেড প্রেস অব পাকিস্তান নামে যে কোম্পানিডারে জঙ্গী। সরকার বাঁচাইয়া রাখছে, তারে গাইল দেওনের জন্যি অর্ডার দিলাে। ব্যস আর যায়। কোথায়? লাহােরের হীরামণ্ডীর থনে গাইল দ্যাওনের নতুন Dictionary মানে কিনা কেতাব কিইন্যা এসােসিয়েটেড প্রেস অব পাকিস্তান- অফিসে বইস্যা এক জব্বর রিপাের্ট বানাইলাে। হেই রিপাের্টের মাইদ্দে খালি ‘পর্যবেক্ষক মহলের মতে, রাজনৈতিক মহলের মতে’ এইসব উছিলা কইর্যা World Bank-রে আরে গাইরে গাইল। বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, পাঞ্জাবি, পশতু, সিন্ধি আর আরবি ভাষায় গাইল। হেই গাইলের মাইদ্দে খালি এটা কথাই বােঝা গেল, আমরা যক্ষ্মা বিমার লইয়া Gentlemen গাে লগে উডা বসা করতাছি-আর হেই বিমারের কথা যহন তােমরা টের পাইছাে, তখন কেনেস্তারা পিডাইয়া হেই কথাটা Disclose করা খুবই বেইমানী ব্যাপার।
কিন্তু আমি ভাবতাছি আমাগাে বখশী বাজারের ছকু মিয়ার কথা। কেম্তে জানি মাহবুবুল হকের মুদীর দোকানে রেডিও খুইল্যা- ছক্কু মিয়া, সেই সব গাইল হুনলাে। যে ছক্কু মিয়া কোনােরকম গাই ছাড়া কথা কয় না- হেই ছক্কু মিয়ার কান পর্যন্ত সবুজ হইয়া উডলাে। ব্যাডায় আবার টেলিফোনের মতাে কালাে কিনা? তাই কান লাল হইলে সবুজ মনে হয়। হেই ছক্কু মিয়া খালি কইলাে, ‘হেগাে মরণের আগে হিক্কা উড়ছে। না অইলে আমি পর্যন্ত জানি না হেই সব গাই পাইলাে কই? তা হইলে কিন্তু আমি ডবলদিমু।
আহ হা। গাইলের ডবল জিনিষটা বুঝলেন না? তয় তাে আবার মেছাল দিয়া কইতে হইবাে। হােনেন। দিনাজপুরের মুন্শীপাড়ায় দুই উকিল আছিলাে। হেগাে মাইদ্দে খুবই দোস্তি। কিন্তুক রােজ রাইতে দুইজন ক্লাবে তাস খেলতে যাইতাে। তাই বইল্যা টোয়েন্টী নাইন খেলা না- ব্রিজ খেলা। একদিন হেই কেলাবে দুইজনের মাইদ্দে এই খেলা লইয়াই একটুক খেডিমেডি হইলাে। পয়লা কথা কাড়াকাডি, তারপর রাগারাগিতারপর শুরু হইলাে গাই। লেখাপড়া জানা উকিল কিনা! তাই ইংরেজিতে গাই আরম্ভ হইলাে। কিন্তু মজা হইতাছে- একজন উকিলের গলা খুবই শােনা যাইতাছে। আরেকজন খালি ঠোট লাড়ে- আওয়াজ পাওয়া যায় না। এর মাইদ্দে যে উকিল সাবের গলা পাওয়া যাইতাছে হেতনে চিল্লাইয়া কইলাে, ইডিয়ট, ননসেন্স। আবার আরেক জন ঠোট নাড়ালাে। এক নম্বর উকিল সাবে এলায় অক্করে পালা হইয়া উড়লাে- কইলাে, রাস্কেল’- আবার দুই নম্বর আস্তে কইর্যা ঠোট লাইড়া কি যেনাে কইলাে। বাকি লােকেরা তাড়াতাড়ি হেগাে দুইজনের কাছে গেল- কেইসটা কি?
যাইয়া দ্যাহে কি? এক নম্বর উকিল সাবে ইংরেজিতে যে গালিই দেউক না কেনদুই নম্বর উকিল ঠোড লাইড়া খালি কইতাছে ডবল।’- মানে যে গাইলই দাও- তুমি হেই গাইলের ডবল।’ এলায় বুঝছেন ছক্কু মিয়া করাচী রেডিওর গাই শুইন্যা হেগাে ‘ডবল’ দিছে!।
হ-অ-অ-অ আপনাগাে ডবলের কথা হুনাইতাছি আর এইদিকে বাংলাদেশের ক্যাদোর মাইদ্দে অহন ডবল’ কারবার শুরু হইছে। ফোরাত নদীর কূলে আমার নানী মরেছে, ফোরাত নদীর কূলে আমার নানা মরেছে। ডরাইয়েন না, ডরাইয়েন না। মহররমের মাতমের একটু বাংলা কইর্যা কইলাম। গড়াই- বাংলাদেশের একটা নদীর নাম। হেইখানে অহন মহররমের মাত শুরু হইছে। হেই নদীর পাড়ে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা গরু যেনে পানটি দিয়া কোবায়, হেই রকম ভােমা-ভােমা ব্যাডাগুলারে কোবাইতাছে। মাইরের চোটে সেনাপতি ইয়াহিয়ার সােলজারগাে অক্করে ধান্ধা লাইগ্যা গ্যাছেগা।
সমস্ত কুষ্টিয়া জেলা অহন পরায় সাফ। বিচ্ছুগুলা চুয়াডাঙ্গা টাউনের মাইল চাইরের। মাইদ্দে আইস্যা হাজির হইছে। এই জেলার রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, টেলিফোনটেলিগ্রাম সব কিছুই মুক্তিবাহিনী একেবারে ছেরাবেরা কইর্যা Advance করতাছে। আর World-এর Best সােলজাররা খালি নিয়াজীর কাছে খবর পাডাইতাছে Air Force পাড়াও। আমাগাে হেই জিনিষ নষ্ট হইছে। কিন্তুক গেরিলারা এর আগেই কুষ্টিয়ার নতুন Airport-রে বিল বানাইয়া রাখছে। জঙ্গী সরকারের নৌ-বাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল মুজাফফর হাসান সা’বে তাে এই রিপাের্ট পাইয়া কুষ্টিয়াতে Navy পাড়াইতে চাইছিল। টিক্কা-নিয়াজী মিইল্যা অনেক কষ্টে এইডা বন্ধ করছে। এই দিকে রংপুরের খবর খুবই খনা। চাই দিন ধইর্যা বড়খাদা এলাকায় গাবুর মাইরের চোটে যহন হেগাে তিরিশটা লাশ পড়লাে-তহন কি হইলাে? যে কোনাে একটা গ্যাদা পােলারে জিগাইলেও কইতে পারবাে। মানে কিনা ভাগােয়াট। দুই দুইটা ঘাঁটি অক্করে পরিস্কার। আর কুমিল্লায় অহন কামানের মাইর শুরু হইছে। মুক্তিবাহিনীর কামানের গােলার চোটে ময়নামতী ক্যান্টনমেন্ট অহন থ থ কইরা কাতাছে।
আরে ছ্যাঃ ছ্যাঃ ছ্যাঃ। ঢাকা শহরে চোরা মতিনের পর মার্ক্সিস্ট-মুসলিম লীগার মাহমুদ আলীর বাড়িতে হেই কারবার হইছে। মানে কিনা পােলাপানরা Hand grenade দিয়া একটুক হাত নিশানা করছে। ফরাশগঞ্জেও কথা নাই বার্তা নাই কিচ্ছগুলা একটা সিগারেটের গুদাম মাটির লগে সমান করছে। আর একটা কথা কমু, না কমু না। আচ্ছা কইয়াই হেলাই। হেই দিন সেনাপতি ইয়াহিয়ার তিনজন অফিসার ঢাকার এক চীনা | রেস্টুরেন্টে চৌ-মিন খাইতাছিলা। ব্যস্ ওইখানেই ফুলস্টপ। আজরাইল ফেরশতা আরাে তিন জন কমিশন্ড অফিসার পাইলাে।
এই রকম একটা কুফা অবস্থায় জুলফিকার আলী ভুট্টো সা’ব সেনাপতি ইয়াহিয়ার রেডিও পাকিস্তানরে ধুম গাইলাইছে। ভূট্টো সা’ব কইছে করাচী-লাহাের রেডিও তারে ভােগা মারছে। হেতনে কোনাে সময়েই সেনাপতি ইয়াহিয়ার ক্ষেমতা হস্তান্তরের পুরা প্ল্যান মানে নাইক্যা। অনেক জায়গায় দুইজনের মাইদ্দে গড়বড় রইছে। আসল গড়বড় কিন্তুক আর এক জায়গায়। হেইডা হইতাছে সেনাপতি ইয়াহিয়ার ২৮শে জুনের ফর্মুলা লাটে উঠছে। তাই ভুট্টো সা’বে নতুন লাইনের ধান্দায় ঘুরতাছেন। হেইদিন People’s Party-র ওয়ার্কারদের কইছে ‘নিকসন সা’বে চীন সফরের দাওয়াত পাওনের পর আর। মার্কিন-বিরােধী শ্লোগান চলবাে না। অহন মাও-নিকসন ভাই-ভাই কইতে হইবাে। ক্যামন বুঝতাছেন- ভুট্টো সাবে আইজ-কাইল ঘােড়া ডিঙ্গাইয়া ঘাস খাওনের মতলব করছে। কিন্তু মুক্তিবাহিনীর পাল্টা মাইর শুরু হওনের গতিকে হগ্গল কিছু ভণ্ডুল হইয়া যাইতাছে।
সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল