You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.30 | চরমপত্র - সংগ্রামের নোটবুক

৩০ জুন ১৯৭১

গােস্বা করছেন। আমাগাে জুলফিকার আলী ভুট্টো সা’বে গােস্বা করছেন। হের আব্বাজান সেনাপতি ইয়াহিয়া খানের কায়-কারবার দেইখ্যা ভুট্টো সা’বে অহন অক্করে Deaf and Dumb স্কুলের হেড মাস্টার হইছেন। রেডিওর লােকেরা ভুট্টো সাবের কাছে সেনাপতি ইয়াহিয়ার বক্তৃতার Reaction চাইলে তিনি কোনাে কথা বলতে অস্বীকার করেছেন। তার দিলের মাইধ্যে খুবই চোট লাগছে। আইজ ছয় মাস ধইর্যা তাঁর সাধের পিপলস পার্টির মেম্বররা Elect হইয়া বেকার রইছে। অথচ এখনও পর্যন্ত ক্ষমতা পাওয়া তাে দূরের কথা এসব মেম্বাররা মাইনে পর্যন্ত পাচ্ছে না। কি রকম একটা গেনজাম কারবার। ভুট্টো সা’বরে Consult না করে সেনাপতি ইয়াহিয়া Insult করেছেন। তাই বেচারা ভুট্টো শুধু একটা কথাই বলেছেন, জেনারেল ইয়াহিয়া যে বেতার ভাষণ দিয়েছেন সে সম্পর্কে কোনাে মন্তব্য করার আগে পিপলস পার্টির লিডারদের সঙ্গে Discussion করতে হবে।’ এলায় বুঝতাছেন ভুট্টো-ইয়াহিয়ার মাইধ্যে ফারাকটা কেমন জানি দিন দিন বাড়ছে।
২৫শে মার্চের আগে তাে দু’জনার মধ্যে খুবই পিরীত আছিল। ভুট্টো সাবে বাংলাদেশের Election Result দেইখ্যা কইলেন, সর্বনাশ হয়েছে, শেখ মুজিব ১৬৭টা সিট পাওয়ায় পাকিস্তানের পার্লামেন্ট এখন কসাইখানায় পরিণত হয়েছে। এই পার্লামেন্টে আমার একাশি জনের পার্টি যােগ দিব না। কি সােন্দর যুক্তি। শেখ সাবে বেশি সিট পাইলাে ক্যান, হেইর লাইগ্যা Parliament বয়কট। বুঝছেন, হেগাে Democracy র নমুনাডা। জুলফিকার আলী ভুট্টো সা’বে অক্করে আড়ি, আড়ি, আড়িতিন আড়ি দিয়ে সিন্ধু প্রদেশের লারকানার ‘আল মারকাজ’ নামে বিরাট বাড়িতে দরজা বন্ধ করে বালিশের উপর উপুড় হয়ে ফোপাতে লাগলেন।
আর যায় কোথায়? জেনারেল আগা মােহাম্মদ ইয়াহিয়া খান জঙ্গী সরকারের প্রধান সেনাপতি জেনারেল আব্দুল হামিদ খানকে সঙ্গে করে লারকানায় যেয়ে হাজির হলেন। তারপর দরজার কড়া নেড়ে সে কি ডাকাডাকি, ‘আয় মেরে লাল, আয় মেরে চিড়িয়া, আয় মেরে জান। তার পরের খবর হচ্ছে, সেনাপতি ইয়াহিয়া আর জেনারেল হামিদ মিলে ‘আল-মারকাজে’ রাত কাটালেন। অনেক বুঝিয়ে যখন সদর ইয়াহিয়া ভুট্টোকে আসল প্ল্যানটার কথা বললেন, তখন স্যার শাহনেওয়াজ ভুট্টোর পােলার থারটি টু বেরিয়ে গেল। মানে কিনা বত্রিশ পার্টি দাঁত বের করে হাসলেন। আর্মি দিয়ে বাঙালিদের আচ্ছা করে পিটিয়ে আওয়ামী লীগ ব্যান করে দিলেই তাে পিপলস পার্টি পার্লামেন্টে মেজরিটি হয়ে গেল। গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল। আর্মি হেড কোয়ার্টার থেকে যে ব্রিফিংই আসে ভুট্টো সাহেব চুটিয়ে সেই কথাই বলেন। তার কথার চোটে জামাতে ইসলামী আর মুসলিম লীগ মার্কা হারু পার্টির নেতারা পর্যন্ত তাকে Coungratulate করলেন। পাকিস্তানের খবরের কাগজগুলােতে ভুট্টো সাহেবের রং-বেরং-এর ফটো ছাপা হলাে। এমনকি তাঁর বিবি সাহেবার স্পেশাল ইন্টারভিউ পর্যন্ত প্রকাশ হলাে। মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি হয়ে দাঁড়ালাে। সিন্ধিদের চাইতে পঞ্চনদ এলাকায় ভুট্টোর জয় জয়কার পড়ে গেল।
যে লােক আইয়ুব খানের টাইমে পররাষ্ট্র মন্ত্রী থাকার সময় একবার কইছিলেন, দরকার হলে ঘাস খেয়েও হাজার বছর ধরে ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই করবাে। সেই লােক আবার Full Form-এ অইস্যা পড়লেন। লাহাের বিমান বন্দরে এস, পি.কে সঙ্গে করে দিব্বি ইন্ডিয়ার হ্যাইজ্যাকিং করা বিমানের দস্যুদের কান্ধে হাত দিয়া সাবাস দিয়ে এলেন। একটা হাত উঁচু করে খবরের কাগজে ফটো ছাপবার ব্যবস্থা করলেন।
ভুট্টো সাবের চোটপাটই আলাদা। একজনরে ধমকাইতাছেন, একজনরে ডর দেখাইতাছেন, আর একজনরে শাসাইতেছেন। এরই মধ্যে সেনাপতি ইয়াহিয়া পহেলা মার্চ এক অর্ডারে পার্লামেন্টের সেশন বন্ধ করে দিলেন। ভুট্টো সা’বে আহ্লাদে গইল্যা পড়লেন। পার্টির লােকজনরে গােপনে কইলেন, ‘দেখছাে, ইয়াহিয়া অহন আমার হাতের মুঠায়। যখন যা কইমু তাই হােনন লাগবাে। এ্যার নাম পলিটিক্স। বুঝছাে?
এদিকে সেনাপতি ইয়াহিয়া ঢাকায় শেখ মুজিবের সঙ্গে লােক দেখানাের জন্য আলােচনা করতে এসে দিন কয়েক পরে তু’ করে ভুট্টোরে ডাকতেই, ব্যাডায় অক্করে লাইফ Risk কইর‌্যা ঢাকায় হাজির হলেন। 14th ডিভিশনের একটা পুরা কোম্পানি Hotel Intercontinental-এ জননেতাকে গার্ড দিলাে। এমনকি হেটেলের এগারাে তলায় একটা সাংবাদিক সম্মেলনের আগে সমস্ত সাংবাদিকদের পরিচয় পত্র দেখে দেহ তল্লাশী করে ঢুকানাে হলাে। জুজুর ভয়। যদি কোনাে বাঙালি ভূট্টো সা’বরে হেইকাম কইর‌্যা দেয়।
পাকিস্তান নামে দেশটার দাফন করার order দিয়ে সেনাপতি ইয়াহিয়া করাচীতে পালিয়ে যাবার পর জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ২৬শে মার্চ একটা আর্মি জিপে তেজগাঁ বিমানবন্দরে এনে করাচীগামী প্লেনে উঠিয়ে দেয়া হলাে। ব্যস্ এইখানেই ভুট্টোর খেইল খতম্। উনি ছিড়া হয়ে গেলেন। নারিকেলের শাঁস খাইয়া য্যাতে লােকে ছিড়া ড্রেনের মাইদ্দে ফেলায়, কাম শ্যাষ হওনের পর জঙ্গী সরকার ভুট্টো সা’বরে হ্যাতে ফালাইয়া দিছে।
দুই একবার সেনাপতি ইয়াহিয়ার সরকার পােলাডারে বুঝাইবার চাইছিল, মুখে যতই চোটপাট করি না কেন, আসলে বাংলাদেশে পাকফৌজ অহন কেদোর মাইদ্দে পড়ছে। তিন মাসেও লাড়াই খতম করণ গেল না। এর মাইদ্দে আবার বাঙালি ফৌজের মাইর দিনকে দিন কড়া হইতাছে। এদিকে মাল-পানির খুবই টানাটানি। তাই মেরে লাল ভুট্টো একটু থামােশ থাকো।
কিন্তু পােলা খুবই গরম। সেনাপতি ইয়াহিয়া নাকি তারে ভােগা মারছে। ফুটবল খেলায় যেমন একজন আরেকজনরে ফাউল করে, ইয়াহিয়া সা’বে নাহি ফাউল-হ্যান্ডবল সবই করছে। কিন্তুক বেডায় কি জানে না যে, প্রেম, রাজনীতি আর যুদ্ধে ফাউল বইল্যা কিছু নাইক্যা। জেতনডাই আসল কথা।
মিষ্টির দোকানের সামনে যেমন এক রকমের চাম-ওঠা জীব, দূরে আরেক জাতভাইরে দেখলেই কেঁউ কেঁউ করে ওঠে। ভুট্টো সা’ব অহন দূর থনে গলায় শিকল বাঁধা হরিবল হক, সবুর, মাহমুদ আলী ফকা-ফরিদ’রে দেইখ্যা হেইরকম আওয়াজ করতাছেন। কেননা ইয়াহিয়া সাবের শেষ ফর্মুলায় নাকি এইসব জাতভাইগাে Elect হওনের খুবই কড়া Chance রইছে।
সেইজন্য বলেছিলাম গােস্বা করছেন। জুলফিকার আলী ভুট্টো অহন গােস্বা করছেন। কাইন্দা বালিশ ভিজাইতাছেন। উনি অহন অক্করে Deaf and Dumb স্কুলে হেডমাস্টার হইছেন। তার দিলের মাইদ্দে জব্বর চোট লাগছে।

সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল