৭ জুলাই ১৯৭১
দিনা দুই আছিলাম না। হের মাইদ্দেই জেনারেল টিক্কা সা’বে চান্স লইছেন। হেতাইনে North Bengal-এর নাম কইর্যা মেহেরপুর, রাজশাহী, আর নওগাঁ Tour করেছেন। শরীলডা ম্যাজ ম্যাজ করতাছে বইল্যা ভােগা মাইর্যা রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁ, কুড়িগ্রাম এলাকায় যায় নাইক্যা। এইসব এলাকা আইজ-কাইল নাকি খুবই Risky হইয়া পড়ছে। হের কাছে ছিকরেট রিপাের্ট আইছে। খুবই খতরনা। তাই বেচারা টিক্কা North Bengal Tour এবেলা ওবেলার কারবার করছেন। মানে কিনা এবেলা ঢাকার থনে গেছেন, আর ওবেলা Back করছেন। কিন্তু ঢাকায় ফেরনের পর তার কি চোটপাট।
একটা ঠ্যাং একটু খুড়িয়ে প্লেন থেকে নেমেই রেডিও গায়েবী আওয়াজের। রিপাের্টাররে খুঁজলেন। কিন্তু আমাগাে জিল্লর সা’বে কাঁচা-কাম করে না। রেডিওর নিউজ এডিটরকে লইয়া পুরা স্যুট পিনধ্যা এয়ারপাের্টে হাজির। বহু চেষ্টা করণের পর ব্যাড়ায় আবার দোবারা রেডিও গায়েবী আওয়াজের রিজিওনাল ডিরেক্টর অইছেন। এর আগে সেন্ট্রাল মিনিস্টার হবিবুর রহমান বুলু মিয়ার প্রাইভেট সেক্রেটারি থাকনের সময় W.T.এর মানে কিনা বিনা পহায় ট্রেনে টুর কইর্যা টি.এ.-র টাকা লওন আর রেডিওর। Commercial প্রােগ্রামের টাকা গ্যাড়া মারণের লাইগ্যা পাকিস্তান কাউন্সিলে Executive Director হিসেবে ট্রান্সফার হইছিলেন। হেরপর করাচীতে রেডিওর Director Transription থাকনের সময় ইলেকশন রেজাল্ট দেইখ্যা আওয়ামী লীগরে মাস্কা মারণের জন্যি আজাদ রহমানের জয় বাংলা গানের রেকর্ডডা প্রডিউস করছিলেন। কিন্তু যখনই জিলুর সা’বে বুঝছেন কেইস খুবই খারাপ, তখনই একটা সেলাম ঠুইক্যা কইছেন, ‘মেরে মাদারি জবান’ উর্দু হ্যায়, হাকো ঢাকামে ভেজিয়ে। আমি হগুগলরে সুফিয়া আমীনের গান হুনামু।’
ব্যস। কান্ ফতে। অর্ডার পাওনের লগে লগে ঢাকায় আইয়া এজাজ মিয়ারে কনুই মাইর্যা আউট কইর্যা দোতলার বড় চেয়ারডার মাইদ্দে বইয়া পড়ছেন।
এহেনাে জিলুর সা’বের কামের মাইদ্দে কোনােই গলদ পাওন সম্ভব না। তাই সাবে কইছে কিসের ভাই, আহ্লাদের আর সীমা নাই। জেনারেল টিক্কার কথাবার্তা হুবহু লিখ্যা অফিসে দৌড়াইলেন।
যখন দুনিয়ার হগল খবরের কাগজ, রেডিও আর টেলিভিশন কইতাছে বাংলাদেশের দখলকৃত এলাকায় শান্তি ও শৃঙ্খল নাইক্যা, যাতায়াতের অবস্থা খুবই খারাপ, স্কুল-কলেজ, কোর্ট-কাচারী, হাট-বাজার আর ব্যবসা-বাণিজ্যের কারবার নাইক্যা আর অখনই দুর্ভিক্ষ দেখা দিছে, তহন রেডিওর মাইদ্দে টিক্কা সা’বের Statement আইলাে, সব কুচ্ ঠিক হ্যায়। খাদ্য পরিস্থিতি খুবই চমৎকার। পিস্ কমিটি সােন্দর কাম করতাছে।
কিন্তু লাহােরের পাকিস্তান টাইমস পত্রিকা জেনারেল টিক্কাকে একেবারে পথে বসিয়েছেন। এ কাগজে ছাপা হয়েছে যে, পূর্ব বাংলার খাদ্য পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। সেখানে যে Stock রয়েছে তাতে দু’মাস চলবে কিনা সন্দেহ। এলায় ক্যামন বুঝতাছেন! পাকিস্তান টাইমস আউর লিখি, দু’বছর পর এবার পশ্চিম পাকিস্তান এক ভয়াবহ খাদ্য ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছে। বেশি না, হেইখানে মাত্রক দশ লাখ টন গে শর্ট’ পড়ছে। তাই ইসলামাবাদের জঙ্গী সরকার এবার দেড়শ’ কোটি টাকা দিয়া একুশ লাখ টন খাদ্য আমদানী করবাে। কিন্তু মাল-পানি?– নাইক্যা। কওনের লগে লগে স্টেট ব্যাংকের গবর্ণর রচিদ সা’বরে Shunting কইরা দিচে। আর সেনাপতি ইয়াহিয়া অহন থাইক্যা বাকিতে কারবার করবাে। এইডা যেমন লাগে বেচারাম দেউড়ীর মুদীখানা আর কি? পােলাডারে পাডাইয়া বাকিতে দুই আনার কাড়ুয়ার তেল আনাইলাম, আর কী?
এদিকে ম্যাঞ্চেস্টার গার্ডিয়ান পত্রিকায় মার্টিন উলকট লিখেছেন, একমাত্র ঢাকা ছাড়া বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলা হেড কোয়ার্টার্সে এখন কারফিউ চলতাছে। দিন কয়েক আগেই রাজশাহীতে মুক্তিফৌজ গেরিলারা তিনটা বােমা ফাটিয়েছে। যে ক’জন বেসামরিক অফিসার কাজ করছে তারা চিঠির মারফৎ মৃত্যু পরােয়ানা পেয়েছে। এর মধ্যেই পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ১৫,০০০ সশস্ত্র পুলিশ আমদানী করা হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে রেল যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলাের অনেক। জায়গায় মুক্তিফৌজের অস্তিত্ব রয়েছে।
হেইদিন আবার মেহেরপুর সেক্টরে এক জব্বর কাম হইছে। একজন শিক্-কাবাব খাওইন্যা দারােগা একডা অশান্তি কমিডি করণের লাইগ্যা মিটিং ডাকছিল। হেই মিডিং-এ শও খানেক লােক দেইখ্যা দারােগা সা’বে মুসলমান ভাই-ভাই কইয়্যা একটা লেকচার । দিতাছিলেন। কিন্তু যারা লেকচার হুনতাছিলেন তাগাে মাইদ্দে যে অনেকগুলাে মুক্তিফৌজের বিছু আছিল তা জানতাে না। তারপর বুঝতেই পারতাছেন। নাঃ নাঃ নাঃ আমি। কমু না। হেই গাড়ােল আর তার সাঙ্গোপাঙ্গো গাে লাইগ্যা দুঃখে আমার পরাণডা Weep করতাছে। এদিকে সাতক্ষীরায় আবার অশান্তি কমিটির ২৯ জন কলে আম হইছে। আর দিনাজপুর-রংপুর সেক্টরে মুক্তিফৌজ গেরিলারা অহন কোবাইয়্যা সুখ করতাছে। বেশি না ১০৫ দিনের লড়াই-এ হানাদার বাহিনীর দশ হাজারের মতাে জমি হইছে। হেইর লাইগ্যা। জেনারেল নিয়াজীর চান্দি অক্করে গরম হয়ে গেছে। অনেক SOS পাঠানাের পর জর্ডানের। আম্মান থেকে reply এসেছে। দিন কয়েক আগে আম্মান থেকে এসব জমি সৈন্যগাে মেরামত করণের লাইগ্যা দশ টন ওষুধ, ব্যান্ডেজ আর সার্জারির যন্ত্রপাতি নিয়ে একটা বিমান করাচী এসে পৌঁছেছে। এলায় বুঝছেন মাইরটা কি আন্দাজ হইতাছে।
তাই বলেছিলাম বিপদ, আপদ আর মুসিবত এরা কখনও একা আহে না। যহন আহে, তহন দল বাইন্দ্যা আহে। সেনাপতি ইয়াহিয়ার জঙ্গী সরকারের অহন শনি রাশিতে পাইছে। তাই হেতাইনে যে কামেই হাত দিতাছেন, হেই কামেই বালা-মুসিবত হেরে আছর করতাছে।
সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল