২০ জুলাই ১৮৭১
হইছে। আবার আমাগাে ঢাকা শহরডা Normal হইছে। মধ্যে দিন কয়েক বাদ দিয়া আবার কারফিউ হইছে। ফার্মগেট, নিউ মার্কেট, কমলাপুর, গুলিস্তান, সদরঘাট, হাটখােলা এইসব জায়গায় Check post বইছে। সালােয়ার-পাঞ্জাবি পরা হেই জিনিষের। দল মহল্লার মাইদ্দে ঘুইর্যা বেড়াইতাছে। আবার খালি বাড়ি দেখলেই উর্দুতে নাম লিখৃখ্যা দেয়ালে লাগাইয়া দখলী লইতাছে। একটু বাদ বাদই বড় বড় রাস্তা দিয়া মেলেটারি ভর্তি ট্রাক যাইতাছে। আর নবাবপুর রােডের মাইদ্দে বেওয়ারিশ দোকানগুলার দরজার কড়াতে আরে তালারে তালা। মানে বাড়ির থনে একটা তালা আইন্যা কড়াতে লাগাইলেই দখলী হইলাে। তাই খালি সেম সাইড হইতাছে। এক একটা দোকানে পাঁচটা-সাতটা কইর্যা তালা পড়তাছে। তালার মালিক হগুগলেই ডাহিনা মুড়া দিয়া লেখইন্যা লােক। তা হইলে বুঝতেই পারছেন ক্যাচালডা কি রকম লাগছে।
আর চলতাছে বােমাবাজি। আমেরিকান কনসালের বাড়ি, হােটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, সেক্রেটারিয়েট, হাবিব ব্যাংক, কমলাপুর রেলস্টেশন, গুলিস্তান সিনেমা, চোরা মতিনের বাড়ি, মেলেটারি ট্রাক এসবের উপর এর মাইদ্দেই মুক্তিবাহিনীর Hand Grenade মারা হইছে। আরাে বহুত কিছু এ্যাগাে লিস্টির মাইদ্দে রইছে। এই দিকে আবার কুর্মিটোলা মিলিটারি হাসপাতালে জায়গা হইতাছে না দেইখ্যা মীরপুরের তেরাে নম্বর সেকশনে একটা নতুন Under Ground হাসপাতাল খুলছে। অবিশ্যি এইসব হাসপাতালে যারা ব্যাণ্ডেজ বাইন্ধ্যা আইতাছে, তারা মফস্বলের মাল। মানে কিনা বাংলাদেশের ক্যাদো পানির মাইদ্দে ছ্যাল-কু-কুত্ খেলার পর হেগাে এই অবস্থা হইছে। বাকিরা গােরের আজাব পাইতাছে।
যাউকগ্যা যা কইতাছিলাম। পেরতে দিন সন্ধ্যার মাইদ্দেই আমাগাে ঢাকা শহর ফাঁকা। এই রকম একটা Normal অবস্থা যহন চলতাছে, তহন ঢাকা টাউনডারে Abnormal কারণের লাইগ্যা তাগাে খায়েশ হইছিল। বিদেশ থাইক্যা মেহমান আহনের গতিকে কারফিউ উড়ানাে হইছিল। রাওয়ালপিণ্ডির থনে Order হইছিল, যেসব পার্লামেন্টের মেম্বর, World Bank-এর প্রতিনিধে আর সাংবাদিকগাে পাডাইতাছি তারা। যেনাে ঢাকায় যাইয়া কারফিউ না দেখতে পায়। জেনারেল নিয়াজী রাওয়ালপিণ্ডিরে জানাইল যে, ২৫শে মার্চ থাইক্যা বাঙালিগাে যে পিডানী দিছি, হেরপর কারফিউ উড়াইলে কিছুই অইবাে না।
World Bank-এর মেম্বাররা হােটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সুইমিং পুলের পাশে দুইজন মিলিটারি দেইখ্যা এইডার কারণ জিগাইলাে। মেজর সা’বে হেই দুইডারে সরাইবাে কিনা চিন্তা করতাছে- এমন সময় দম্ দম্ হেই কারবার হইলাে। অ-ল-পের জন্যি একজন সাদা চামড়ার সাব আজরাইলের হাত থনে বাঁইচ্যা গেল। হের পরেই ঢাকা টাউনের পাঁচ জায়গায় বােমাবাজি হইলাে। রাও ফরমান আলী আর জেনারেল টিক্কা মাগাে-মা কইয়্যা টাউনের মাইদ্দে আবার কারফিউ দিলাে। শুধু তাই-ই নয়। আরাে কয়েক কোম্পানি সৈন্য নামাইলাে। ব্যস, আবার ঢাকা টাউন Normal হইয়া গেলােগা। বিকাল থনেই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-ডেমরা রাস্তা বন্ধ আর ঢাকা-টাঙ্গাইল রাস্তা তাে অক্করে ছেরাবেরা অবস্থা।
এ্যার মাইদ্দে ব্যাডাগাে কি সাহস! কুমিল্লা সেক্টরে গাবুর মাইরের চোটে টাঙ্গাইল থনে সােলজার Withdraw কইর্যা পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ বহাইছিল। মনে লয় আজরাইলেই এই বুদ্ধিটা দিছিলাে। তারপর বুঝতেই পারছেন, যা হওনের তাই-ই হইলাে। মধুপুরের জঙ্গলের কাদেরিয়া বাহিনীর গেরিলারা হেই পুলিশগাে মধু খাওয়াইলা। এই দিকে Prestige ঢিলা হওনের গতিকে নিয়াজী সা’ব টাঙ্গাইলে হাওয়াই হামলা চালাইলাে। কিন্তুক ভানুমতীর খেইল। তুফান ফাইট কইরা হানাদার সােলজার টাঙ্গাইল আহনের পর গেরিলাগাে নাম নিশানা পর্যন্ত পাইলাে না। আর ঢাকা-টাঙ্গাইল রাস্তা আইজও পর্যন্ত ঠিক হইলাে না। মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, চাপাই নওয়াবগঞ্জ, চট্টগ্রামে হানাদার বাহিনী আর আউগৃগাইতে পারছে না।
এরপর থনেই ছােট ভাইয়ের Wife গােপনে ভাসুরের নাম লইতে শুরু করছে। খবরের কাগজ আর রেডিওর মাইদ্দে ইশারা ইঙ্গিত কইরা দম খিছাইতাছে। কিন্তু লাখ লাখ হ্যান্ডবিল ছাপাইয়া প্লেনের থনে ছাড়তাছে। হেই সব হ্যান্ডবিলে ভাসুরের পুরা নাম লিখুখি।
আর ঢাকা এয়ারপাের্ট। থাউক হেইটার কথা আইজ আর কমুনা। হেগাে চিক্রেট আর Disclose করুম না। শ্যাষ ভাগােনা এই রাস্তা দিয়াই হইবাে কিনা। অহন। বুঝছেন, ঢাকা টাউন আইজ-কাইল কি রকম Normal হইছে। কারফিউ, মিলিটারি চেকপােস্ট, সােলজার গাে টহল, এ্যার মাইদ্দে দুই-একটা Item কম হইলেই কেমন জানি Abnormal মনে হয়।
এদিকে ওয়াশিংটনে রেয়ান-রিপাের্টে আমেরিকান গবর্ণমেন্টের অফিসাররা তাজ্জব বইন্যা গ্যাছেগা। রেয়ান-রিপাের্টে কইছে বাংলাদেশে পহেলা আগস্টের পর ইতিহাসের সবচাইতে ভয়াবহ রকমের দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। কিন্তু ইয়াহিয়া টিক্কারে দিয়া মুছিবতই হইতাছে বাংলাদেশের মানুষগুলার জন্যি যে মালই পাঠানাে হউক না কেন তা হেগাে সােলজারগাে কমে লাগাইতাছে। হেইখানে কোনাে রাস্তাঘাট নাই আর ট্রেন চলতাছে না দেইখ্যা কিছু ধান-চাল গেরামে ঢওয়ানের জন্যি তিরিশটা USAID সিল মারা ইঞ্জিল বহানাে বড় নাও দেয়া হইছিল। কিন্তু এর মাইদ্দে সাতাইশটা টিক্কার সােলজাররা রং বদলাইয়া বরিশাল, মাদারীপুর আর ফরিদপুরে বাঙালি মারনের লাইগ্যা কামে লাগাইছে। ক্যামন বুঝতাছেন? হেগাে অবস্থা যা দাড়াইছে তাতে হেরা রােগীর পথ্য, বাচ্চার খাবার, বুড়ার Diet সব খাইতে পারে। হেরা সব পারে- খালি মুক্তিবাহিনীর লগে Fight করণ ছাড়া।
রেয়ন-রিপাের্টে আরাে কইছে, বহুত কোশেশ করনের পরও ইয়াহিয়া টিক্কার সােলজাররা ঢাকা-চট্টগ্রাম রাস্তা আর রেললাইন ঠিক করতে পারে নাই। পারবাে ক্যাতে? হেই এলাকায় গেলেই মাইর- গেলেই মাইর। ক্যাদো-পানি আর ইরি ধানের ক্ষেতের মাইদ্দে পাইয়া গেরিলারা মাইরা সুখ করলাে রে! এতাে কইর্যা কইলাম দরিয়ার মাইদ্দে যাই না- যাইস না। নাহ্, হেরা ঘুইর্যা ফিইর্যা হেই দরিয়ার মাইদ্দেই যাইবাে। অহন বােঝ ঠ্যালাটা কারে কয়? হেইদিন কুমিল্লার মুরাদনগরে দুই নাও-এ ৬০ জন আছিলাে। ব্যস, আজরাইল অহন আর জনে জনে নাম ল্যাহনের টাইম পাইতাছে না। খালি ল্যাখতাছে 7th ডিভিশনের ইয়ারজান খান গয়রহ। সাং-পশ্চিম পাকিস্তান, হাল | সাং-ময়নামতী ক্যান্টনমেন্ট। এলায় বুঝছেন কারবার সব ক্যামতে Short Cut হইয়্যা গ্যাছেগা?
আর দালালগাে কিসমত কি হইতাছে জানেন? হেইদিন কুমিল্লা-চাঁদপুর রাস্তায়। মুজাফফরগঞ্জ ব্রিজের লগে চাইরজন দালালরে বাইন্দ্যা ডিনামাইট লাগাইয়া ব্রিজ আর দালাল সব শুদ্দা উড়াইয়া দিছে। মার্কিন সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘নিউজ উইকে’ লিখছে, খুলনায় যাইয়্যা দ্যাহে দুই দালাল সম্রাট লাল চিডি পাইছে। হেরা আবার গার্ড লইয়া ঘুরতাে। কিন্তুক মউত যারে ধাওয়ায় তারে বাঁচাইবাে কেডা? দিন দুই বাদে দুই দালালই শ্যাষ। মাথা ধড়ের থনে আলাদা হইয়্যা গ্যাছেগা। আমেরিকান রির্পোটার এই কারবার দেইখ্যা বুইঝ্যা হেলাইছে ইয়াহিয়া সাবের Normal জিনিষটা কি?
হেইর লাইগ্যাই কইছিলাম আমাগাে ঢাকা শহর আর বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকা অহন অক্করে Normal হইয়্যা গ্যাছেগা। খালি আজরাইল ফেরেশতা আর জনে জনে নাম ল্যাহনের টাইম পাইতাছে না। হেতনে খুবই ব্যস্ত।
সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল