You dont have javascript enabled! Please enable it! 1967.11.08 | শেখ মুজিবের কারাদণ্ড ১৫ মাসের স্থলে ৮ মাসে হ্রাস | আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

আজাদ
৮ই নভেম্বর ১৯৬৭

শেখ মুজিবের কারাদণ্ড ১৫ মাসের স্থলে ৮ মাসে হ্রাস
(কোর্ট রিপাের্টার)

পল্টন ময়দানের জনসভায় ‘আপত্তিকর’ বক্তৃতাদানের অভিযােগে ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবর রহমানকে ১৫ মাসের কারাদণ্ড দানের বিরুদ্ধে আপীল মামলার রায়ে ঢাকার অতিরিক্ত দায়রা জজ জনাব কায়সার আলী গতকাল মঙ্গলবার, দণ্ডাজ্ঞার মেয়াদ ‘ন্যায়বিচারের খাতিরে’ কমাইয়া ৮ মাস করিয়াছেন। ১৯৬৬ সালের ২০শে মার্চ পল্টন ময়দানে উপরােক্ত ‘আপত্তিকর’ বক্তৃতাদানের অভিযােগে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট জনাব আফসার উদ্দিন গত ২৭শে এপ্রিল দেশরক্ষা আইনের ৪১(৬) ধারা অনুযায়ী আওয়ামী লীগ প্রধানকে ১৫ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবর রহমানের উপরােক্ত বক্তৃতার ফলে বিভিন্ন শ্রেণীর নাগরিকদের মধ্যে শত্রুতা ও ঘৃণা, আইনসঙ্গতভাবে প্রতিষ্ঠিত সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ সৃষ্টি এবং পূর্ব পাকিস্তানীদের মধ্যে দেহরক্ষা সম্পর্কে আতঙ্ক ও ভীতি সঞ্চার করার শ্রমিক নেতা বলিয়া কথিত আমীর হােসেন ও ম্যাজিষ্ট্রেট জনাব আবদুর রহমান সহ ১৩ ব্যক্তি সরকারপক্ষে সাক্ষ্যদান করেন।
৬ দফা কর্মসূচী কোন সময় বেআইনী ঘােষিত হয় নাই। রাজনৈতিক দল আইন অনুযায়ী রাজনৈতিক নেতাদের দলের কর্মসূচী ব্যাখ্যা করার অধিকার রহিয়াছে বলিয়া বিবাদী পক্ষ হইতে বলা হয়। অতিরিক্ত দায়রা জজ রায়ে মন্তব্য প্রসঙ্গে বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও ঘৃণা সৃষ্টি হইতে পারে রাজনৈতিক দল আইনে বক্তাকে এমন কিছু করিতে বা বলিতে অধিকার দেওয়া হয় নাই। রায়ে আরও বলা হয় যে, পল্টন ময়দানের জনসভায় অধিকাংশ লােক অশিক্ষিত, রাজনৈতিক বিষয়ে অজ্ঞ ও যুক্তিবাদী নহেন। কাজেই আপীল আবেদনকারীর বক্তৃতা শ্রোতাদের মধ্যে দেশরক্ষার ব্যাপারে আতঙ্ক এবং সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ সৃষ্টি করার সম্ভাবনা আছে। বিবাদীপক্ষ হইতে কোন মৌখিক সাফাই সাক্ষী দেওয়া হয় নাই এবং শর্টহ্যাণ্ডে লিপিবদ্ধ বিষয়বস্তু অবিশ্বাস করার কোন কারণ নাই বলিয়া দায়রা জজ উল্লেখ করিয়াছেন।
জাতীয় পরিষদে বৈষম্য সম্পর্কে প্রদত্ত উজিরদের অনুরূপ বক্তৃতা এবং জনাব আবুল হাশেম কর্তৃক রচিত “জাতীয় সংহতি” পুস্তকে “গত পাকভারত যুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানীদের মনে দেশরক্ষা সম্পর্কে আতঙ্ক বিরাজমান” মন্তব্যের ব্যাপারে কোন আপত্তি তােলা হয় নাই বলিয়া বিবাদীপক্ষের কৌসুলী জানান। জনাব হাশেমের পুস্তক অতি শিক্ষিত ও রাজনীতি জ্ঞানবিশিষ্ট ব্যক্তিরা পাঠ করিবে। জাতীয় পরিষদে প্রদত্ত উজিরদের বক্তৃতা কম লােকের দৃষ্টে আকর্ষণ করিবে। কাজেই উহাতে পল্টন ময়দানে প্রদত্ত শেখ মুজিবর রহমানের বক্তৃতার ন্যায় প্রতিক্রিয়া হইবে না বলিয়া অতিরিক্ত দায়রা জজ মন্তব্য করেন। যাবতীয় ঘটনা ও সাক্ষ্যপ্রমাণ বিবেচনা করিয়া শেখ মুজিবর রহমানের বক্তৃতা সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ সৃষ্টি করিতে পারে বলিয়া অতিরিক্ত দায়রা জজ রায়দান করেন। “শাস্তি কিছুটা কঠোর হওয়ায় ন্যায়বিচারের খাতিরে” অতিরিক্ত দায়রা জজ সাজার মেয়াদ কমাইয়া ৮ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব