You dont have javascript enabled! Please enable it! 1967.04.25 | গদি দখলের জন্য আবার পরস্পর আদর্শ বিরােধী- ধিক্কৃত রাজনীতিকদের জোট গঠনের প্রয়াস | দৈনিক পয়গাম - সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক পয়গাম
২৫শে এপ্রিল ১৯৬৭

গদি দখলের জন্য আবার পরস্পর আদর্শ বিরােধী
ধিক্কৃত রাজনীতিকদের জোট গঠনের প্রয়াস
(ষ্টাফ রিপাের্টার)

এবডাের শৃংখল মুক্তির পর দেশের নানান মতের ও আদর্শের বিরােধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অপরিচয়ের অন্ধকার হইতে পুনরায় বাহির হইয়া আসিয়া বর্তমানে মনিহারা সাপের মত ক্ষিপ্ত হইয়া ক্ষমতার সিংহাসন দখল করিবার দুঃস্বপ্নে মাতিয়া উঠিয়াছে।
পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসকে কলঙ্কিত এবং দেশকে অনিশ্চয়তার অন্ধকারে নিক্ষেপের কৃতিত্বের দাবীদার পার্লামেন্টারী যুগের এই পাহলােয়ান রাজনীতিবিদদের শলাপরামর্শ গােপন আঁতাত এবং ষড়যন্ত্র “সাহেদ আলী হত্যার স্থান” ঢাকাকে পুনরায় ক্ষত-বিক্ষত করিতে চাহিতেছে।
পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক খেলােয়াড়দের সহিত ক্ষমতার দড়ির খেলায় অংশগ্রহণের জন্য চেষ্টা চালাইতেছেন এমন সব চরিত্রের পশ্চিম পাকিস্তানী নেতৃবৃন্দ যাহাদের জীবনের থলি পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বিশ্বাসধাতকতার তথ্যে পরিপূর্ণ।
পাঞ্জবের ভূস্বামী মিয়া মমতাজ দৌলতাঞ্জ এবং সাবেক আই সি এস ও পাকিস্তানের সাবেক উজিরে আজম চৌধুরী মােহাম্মদ আলী পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক মঞ্চের উল্কি চিহ্নিত মুখখাসধারী বিরােধী নেতৃবৃন্দের সহিত যেনতেনভাবে গোঁজামিল দিয়া হইলেও সম্মিলিত বিরােধী দল গঠনের জন্য রাজ্যের বিশ্রাম এবং দিনের আহার পরিত্যাগ করিয়া কঠোর প্রচেষ্টা চালাইতেছেন। কাউন্সিল লীগ জামাতে ইসলামী, নেজামে ইসলামী, ন্যাপ এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে সমঝােতা প্রতিষ্ঠা করিয়া একটি ঐক্যবদ্ধ বিরােধী দল গঠনের প্রচেষ্টাকে স্থানীয় রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহল “বালির বাঁধের” সহিত তুলনা করিতেছেন।
প্রথমতঃ বিভিন্ন ধর্মী স্বার্থ এবং আদর্শের দংশনে ক্ষতবিক্ষত এইসব রাজনৈতিক দলের গােস্বামীর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ভান করিলেও এই ঐক্যজোট যে টিকিয়া থাকিতে পারে না পাকিস্তানের পার্লামেন্টারী রাজনীতির কলঙ্কিত অধ্যায় তাহার প্রমাণ বহন করিতেছে।
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ ছয়দফা প্রশ্নে “সুচাগ্র” মেদিনী ছাড়িয়া দিতেও রাজী নয়। অন্যদিকে ছয় দফার কঠোর সমালােচক নেজামে ইসলাম, জামাতে ইসলামী, কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রভৃতি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সহিত সর্বনিম্ন কর্মসূচীর ভিত্তিতে সম্মিলিত বিরােধী ফ্রন্ট গঠনের প্রচেষ্টা চালাইতেছেন।
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ কার্যকরী কমিটির তিন দিনব্যাপী অধিবেশন সমাপ্তির পর যে ইশতেহার প্রকাশ করা হইয়াছে, তাহাতে আর যাহা কিছুই থাকুক না কেন, ঐক্যের নামগন্ধ নাই। অপরদিকে নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান এবং মালিক গােলাম জিলানী প্রমুখ পশ্চিম পাকিস্তানী আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ছয়দফা প্রশ্নে একটি রফা করিয়া পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগকে বাগে আনয়নের চেষ্টা করিতেছে।
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগকে সম্মিলিত বিরােধী জোট গঠনের প্রশ্নে তাহাদের ছয় দফা কর্মসূচীর প্রাধান্য দেওয়ার সুপারিশ করিয়াছে। অর্থাৎ ছয় দফার স্বীকৃতি ছাড়া সম্মিলিত বিরােধী জোট গঠন করা যাইবে না। গঠিত হইলেও পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ তাহার সহিত হাত মিলাইবে না।
ছয়দফার অন্যতম “ট্যাক্স প্রস্তাব” বাদ দিয়া অপর পাঁচটি দল গ্রহণের ব্যাপারে অন্যান্য বিরােধী দল একমত হইলেও হইতে পারেন। কিন্তু ট্যাক্স প্রস্তাব বাদ দিলে ছয়দফা একটি অন্তঃসারশূন্য প্রস্তাবে পরিণত হইবে এই আশঙ্কায় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত ঐক্যের ব্যাপারে চূড়ান্ত কোন প্রস্তাব দিতে পারিতেছে না।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্যান্য বিরােধী রাজনৈতিক দল মনে করিতেছেন যে, শেখ মুজিবের মতামত না লইয়া ঐক্যজোট গঠন করিলে শেষ পর্যন্ত হয়ত তাহা টিকিয়া থাকিবে না। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ শেখ মুজিবের অনুপস্থিতিতে যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন না কেন, তাহা হয়ত পার্টির ডিক্টেটরের (শেখ মুজিব) এক হুমকিতে বানচাল হইয়া যাইবে।
তাই বিরােধী দলের ঐক্যজোট গঠনের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা তাহাদের অতীত ইতিহাস সম্পর্কে পরিচিত জনসাধারণ ঔৎসুক্যের সহিত লক্ষ্য করিয়া যাইতেছে।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব