You dont have javascript enabled! Please enable it! 1966.10.24 | পল্টনে আওয়ামী লীগের জনসভা | দৈনিক পাকিস্তান - সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক পাকিস্তান
২৪ শে অক্টোবর ১৯৬৬

পল্টনে আওয়ামী লীগের জনসভা
(ষ্টাফ রিপাের্টার)

পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদিকা মিসেস আমেনা বেগম গতকাল রােববার পল্টন ময়দানে ঘােষণা করেন যে, শত নির্যাতনের মুখেও তাঁদের আন্দোলন দাবী পূরণ না হওয়া পর্যন্ত দুর্বারগতিতে চলতে থাকিবে।
আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদিকা হওয়ার পর মিসেস আমেনা বেগমের পল্টন ময়দানের জনসভায় এই প্রথম বক্তৃতা। তিনি বলেন যে, সকল প্রকার নির্যাতনের ভয় উপেক্ষা করেই তিনি এই দায়িত্ব নিয়েছেন। তাছাড়া সমাজের অর্ধেকসংখ্যক নারী সমাজকেও দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আন্দোলনের শরীক করার ব্রত নিয়েই তিনি এ দায়িত্ব নিয়েছেন।
সম্প্রতি প্রদেশের বিভিন্ন জেলায় ১৫টি জনসভায় তাঁর বক্তৃতাদানের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে তিনি দাবী করেন যে, আপামর জনসাধারণ দেশে আইনের শাসন, ভােটের অধিকার, খাওয়া-পরার নিশ্চয়তা বিধানের জন্যে আন্দোলনমুখী হয়ে উঠেছে। দেশের অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন যে, সর্বত্র বর্তমানে খাদ্যাভাব রয়েছে। আগে যাদের দুটি লুঙ্গি কেনার সামর্থ ছিল আজ তাদের গামছা কেনারও সামর্থ নেই। তিনি বলেন যে, আওয়ামী লীগের দাবীই দেশের সর্ব মঙ্গলের দিশারী। তিনি মনে করেন যে, তাদের দাবীর পেছনে বিচ্ছিন্নবাদীতার কোন অবকাশ নেই। বরং এর দ্বারা দুই পাকিস্তানকে একসূত্রে গাঁথা হবে।
আওয়ামী লীগের অস্থায়ী সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম গত ৭ই জুনের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত, মৃত ব্যক্তিদের নাম ঘােষণা ও তাদের পরিবারবর্গকে ক্ষতিপূরণ দানের দাবী জানান। এছাড়া তিনি দেশের বর্তমান খাদ্যাভাব, বন্যা, দোলাই খাল ভরাটের কুফলের জন্যে সরকারকে দায়ী করেন। সভায় জনাব জহীরুদ্দীন, জনাব আবদুল মালেক উকিল, এম পি এ, জনাব নূরুল হক, এম পি এ, জনাব রফিক উদ্দীন ভূঁইয়া, জনাব নূরুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ বক্তৃতা করেন। সভায় গৃহীত প্রস্তাবে শেখ মুজিবর রহমানসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি, গ্রেফতারী পরােয়ানা ও মামলা প্রত্যাহার, ইত্তেফাক পত্রিকা পুনরায় চালু করার ব্যবস্থা, ইত্তেফাকের বেকার সাংবাদিক ও প্রেস কর্মচারীদের চাকুরীতে বহাল, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, ইত্তেফাক সম্পাদক জনাব তফাজ্জল হােসেন ও পশ্চিম পাকিস্তানের কবি আগা শােরেস কাশ্মীরীর মুক্তি দাবী করা হয়।
এছাড়া স্বল্পমূল্যে গরীব, চাষী, শ্রমিক ও নিম্ন বেতনভােগী কর্মচারীদের জন্যে পূর্ণ রেশনিং ব্যবস্থা, নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য হ্রাস, তথা মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, বন্যা রােধের জন্য ক্রুগমিশনের রিপাের্ট কার্যকরীকরণ, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রচুর পরিমাণে রিলিফ, শ্রমিক স্বার্থবিরােধী আইনসমূহ প্রত্যাহার, শুক্রবারের বদলে রােববার কল-কারখানা বন্ধ রাখার দাবী জানান হয়।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব