You dont have javascript enabled! Please enable it! 1966.05.22 | রাজনৈতিক কারণে দেশরক্ষা আইন প্রয়ােগ ও ক্ষোভ- বিভিন্ন দলের নেতা কর্তৃক সরকারী দমন নীতির নিন্দা | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক ইত্তেফাক
২২শে মে ১৯৬৬

রাজনৈতিক কারণে দেশরক্ষা আইন প্রয়ােগ ও ক্ষোভ
বিভিন্ন দলের নেতা কর্তৃক সরকারী দমন নীতির নিন্দা

আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের গ্রেফতারের নিন্দা ও তাহাদের বিনাশর্তে মুক্তি দাবী করিয়া গতকালও (বুধবার) বিরােধী দলীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ সংবাদপত্রে বিবৃতি দিয়াছেন। পাকিস্তান প্রতিরক্ষা বিধিবলে শেখ মুজিবর রহমান ও অন্যান্য নেতার গ্রেফতারের নিন্দা করিয়া পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগের (কাউন্সিলে) সহ-সভাপতি সৈয়দ খাজা খয়ের উদ্দিন, এম, এন, এবং সাধারণ সম্পাদক জনাব এ, কিউ, এম, শফিকুল ইসলাম ও যুগ্মসম্পাদক জনাব আতাউল হক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন যে, রাজনৈতিক পদ্ধতিতেই রাজনৈতিক বিরুদ্ধবাদীদের মােকাবিলা করা এবং জনগণকে কোন রাজনৈতিক দলের কার্যসূচীর পক্ষে বা বিপক্ষে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযােগ দেওয়া উচিত।
তাঁহারা বলেন যে, জনগণের অনুমােদন বা প্রত্যাখ্যানের জন্য যে কোন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচী ঘােষণার অধিকার রহিয়াছে। যদি কোন কর্মসূচী সত্য সত্যই জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী বিবেচিত হয় তাহা হইলে জনগণকেই সেই কর্মসূচীর বিরুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করিতে হইবে। বিবৃতিতে তাঁহারা বলেন যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য দেশরক্ষা আইনের প্রয়ােগ দেখিয়া আমরা অত্যন্ত দুঃখ বােধ করিতেছি। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের দাবাইয়া দেওয়ার জন্য দেশরক্ষা আইনের প্রয়ােগকে আমরা নিন্দা করি। আইন বিরােধী কোন কাজ তাঁহারা করিয়া থাকিলে দেশের স্বাভাবিক আইন দ্বারাই তাঁহাদের বিচার করা যাইত। কাউন্সিল লীগ নেতৃবৃন্দ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দসহ দেশরক্ষা আইনে আটক সকল বন্দীর মুক্তি দাবী করেন।
আবদুল মালেক উকিল
পি, পি, এ পরিবেশিত সংবাদে বলা হইয়াছে যে, পূর্ব পাকিস্তান পরিষদে বিরােধী দলীয় নেতা জনাব আবদুল মালেক উকিল গতকাল (বুধবার) মাইজদী কোর্ট হইতে এক তারবার্তায় পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দসহ দেশের উভয় অংশে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের গ্রেফতারের প্রতিবাদ করিযাছেন। তিনি বলেন যে, বিরােধী দলের নেতৃবৃন্দকে কারাপ্রাচীরের অন্তরালে নিক্ষেপ করিয়া গণ-অন্তরালে নিক্ষেপ করিয়া গণআন্দোলন দাবাইয়া রাখা যাইবে না।
তিনি শেখ মুজিবসহ গ্রেফতারকৃত সকল রাজনৈতিক নেতাকে মুক্তি দানের জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানান।
মওলানা আবদুর রহিম
পূর্ব পাকিস্তান জামাতে ইসলামীর আমির মওলানা আবদুর রহিম পাকিস্তান দেশরক্ষা বিধিবলে শেখ মুজিবর রহমান ও অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতার গ্রেফতারের নিন্দা করিয়াছেন।
তিনি বলেন, সরকারের এই কর্মপন্থা কেবল ব্যাপক অসন্তোষই সৃষ্টি করে নাই, আওয়ামী লীগের ৬-দফার প্রতি অহেতুক গুরুত্ব আরােপ করিয়াছে।
তিনি বলেন, প্রদেশের জনগণকে ৬-দফা কর্মসূচী ধীরস্থিরভাবে পর্যালােচনা করিয়া দেখার সুযােগ দেওয়া হইলে তাহারা হয়ত উহা প্রত্যাখ্যানই করিত। কিন্তু সরকারের নির্যাতনমূলক ব্যবস্থা ৬-দফার প্রবক্তাদের সাফল্যলাভেই সাহায্য করিবে। তিনি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দেশরক্ষা আইনের প্রয়ােগের তীব্র সমালােচনা করেন।
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের বিবৃতি
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব বজলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ মহকুমা আওয়ামী লীগের সম্পাদক জনাব মহিউদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব আফতাব উদ্দিন ভূঁইয়া এবং নারায়ণগঞ্জ মহকুমা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব আনসার আলী সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের গ্রেফতারে তীব্র নিন্দা করিয়াছেন। বিবৃতিতে তাঁহারা নেতৃবৃন্দকে অনতিবিলম্বে মুক্তিদানের দাবী জানান। তাহারা দেশের সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে রাজনৈতিক বিরােধীদের উপর দেশরক্ষা আইনের প্রয়ােগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানাের আহ্বান জানান। তাহারা আওয়ামী লীগ কর্মিগণকে আগামীকালের প্রতিবাদ দিবসকে সফল করিয়া তােলার আহ্বান জানান।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব