দৈনিক পয়গাম
১৭ই মে ১৯৬৬
বরিশালে আওয়ামী লীগ সভাপণ্ড
মুজিবের বক্তৃতার নামে জনসাধারণকে প্রতারণা
বরিশাল, ১৫ই মে। গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় আইয়ুব হলে ৬ দফার দাবীতে এক সভার আয়ােজন করা হয়। বিগত কয়েকদিন ধরিয়া শহর ও শহরতলীর সর্বত্র এবং মফস্বল হাট বন্দরসমূহে এই সভার বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। প্রচার করা হয় যে, জনাব শেখ মজিবর রহমান এবং অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এই সভায় বক্তৃতা করিবেন। জনাব শেখ মুজিবর সাহেব এবং তাঁহার দলীয় নেতারা যে গ্রেফতার হইয়াছিল এবং তাহাদের সভায় যােগদানের সম্ভাবনা নাই, এ কথা গােপন রাখা হয়। সভায় পূর্বের দিন সন্ধায় দেখা গেল যে, খুলনাগামী রকেট ষ্টীমার হইতে একমাত্র প্রাক্তন এম পি এ জনাব রফিক হােসেন ব্যতীত কেহই অবতরণ করলেন না ফলে উদ্যোক্তাদের মনে দারুণ হতাশার সৃষ্টি হয়। অবশ্য বে-গতিক বুঝিয়া তাহারা পূর্বেই সভার স্থান হেমায়েত উদ্দিন ময়দান হইতে আইয়ুব হলে স্থানান্তরিত করিয়াছিলেন। আইয়ুব হলে মাত্র হাজার খানেক লােকের স্থান সংকুলান হইতে পারে। জনাব শেখ মুজিব ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দের অনুপস্থিতি লক্ষ্য করিয়া অনেকেই চলিয়া যায় এবং সভাপতির আসন শূন্য রাখিয়া সভা পরিচালনা করা হয়।
বহিরাগত জনাব রফিক হােসেন ৬ দফার ব্যাখ্যা করিয়া বক্তৃতা করেন। এবং সভা শেষ না হইতেই সভা ত্যাগ করিয়া বৈকাল ৬টায় ঢাকার পথে রওয়ানা হয়। রাত্র ৮টা ৩০ মিঃ-এর সময় মাত্র তিনটি মশাল নিয়া ক্ষুদ্রতর একটি মশাল-শােভাযাত্রা শহর প্রদক্ষিণ করে। এই শােভাযাত্রার শ্লোগান ছিল ‘বাংগালীর জয় হউক জনসভা ও শােভাযাত্রায় উল্লেখযােগ্য সংখ্যক কতিপয় বিশেষ সম্প্রদায় লােকও প্রত্যক্ষ করা গিয়াছে। হলের বাহিরে সর্বসাকুল্যে দেড় হাজারের মত লােক এই সভায় উপস্থিত হইয়াছিল। এদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল বৈকাল বেলার ভ্রমণ প্রয়াসী কৌতূহলী দর্শক। সভা চলাকালীন কোন কোন লােকের মুখে তিন পয়সার পােষ্ট কার্ড-এর কথাও শুনা গিয়াছে।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব