দৈনিক পয়গাম
১৪ই মে ১৯৬৬
শুধুমাত্র একটি দাবীতে পরিণত হইবে?
অবশেষে আওয়ামী লীগের হীন চক্রান্ত ফাঁস
(ষ্টাফ রিপাের্টার)
পাকিস্তান প্রতিরক্ষা আইনে আটক শেখ মুজিবর রহমানের মুক্তি দাবীতে গতকল্য (শুক্রবার) অপরাহ্নে আউটার স্টেডিয়ামে আয়ােজিত জনসভা শ্রোতাদের জ্ঞান চক্ষু উন্মীলনে যথেষ্ট সহায়ক হইয়াছে।
নেতার গ্রেফতারের ফলে উত্তেজিত হইয়া ছাত্রলীগ ছাপ মারা অধিকাংশ বক্তাই (বর্তমানে ইহারা আওয়ামী লীগের জুনিয়ার নেতা) সিরাজদ্দৌলার ঢং এ বক্তৃতা করিতে যাইয়া দলের গােপন আদর্শ অবচেতন মনে ফাঁস করিয়া দিয়াছেন।
তাঁহারা পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা” দাবী করিয়াছে এবং আমেরিকার কুখ্যাত গােয়েন্দা বিভাগ সি, আই, এ এবং বৃটেনের যৌথ উদ্যোগে ক্ষমতা হইতে অপসারিত ঘানার একচ্ছত্র জননায়ক নকুমার ভাগ্য প্রেসিডেন্ট আইয়ুবকে বরণ করিতে হইবে বলিয়া ঘােষণা করিয়াছেন।
ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের এই জঘন্য ও হীন কাৰ্যকলাপ সমগ্র বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক দল কর্তৃক নিন্দিত হইলেও আওয়ামী লীগ এই ব্যাপারে নিশ্ৰুপ ছিল এবং তাহাদের বাহনটি বগল বাজাইয়া ছিল।
ছয় দফার প্রণেতারা কাদের স্বার্থে, কাদের জন্য এবং কাদের দ্বারা পরিচালিত হইতেছে এবং তাদের এই অবাস্তব দাবীর উপর কোন দেশের করুণা-ধারা অকৃপণভাবে বর্ষিত হইতেছে, সে সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব ও মুসলিম লীগ ছাড়াও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, জামাতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং কাউন্সিল মুসলিম লীগসহ সকল রাজনৈতিক দল জনসাধারণকে প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে হুঁশিয়ার করিয়া দিয়াছেন। গতকল্যকার জনসভায় উপস্থিত শ্রোতারা বক্তাদের বক্তৃতা শ্রবণ করিয়া আওয়ামী লীগের গােপন দর্শন সম্পর্কে অবহিত হওয়ার সুযােগ লাভ করিয়াছে।
অস্তিত্বহীন নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপর আল্লার গজব নামিয়া আসিয়াছে।” ভূমিকম্পে তাসখন্দ তছনছ হইয়া গিয়াছে।
কোন সুস্থ বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি কোন দেশের জনগণের উপর প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং বিপর্যয় সম্পর্কে এই জাতীয় হৃদয়হীন ও ক্রুড় উক্তি করিতে পারে দেখিয়া শ্রোতারা বিস্মিত ও হতবাক হইয়া পড়ে।
সভায় ১৯৫৪ সালের প্রথম দফার মত দায়িত্বহীন একটি প্রদেশ গ্রহণ করা হইয়াছে। প্রস্তাবে ২৫ বৎসরের জন্য জমির খাজনা মওকুফের দাবী জানান হইয়াছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পূর্ব পাকিস্তানের জন্য শতকরা ৯৮ ভাগ স্বায়ত্তশাসন প্রদানকারী সাবেক কেন্দ্রীয় উজির সভার শিক্ষা উজির জনাব জহীরুদ্দিনও সভায় বক্তৃতা করেন। তিনি পরােক্ষভাবে পূর্ব পাকিস্তানে বিচ্ছিন্নতার আন্দোলন শুরু করার হুমকি দেন। তিনি বলেন, “সরকার ছয় দফা না মানিলে আমরা এক দফার জন্য আন্দোলন শুরু করিতে বাধ্য হইব।” এক দফার আন্দোলনকে জহীরুদ্দিন কি বুঝাইতে চাহিয়াছেন?
তিনি তাসখন্দ চুক্তির সমালােচনা করিয়া বলেন যে, এই চুক্তির ফলে পাকিস্তানের সর্বনাশ হইয়াছে। এই কথা বলিয়াই তিনি ক্ষান্ত হন নাই। দুনিয়ার সর্বপ্রকার সভ্যতা ভব্যতা ও শালীনতার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ প্রদর্শন করিয়া জহীরুদ্দিন একজন পাকা আওয়ামী লীগ নেতার মানসিকতা লইয়া বলেন, “যে তাসখন্দে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হইয়াছে। ….
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব