You dont have javascript enabled! Please enable it! 1966.05.11 | নেতৃবৃন্দ কর্তৃক অবিলম্বে মুক্তি দাবী- মুজিবের গ্রেফতারের প্রতিবাদ অব্যাহত | আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

আজাদ
১১ই মে ১৯৬৬

নেতৃবৃন্দ কর্তৃক অবিলম্বে মুক্তি দাবী
মুজিবের গ্রেফতারের প্রতিবাদ অব্যাহত
(ষ্টাফ রিপাের্টার)

পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব শেখ মুজিবর রহমানসহ সাতজন আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে গতকল্য মঙ্গলবার পূৰ্ব্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বায়তুল মােকাররম হইতে এক প্রতিবাদ মিছিল বাহির হয়। মিছিলে অংশগ্রহণকারীগণ রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তা পরিভ্রমণ কালে বিভিন্ন স্থানে পথসভা করে। পথসভায় বিভিন্ন বক্তা শেখ মুজিবর রহমান ও সকল রাজবন্দীদের মুক্তি দাবী করে এবং বর্তমান খাদ্য পরিস্থিতির তীব্র সমালােচনা করিয়া অবিলম্বে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য হ্রাস করার দাবী জানায়। বিভিন্ন বক্তা অবিলম্বে জরুরী আইন প্রত্যাহার, সংবাদপত্রের উপর জারীকৃত বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ছাত্র মিছিল ও পথসভা
গতকল্য রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রগণ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বাহির করে এবং বিভিন্ন ধ্বনি সহকারে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তা পরিভ্রমণ করেন। এইদিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যান্টিনে ছাত্রগণ একটা প্রতিবাদ সভায় মিলিত হয়।

নারাগণগঞ্জে ছাত্র ধর্মঘট
(নিজস্ব সংবাদদাতা প্রেরিত)
নারায়ণগঞ্জ, ১০ই মে। – অদ্য আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবর রহমান ও আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতাসহ সকল বন্দীদের মুক্তির দাবীতে স্থানীয় সমস্ত স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী ধর্মঘট করে। তাহারা বেলা ২ ঘটিকার সময় “শেখ মুজিবের মুক্তি চাই”, “৬-দফা মানতে হবে”, “রাজবন্দীদের মুক্তি চাই” প্রভৃতি ধ্বনি সহকারে শহরের প্রধান প্রধান রাস্তা প্রদক্ষিণ করে। তাহাদের সঙ্গে অনেক পথচারী জনসাধারণও মিছিলে শামিল হইয়া তাহাদের দাবীকে আরাে জোরদার করে।
নেতৃবৃন্দ কর্তৃক মুক্তি দানের দাবী
গত রবিবার দিবাগত রাত্রে জনাব শেখ মুজিবর রহমানসহ ৭ জন আওয়ামী লীগ নেতার গ্রেফতারের ফলে ঢাকা ও প্রদেশের বিভিন্ন স্থান হইতে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের সংবাদ পাওয়া যাইতেছে। ইতিমধ্যেই ঢাকাস্থ অবস্থানরত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এই গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানাইয়াছেন এবং অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দাবী করিয়াছেন। এইসব নেতৃবৃন্দের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক উজিরে আলা জনাব নুরুল আমিন, জাতীয় পরিষদের বিরােধী দলের সহকারী নেতা জনাব শাহ আজিজুর রহমান, ন্যাশন্যাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আলতাফ হােসেন, নেজামে এছলাম নেতা জনাব ফরিদ আহম্মদ প্রমুখ।
ইতিমধ্যে দিনাজপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ প্রভৃতি স্থান হইতে গ্রেফতারের প্রতিবাদের খবর আসিয়া পৌছিয়াছে।
ইহাছাড়া তেজগাঁও ও নারায়ণগঞ্জের শিল্প এলাকায় শ্রমিকদের পক্ষ হইতে গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানান হইয়াছে। অন্যদিকে প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রসমাজের মধ্যেও এই গ্রেফতারের ফলে ক্ষোভের সঞ্চার হইয়াছে। এমনকি কোন কোন স্থানে ছাত্ররা ক্লাসে যােগদান হইতে বিরত থাকে।
প্রতিবাদ দিবস
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ সভাপতি জনাব শেখ মুজিবর রহমান ও অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতার গ্রেফতারের প্রতিবাদে আগামী ১৩ই মে শুক্রবার প্রদেশব্যাপী আওয়ামী লীগের উদ্যোগে প্রতিবাদ দিবস পালন করা হইবে বলিয়া গতকাল মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের এক প্রেস রিলিজে প্রকাশ করা হইয়াছে। এই উপলক্ষে শুক্রবার ১৩ই মে বৈকাল ৪ ঘটিকায় “প্রতিবাদ দিবস” উপলক্ষে ঢাকার আউটার স্টেডিয়ামে এক জনসভা আহ্বান করা হইয়াছে।
এই দিন প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে জনসভা অনুষ্ঠান ও শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ মিছিল বাহির করিবার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হইতেছে বলিয়া আওয়ামী লীগ সূত্রে জানান হইয়াছে।
আলীম আল-রাজীর বিবৃতি
গতকল্য মঙ্গলবার পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্বতন্ত্র দলীয় সদস্য ডক্টর মুজিবর রহমান ও অন্যান্য আওয়ামী নেতৃবৃন্দের গ্রেফতারকে সরকার কর্তৃক ক্ষমতার “যথেচ্ছ অপব্যবহার” বলিয়া অভিহিত করেন। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ ও শাসনতান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে মতামত প্রকাশ একটা স্বাধীন। দেশের প্রতিটি নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার।
সম্প্রতি যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতির মােকাবেলায় পাকিস্তান। দেশরক্ষা আইন সাধারণ ব্যবস্থার একটি ব্যতিক্রম মাত্র। তাই শান্তিপূর্ণ সময়ের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অথবা দলের বিরুদ্ধে এই আইন প্রয়ােগ মােটেই বাঞ্ছনীয় নয়। এই ধরনের ব্যবস্থা কখনই জাতীয় স্বার্থকে জোরদার করিবে না। ডক্টর রাজী অবিলম্বে দেশরক্ষা আইনে গ্রেফতারকৃত নেতৃবৃন্দের মুক্তি দাবী করেন।
মওলানা তর্কবাগিশের প্রতিবাদ
গতকল্য মঙ্গলবার পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য মওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগিশ এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানাইয়াছেন। তিনি অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত নেতৃবৃন্দের মুক্তি দাবী করেন।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব