দৈনিক পাকিস্তান
১২ই মে ১৯৬৬
জামাত নেতা কর্তৃক মুজিবের মুক্তি দাবী
আবেগ বর্জিত পরিবেশে বিচার করিতে দিলে ৬-দফার মৃত্যু ঘটিবে
(ষ্টাফ রিপাের্টার)
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতাকে দেশরক্ষা আইনবলে গ্রেফতার করার তীব্র প্রতিবাদ করিয়া পূর্ব পাকিস্তান জামাতে ইসলামীর আমীর মওলানা মােহাম্মদ আবদুর রহিম এক বিবৃতিতে বলেন যে, “সরকার যদি বিশেষ একটি পার্টির প্রােগ্রামের উপর খড়গহস্ত হইয়া নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করেন তাহা হইলে জনগণের মানসিকতা স্বভাবতঃই উহার দিকে ঝুঁকিয়া পড়ে। ফলে সেই প্রােগ্রামই অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করিতে সক্ষম হয়।”
জামাতে ইসলামীর বিবৃতিতে বলা হয় যে, দেশরক্ষা আইনের সাহায্যে রাজনৈতিক বিরােধিতার প্রতিশােধ গ্রহণ করা সবসময়েই ঘৃণার্থ ও প্রতিবাদযােগ্য।
মওলানা আবদুর রহিম আরও বলেন যে, জামাতে ইসলামী ও অন্যান্য রাজনৈতিক পার্টি ৬-দফার অন্তর্নিহিত দোষ-ত্রুটি ও মারাত্মক পরিণতির কথা প্রকাশ্যভাবে জনগণের মধ্যে ইতিমধ্যেই পেশ করিয়াছে। গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক দলসমূহের প্রােগ্রাম জনগণের সামনে পেশ করার অধিকার একটি মানবিক নাগরিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার।
জামাতে ইসলামীর মতে ৬-দফা দাবীর যথার্থতা জনগণ যদি আবেগশূন্য পরিবেশে বিচার করিবার সুযােগ পাইত তবে ৬ দফা আপনাআপনিই মৃত্যুবরণ করিত।
বিবৃতিতে তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও পশ্চিম পাকিস্তানের কাউন্সিল মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দকে অবিলম্বে মুক্তি প্রদান ও জরুরী অবস্থা প্রত্যাহারের দাবী জানান।
গতকল্য বুধবার পূর্ব পাকিস্তান কাউন্সিল মুসলিম লীগের সহসভাপতি খাজা খয়ের উদ্দিন এম এন এ, সাধারণ সম্পাদক জনাব এ, কিউ, এম, শফিকুল ইসলাম ও যুগ্ম-সম্পাদক জনাব আতাউল হক এক যুক্ত বিবৃতিতে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতার গ্রেফতারের প্রতিবাদ করিয়া সকল রাজবন্দীদের মুক্তি দাবী করেন।
ছাত্র নেতৃবৃন্দের বিবৃতি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সভাপতি জনাব বােরহান উদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুদ্দৌল্লা পাহলােয়ান, সলিমুল্লাহ হলের সহ-সভাপতি মােহাম্মদ ইব্রাহিম, ইকবাল হলের সহ-সম্পাদক আলী হায়দার খান, সাধারণ সম্পাদক মােহাম্মদ ইয়াহিয়া, ফজলুল হক হলের সহ-সভাপতি আমিনুর রশিদ, রােকেয়া হলের সহ-সভানেত্রী রওশন আখতার বানু, সাধারণ সম্পাদিকা আখতার জাহান বেগম, ছাত্রলীগের আবদুর রাজ্জাক, ছাত্রশক্তির আনিসুর রহমান, ছাত্র ইউনিয়নের রাশেদ খান মেনন ও মতিয়া চৌধুরী এক যুক্ত বিবৃতিতে রাজবন্দীদের মুক্তি দাবী করেন এবং ১৩ই মে শুক্রবার ধর্মঘট আহ্বান করেন।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব