আজাদ
৮ই মে ১৯৬৬
সিলেটে শেখ মুজিব বলেন :
হয়রানির মাধ্যমে ন্যায্য দাবীর গতিরােধ করা যায় না
(সংবাদদাতা প্রেরিত)
সিলেট, ৭ই মে।-গতকল্য শুক্রবার বিকালে স্থানীয় কোর্ট ময়দানে সিলেটের স্মরণীয়কালের বৃহত্তম জনসভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবর জুলুম ও হয়রানি দ্বারা ন্যায্য গণদাবীর সংগ্রামের গতিরােধ করা যায় না বরং আন্তরিকতার সঙ্গে দাবী-দাওয়া বিবেচনা করিয়া মানিয়া লওয়ার মাধ্যমেই জনসাধারণের আস্থা অর্জন করা সম্ভব।
স্বীয় মামলার ব্যাপারে গতকাল শেখ মুজিবর রহমান সিলেট আগমন করেন। বিকাল ৩টা হইতে জনতা প্রখর রৌদ্রতাপ উপেক্ষা করিয়া কোর্ট ময়দানে সমবেত হইতে থাকে। এক ঘণ্টার মধ্যে সারা ময়দান লােকে লােকারণ্য হইয়া যায়। “শেখ মুজিব জিন্দাবাদ,” “ছয়দফা মানতে হবে, “শেখ মুজিবকে হয়রানি করা চলবে না” ইত্যাদি ধ্বনি সহকারে জনতা সভায় সমবেত হইতে থাকে। এই বিরাট জনসভায় সভাপতিত্ব করেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব আবদুল হাই এডভােকেট। জনসভায় পূৰ্ব্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজউদ্দিন আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব মিজানুর রহমান চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক জনাব আবদুল মােমিন, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য জনাব জালাল উদ্দিন খান, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ জনাব নুরুল ইসলাম চৌধুরী বক্তৃতা করেন।
জনসভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবর রহমান ৬ দফার পুংখানুপুংখ বিশ্লেষণ করেন। বিগত ১০ দিনের পাক-ভারত যুদ্ধের অভিজ্ঞতা প্রসূত ৬ দফা দাবী বাস্তবায়নের জন্য নিয়মতান্ত্রিক সংগ্রাম শুরুর প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য তিনি জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন যে, জনসাধারণের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মুখে কোন সরকারই গণদাবীকে উপেক্ষা করিতে অতীতেও পারে নাই এবং ভবিষ্যতেও পারিবে না। তিনি ৬-দফার সমালােচকদের উদ্দেশ্য করিয়া বলেন যে, ৬-দফা বাস্তবায়নের মধ্যেই পাকিস্তানের সংহতি নিহিত। ৬-দফার বিরােধিতা করিয়া দেশের সংহতি জোরদার করা যাইবে না বলিয়াও তিনি মন্তব্য করেন।
বক্তৃতা প্রসঙ্গে শেখ মুজিবর রহমান বলেন যে, জনতার সংগ্রামের ফলে ৬ দফা অবশ্যই আদায় হইবে। তিনি বলেন যে, ৬ দফা আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগ উহার নিজস্ব কর্মসূচী অনুযায়ী দেশে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েমের মাধ্যমে শােষণমুক্ত সমাজ গড়ার সংগ্রাম করিয়া যাইবে।
শেখ মুজিবর রহমান বলেন যে, বর্তমানে সরকারের আমলে গণদাবী আদায়ের সংগ্রামের জন্য জননেতা ও রাজনৈতিক কর্মীদেরই শুধু হয়রানি করা হয় না বরং গণদাবী প্রতিফলনের জন্য সংবাদপত্রসমূহেরও হয়রানি পােহাতেই হইতেছে।
জনসভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজউদ্দিন আহমদ লেভীর কঠোর সমালােচনা করিয়া অনতিবিলম্বে লেভীর ক্রয়মূল্যে খাদ্যদ্রব্য বাজারে ছাড়ার দাবী জানান।
জনসভায় গৃহীত প্রস্তাবে ৬ দফার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করা হয়। নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করিয়া সভায় প্রদেশে অনতিবিলম্বে রেশনিং ব্যবস্থা প্রবর্তনের জোর দাবী জানান হয়। শেখ মুজিবর রহমানের হয়রানির তীব্র নিন্দা করিয়া গৃহীত প্রস্তাবে অনতিবিলম্বে হয়রানিমূলক ব্যবস্থাসমূহের প্রত্যাহার দাবী জানান হয়।
অপরাপর প্রস্তাবে নওয়াবজাদা নসরুল্লা খান, মালিক গােলাম জিলানী ও খাজা রফিকসহ আটক সকল রাজবন্দীর মুক্তি ‘আজাদ’, ‘ইত্তেফাক’ প্রভৃতি সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে গৃহীত হয়রানিমূলক ব্যবস্থা প্রত্যাহার, লেভি প্রথা ও টেপাতা অর্ডিন্যান্স প্রত্যাহার ও সেটেলমেন্টের ভুলভ্রান্তি দূর করার দাবী জানান হয়।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব