আজাদ
২৫শে এপ্রিল ১৯৬৬
পল্টনের বিরাট জনসভায় দৃপ্ত ঘােষণা :
ছয়দফা প্রস্তাব পাকিস্তানের গণশক্তির মুক্তির সনদ
(ষ্টাফ রিপাের্টার)
গতকল্য (রবিবার) আওয়ামী লীগের উদ্যোগে পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক বিরাট জনসভায় ৬-দফা প্রস্তাবকে পাকিস্তানের গণশক্তির ‘মুক্তির সনদ হিসাবে অভিহিত করিয়া প্রস্তাব গৃহীত হয়।
তুমুল হর্ষধ্বনির মধ্যে সভায় গৃহীত অপর এক প্রস্তাবে বিরােধী দলীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও কর্মী এবং ছাত্রসমাজের উপর আরােপিত সমুদয় রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার ও বিনাবিচারে আটক সমস্ত রাজবন্দীর মুক্তি দাবী করা হয়।
পূৰ্ব্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব শেখ মুজিবর রহমানের উপর “অযথা হয়রানি ও অত্যাচারের তীব্র প্রতিবাদ জানাইয়া সভায় আর একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। গতকল্যকার এই সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে কেহই সভাপতিত্ব করেন নাই। কেননা পূর্ব ঘােষিত সভাপতি ও প্রধান বক্তা জনাব শেখ মুজিবর রহমান মােমেনশাহীতে আটক রহিয়াছেন।
তাঁহার প্রতি সম্মান প্রদর্শনস্বরূপ সভাপতির আসন সংখ্যা শূন্য রাখা হয় এবং হাফেজ হাবিবুর রহমান সভার কার্য পরিচালনা করেন। গতকল্যকার জনসভায় মরহুম সােহরওয়ার্দীর পুত্র জনাব রাশেদ সােহরওয়ার্দী উপস্থিত ছিলেন।
গতকল্য বৈকালে বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এই সভায় বিপুলসংখ্যক জনসমাবেশ হওয়ায় ৬-দফার প্রতি জনসাধারণের আগ্রহের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়াছে বৈকি।
সম্প্রতি জনাব শেখ মুজিবর রহমানকে বিভিন্ন স্থানে নাটকীয়ভাবে গ্রেফতারও ইহার অন্যতম কারণ। এখানে উল্লেখ করা যাইতে পারে যে, ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকা-বিশেষ করিয়া নারায়ণগঞ্জ, ফতুল্লা, মীরপুর, সাভার ও তেজগাঁ প্রভৃতি এলাকা হইতে বহু সংখ্যক লােক বাসযােগে এই সভায় আগমন করেন। ইহা ছাড়া বিভিন্ন মহল্লা হইতে ফেষ্টুন ও পতাকা বহন করিয়া বেশ কয়েকটি খণ্ড মিছিল এই জনসভায় যােগ দেয়। সভা শেষে এক মিছিল বিভিন্ন ধ্বনি সহকারে শেরে বাংলা ও মরহুম সােহরওয়ার্দীর মাজার পরিদর্শন করে।
খােন্দকার মােস্তাকের বক্তৃতা
সভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে জনাব মােস্তাক আহমদ বলেন যে, পাকিস্তানের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক কাঠামাে ও বুনিয়াদ শক্ত করিয়া গড়িয়া তুলিবার জন্য আমরা ৬-দফা উত্থাপন করিয়াছি।
জহুর আহমদ চৌধুরী
বক্তৃতাদানকালে চট্টগ্রামের জনাব জহুর আহমদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের জনসাধারণ কোনদিন এবং কোন কালে কারাে গােলামী করে নাই এবং ভবিষ্যতেও করিবে না। তিনি বলেন, ইহার প্রমাণ ইতিহাসে আছে।
জনাব মিজানুর রহমান
জাতীয় পরিষদের সদস্য জনাব মিজানুর রহমান পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সর্বক্ষেত্রে বৈষম্যের খতিয়ান উল্লেখ করিয়া বলেন যে, আজ ১৮ বৎসর ধরিয়া পূর্ব পাকিস্তান তাহার ন্যায্য পাওনা হইতে বঞ্চিত রহিয়াছে। তিনি বলেন, ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৭ দিনের রক্ত ও সম্পদক্ষয়ী যুদ্ধের অভিজ্ঞতার আলােকে সুষ্ঠু ও বৃহত্তর জাতীয় সংহতি স্থাপনের নিমিত্ত জনাব শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রণীত।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব