You dont have javascript enabled! Please enable it! 1966.04.10 | নির্যাতনের কষাঘাতই দেশবাসীকে সাফল্যের স্বর্ণদ্বারে পৌছাইয়া দিবে- সংগ্রামী শপথদীপ্ত বগুড়াবাসীর প্রতি শেখ মুজিবের আশ্বাস | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক ইত্তেফাক
১০ই এপ্রিল ১৯৬৬

নির্যাতনের কষাঘাতই দেশবাসীকে সাফল্যের স্বর্ণদ্বারে পৌছাইয়া দিবে
সংগ্রামী শপথদীপ্ত বগুড়াবাসীর প্রতি শেখ মুজিবের আশ্বাস
(ইত্তেফাকের বিশেষ প্রতিনিধি)

বগুড়া, ৯ই এপ্রিল।-পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবর রহমান গতকাল এই ছােট্ট শহরের বুকে অর্ধলক্ষাধিক লােকের এক সভায় ঘােষণা করেন যে, বহু ত্যাগ ও সংগ্রামের মাধ্যমে এই দেশের জনগণ তাহাদের স্বাধীনতা অর্জন করিয়াছে। সুতরাং জনগণকেই ইহার ফল ভােগ করিতে দিতে হইবে। স্বার্থান্বেষী মহল কিংবা তাহাদের ক্রীড়নকদের রাজত্বের জন্য দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয় নাই। | স্থানীয় এডওয়ার্ড পার্কে গতকাল আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়ােজিত এই জনসভায় শ্রোতৃমণ্ডলীর বিপুল হর্ষধ্বনির মধ্যে শেখ সাহেব উপরােক্ত ঘােষণা করেন। তিনি বলেন যে, শােষণ ও বিশ্বাসঘাতকতার চির অবসান ঘটাইবার জন্য আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত সংগ্রাম চালাইয়া যাইবে। শ্রমিককৃষক-বুদ্ধিজীবী তথা সকল শ্রেণীর, নাগরিকের এই সভা শ্ৰোতৃমণ্ডলীর পীড়াপীড়িতে রাত্র ১০টা পর্যন্ত অব্যাহত রাখিতে হয়। এই মহতি জনসভার হমাধ্যমে অধিকার আদায়ের আন্দোলনে প্রদেশের এই ছােট্ট শহরের মানুষের চোখেমুখে দৃপ্ত শপথের যে অভিব্যক্তি ঘটে, তাহা লক্ষ্য করিলেই বুঝা যাইবে দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তাহারা কতখানি উদ্বিগ্ন ও আগ্রহী। তাহারা জানেন, তাঁহাদের অভীষ্ট লক্ষ্য একদিন অর্জিত হইবেই- অবসান ঘটিবে বর্তমান অমানিশার। সেই দিন আর দূরে নয়। সভার প্রধান বক্তা পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবর রহমান তুমুল হর্ষধ্বনির মধ্যে বক্তৃতা করিতে উঠিয়া ঘােষণা করেন যে, শােষণের যাঁতাকল হইতে দেশবাসীকে মুক্ত করাই আওয়ামী লীগের নীতি। ৬-দফা কর্মসূচী একাধারে পাকিস্তানের জনগণের মুক্তিসনদ,এই অভিমত প্রকাশ করিয়া শেখ সাহেব তাঁহার দীর্ঘ বক্তৃতায় এক এক করিয়া ৬-দফার ব্যাখ্যাদান করেন। তিনি বলেন যে, ইহা কোন দলের প্রয়ােজনে প্রণীত রাজনৈতিক কর্মসূচী নয়-পাকিস্তানকে সত্যিকারভাবে শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যেই এই কর্মসূচী গ্রহণ করা হইয়াছে। প্রকৃত রাজনৈতিক মনােভাব লইয়াই ইহার বিচার করিতে হইবে। জনগণকে কোন পথে লইয়া যাওয়া হইতেছে, তাহা ভাবিয়া দেখার জন্য তিনি জনসাধারণের নিকট আহ্বান জানান।
শেখ সাহেব ঘােষণা করেন যে, আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে বলিয়া ভারতকে পাকিস্তানের ভূমি দখল করিতে দিবে একথা কেবল তাঁহারাই বলিতে পারেন যাহারা দেশ ও দশের স্বার্থে বিশ্বাস করেন না, কেবল ব্যক্তিস্বার্থই চিনেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানের কোন নাগরিক ভারতের নিকট পাকিস্তানকে বিকাইয়া দিতে পারেন, একথা কেবল তাহারাই বলিতে পারেন, যাহারা দেশ ও দশের স্বার্থ পদদলিত করিয়া কেবল স্বীয় ভাগ্য গড়িতেই অভ্যস্ত। তুমুল হর্ষধ্বনির মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রধান ঘােষণা করেন, “সীমান্ত পার হইতে বিপদ যদি আসে, তবে সেই দিনই দেখা যাইবে মাতৃভূমির পবিত্রতা রক্ষার জন্য কোন দল কত খুন দিতে পারে।” দেশের ক্রমবর্ধমান বেকার সমস্যা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথিত মতে রক্ষা ব্যবস্থার জন্য বাহিরের উপর পূর্ব পাকিস্তানের নির্ভরশীলতায় শেখ সাহেব গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সরকার ফারাক্কা বাঁধের ব্যাপারে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করিতেছেন তাহা প্রকাশ্যে ঘােষণা করার জন্য তিনি সরকারের নিকট দাবী জানান। তিনি বলেন যে, সমগ্র উত্তরবঙ্গকে মরুভূমিতে পরিণত করাই ফারাক্কা বাঁধের উদ্দেশ্য। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানের ভূমির উর্বরতা বৃদ্ধির আজতক তেমন কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয় নাই। এখনও আমরা শুধুমাত্র প্রকৃতির কৃপার উপরই নির্ভর করিতেছি।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব