You dont have javascript enabled! Please enable it! 1966.04.11 | ৬-দফার সমর্থনে রংপুরে গণজাগরণ: অকুতােভয় সংগ্রাম পরিচালনার জন্য শেখ মুজিবের আহ্বান | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক ইত্তেফাক
১১ই এপ্রিল ১৯৬৬

৬-দফার সমর্থনে রংপুরে গণজাগরণ
অকুতােভয় সংগ্রাম পরিচালনার জন্য শেখ মুজিবের আহ্বান
(বিশেষ প্রতিনিধি প্রেরিত)

রংপুর, ৯ই এপ্রিল। আজ এখানে এক বিশাল জনসমাবেশে বক্তৃতাকালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবর রহমান দেশবাসীর প্রতি প্রবঞ্চনাকারীদের উৎখাত করিবার জন্য সকল স্থানের মানুষকে কাঁধে কাঁধ মিলাইয়া অকুতােভয় সংগ্রাম চালনার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এই প্রবঞ্চনাকারীরা আজ শােরগােল তুলিয়াছে; কিন্তু ইহাদের আওয়াজ দেশবাসীকে স্তব্ধ করিয়া দিতে হইবে। এখানে উল্লেখযােগ্য যে, ১৯৬২ সালে কারামুক্তির পর ঝটিকা সফরে আগমন করিয়া মরহুম জনাব সােহরাওয়ার্দী কর্তৃক অনুষ্ঠিত সভা ছাড়া এত বড় জনসমাবেশ রংপুরে আর হয় নাই।
শ্রোতা কি বলেন
সভাশেষে জনৈক সরকারী কর্মচারী আমাকে বলেন যে, অতীতে এমন সাফল্যজনক সভা আর এখানে হয় নাই এবং এ ধরনের কয়েকটি সভার অনুষ্ঠান করিতে পারিলে গােটা জেলার মানুষ আওয়ামী লীগের পতাকাতলে সমবেত হইবে। তিনি বলেন, শেখ সাহেবের বলিষ্ঠ এবং যুক্তিপূর্ণ বক্তৃতা শুনিয়া তিনি মুগ্ধ হইয়াছেন এবং তিনি বিশ্বাস করেন, অন্যাদের তার মতই প্রতিক্রিয়া হইয়াছে।
মানুষ আর মানুষে শহর আচ্ছন্ন
আওয়ামী লীগের এই মহতী সভায় যােগদানের জন্য যে উৎসাহ-উদ্দীপনার সহিত দুঃখ-দুর্দশার কষাঘাতে নিষ্পেষিত মানুষ কাতার বন্দী হইয়া সভাস্থলে গমন করে। তাহার তুলনা কোথায়? শুধু কি তাই, শহরের বাড়ীগুলির ছাদে, বারান্দায়, ব্যালকনীতে, উচ্চস্থানে, গাছে-যে যেখানে স্থান করিতে পারিয়াছেন তথা হইতে নির্দিষ্ট মনে বাংলার সংগ্রামী সন্তান শেখ মুজিবের বক্তৃতা শ্রবণ করেন। জলদগম্ভীরস্বরে শেখ মুজিবের কণ্ঠ-নিসৃত প্রতিটি কথা ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হইয়া নির্দিষ্টমনা শ্রোতাদের প্রাণে ঝঙ্কার তােলে। এই সভায় যােগদানের জন্য আট মাইল দূর হইতে সাত হাজার বিড়ি শ্রমিক শােভাযাত্রা করিয়া আগমন করে। শেখ মুজিব তাহার ছয়দফা কর্মসূচীর এমনি প্রবল ও যুক্তিসহ ব্যাখ্যাদান করেন যে, সভাশেষে প্রত্যেকটি লােকের মুখে শুধু ছয়-দফার কথাই শুনা যায়। শেখ মুজিব বলেন, আমাদের সংগ্রাম তাহাদের বিরুদ্ধে যাহারা পূর্ববাংলার মানুষকে শােষণ করিয়াছে, বঞ্চনা করিয়াছে। এখানে যে সমস্ত মােহাজের আগমন করিয়াছে তাহাদেরও একই দশা। তাহারাও বঞ্চিত, রিক্ত। সুতরাং স্থানীয়দের সহিত এক কাফেলায় তাহাদেরও শামিল হওয়া ছাড়া দ্বিতীয় কোন পথ খােলা নাই। তিনি বলেন, ছয়-দফা কোন দলীয় কর্মসূচী নহে, ইহা বর্তমান বিধিব্যবস্থার পুনঃবিন্যাস করিয়া নয়া সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ম্যাগ্নাকার্টা। ইহাতে গােপন কিছুই নাই, যে-কেহ ভােলা চক্ষে ইহা নিরিখ করিতে পারেন।
হুশিয়ার!
শেখ মুজিব হুশিয়ারী উচ্চারণ করিয়া বলেন, যদি বর্তমান স্বেচ্ছাচারী ব্যবস্থা অব্যাহত থাকিতে দেওয়া হয়, তবে দেশ ধ্বংস হইবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দোহাই পাড়িয়া আজ যে অবস্থার সৃষ্টি করা হইয়াছে, তাহাতে দুর্নীতি গােটা সমাজজীবনকে কলুষিত করিয়া তুলিয়াছে। পরিবেশ আজ এমনই বিষাক্ত যে, এখন রাজনীতিকে টাকা রােজগারের যন্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা হইতেছে। বর্তমানে একশ্রেণীর টাউট সৃষ্টি হইয়াছে-যাহারা তাহাদের রাজনৈতিক প্রভুদের গৃহভৃত্যের মত কাজ করিতে শুরু করিয়াছে। কিন্তু রাজনীতিকে এই পঙ্কিলতামুক্ত করিয়া মানুষকে তার অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযােগ অবশ্য দিতে হইবে। শেখ মুজিব বলেন, ৬-দফার বিরুদ্ধবাদীদের হাতে ক্ষমতা ..

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব