দৈনিক ইত্তেফাক
৮ই এপ্রিল ১৯৬৬
জনগণই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী
নগরবাড়ীতে শেখ মুজিবের বিপুল সম্বর্ধনা
(বিশেষ প্রতিনিধির তার)
পাবনা, ৭ই এপ্রিল।- পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবর রহমান সদলবলে আজ মধ্যাহ্নে উত্তরবঙ্গের প্রবেশপথ নগরবাড়ী পৌছিলে হাজার হাজার লােকের একবিরাট জনতা তাহাদের বিপুল সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করে।
সম্বর্ধনা জ্ঞাপনকারী হর্ষোৎফুল্ল জনতার মুহুর্মুহু করতালির মধ্যে শেখ মুজিব এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেন যে, জনগণই নিজেদের তথা দেশের ভাগ্যনিয়ন্তা। সুতরাং পাকিস্তানের কল্যাণ ও সমৃদ্ধির জন্য এক-ব্যক্তি শাসনের অবশ্যই অবসান দরকার। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সফর উপলক্ষে ক্ষুদ্র নদী-বন্দর নগরবাড়ীতে আজ এক অভূতপূর্ব প্রাণচাঞ্চল্য পরিলক্ষিত হয়। চৈত্রের প্রচণ্ড খরতাপ ও ধূলিমলিন বায়ুপ্রবাহ উপেক্ষা করিয়াও হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন ধ্বনির মাধ্যমে নগরবাড়ীর আকাশবাতাস মুখরিত করিয়া তােলে। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে লইয়া ফেরি ষ্টিমার ‘গােমতী’ যখন জেটির দিকে অগ্রসর হয়, তখন নদীতীরে কেবল মানুষ আর মানুষ ছাড়া কিছুই দৃষ্ট হয় নাই।
সােহরাওয়ার্দী তােরণ
নেতৃবৃন্দকে সম্বর্ধনা জ্ঞাপনের জন্য মরহুম জনাব হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর নামে একটি মনােরম তােরণ নির্মাণ করা হয়। পাবনা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও কর্মিগণ পুষ্পমাল্য হস্তে তােরণটির পার্শ্বে অপেক্ষারত থাকেন। ফেরি হইতে নেতৃবৃন্দের অবতরণের সঙ্গে সঙ্গে তাঁহাদের মাল্যভূষিত করা হয় এবং মুহুর্মুহু হর্ষধ্বনির মধ্যদিয়া জনতা আনন্দে ফাটিয়া পড়ে। জনগণ একবিরাট শােভাযাত্রা সহকারে নেতৃবৃন্দকে লইয়া অগ্রসর হয়। মধ্যাহ্নে ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় শেখ মুজিবকে প্রদত্ত এক মানপত্রে তাঁহার নেতত্বে অকুণ্ঠ আস্থা জ্ঞাপন এবং জনসাধারণের হৃত অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠাকল্পে সংগ্রাম চালাইয়া যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প প্রকাশ করা হয়। প্রচণ্ড তাপ ও ধূলিঝড়ের মধ্যেও সভা অব্যাহত থাকে। আগ্রহাকুল জনতার বিপুল হর্ষধ্বনি ও করতালির মধ্যে বক্তৃতা প্রসঙ্গে শেখ মুজিবর রহমান ঘােষণা করেন যে, একমাত্র জনসাধারণই নিজেদের তথা দেশের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। তিনি বলেন, দেশকে স্বাবলম্বী ও সমৃদ্ধিশালী রূপে গড়িয়া তুলিতে হইলে এক-ব্যক্তি শাসনের অবশ্যই অবসান দরকার। এই প্রসঙ্গে তিনি ৬-দফা কর্মসূচী ব্যাখ্যা করেন। তিনি কর্মীদের প্রতি গণতান্ত্রিক দাবী-দাওয়া আদায়ের জন্য নিয়মতান্ত্রিক সংগ্রাম চালাইয়া যাওয়ার আহ্বান জানান। শেখ মুজিবের সঙ্গে রহিয়াছেন খােন্দকার মােশতাক আহমদ, জনাব তাজুদ্দিন আহমদ, জনাব নূরুল ইসলাম চৌধুরী, জনাব মীজানুর রহমান চৌধুরী, এডভােকেট আবদুল মােমেন ও শাহ মােয়াজ্জেম। নেতৃবৃন্দ অপরাহ্ন আড়াইটায় পাবনা পৌঁছেন। বৈকালে স্থানীয় টাউন হল ময়দানে এক জনসভায় তাঁহারা বক্তৃতা করেন (পাবনার সম্বর্ধনা ও জনসভার বিবরণ গভীর রাত্রি পর্যন্ত পাওয়া যায় নাই)। আগামীকাল সকালে তাঁহারা বগুড়া গমন। করিবেন এবং এডওয়ার্ড পার্কে এক জনসভায় বক্তৃতা করিবেন।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব