আজাদ
১৯শে মার্চ ১৯৬৬
আওয়ামী লীগ কাউন্সিল অধিবেশনে ৬-দফার তাৎপৰ্য ব্যাখ্যা
(ষ্টাফ রিপাের্টার)
বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের তিন দিনব্যাপী কাউন্সিল অধিবেশন গতকল্য শুক্রবার বিকাল সাড়ে তিনটায় হােটেল ইডেন প্রাঙ্গণে শুরু হইয়াছে। ঢাকা হাইকোর্ট বার সমিতির সভাপতি জনাব আবদুস সালাম খান উক্ত কাউন্সিল অধিবেশনের উদ্বোধন করেন।
অধিবেশনে জনাব শেখ মজিবুর রহমান ৬ দফার প্রতিটি দফা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা ও যুক্তিসহ বিশ্লেষণ করেন। তিনি বলেন, অতীতে পূর্ব পাকিস্তানবাসীর নিতান্ত সহজ ও ন্যায্য দাবী যখনই উঠিয়াছে তখনই কিছু সংখ্যক দালাল হৈচৈ করিয়া উঠিয়াছেন। তিনি বলেন, ৬ দফা দাবীতেও তাহারা তেমনিভাবে পাকিস্তানকে দুই টুকরা করিবার দুরভিসন্ধি আরােপ করিতেছেন। প্রস্তাবিত ৬ দফা দাবীতে পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে পাঁচ কোটি শােষিত বঞ্চিত মানুষের অন্তরের কথাই প্রতিধ্বনিত হইয়াছে বলিয়া জনাব শেখ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ৬ দফা দাবী জনগণের দাবী। তিনি বলেন, এই দেশের সাধারণ মানুষের বাঁচার দাবীকে ধূলিসাৎ করিয়া দিবার জন্য বিশেষ একটি শ্রেণী উঠিয়া পড়িয়া লাগিয়াছেন। জনাব শেখ তাহার ৬ দফা দাবীর বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ দেশের নির্যাতিত মানুষের মুক্তির সংগ্রামের উদ্দেশ্যে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এদেশের জনগণের দাবী একদিন না একদিন প্রতিষ্ঠিত হইবেই।
পূৰ্ব্বাহ্নে উদ্বোধনী ভাষণদানকালে জনাব আবদুস সালাম খান আওয়ামী লীগের ইতিহাসের উপর আলােকপাত করিয়া বলেন যে, রাষ্ট্রদ্রোহিতা আখ্যা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়, এই আখ্যা আমাদের পূর্বেও দেওয়া হইয়াছিল। কিন্তু ইহাতে আমাদের নেতাগণ এদেশের মানুষের বাঁচার দাবী আদায়ে পিছপা হন নাই। তিনি বলেন, ১৯৫৮ সালের পর হইতে এই দেশে একটি অন্ধকারের যুগ নামিয়া আসিয়াছে এবং আজ পর্যন্ত ইহার জের চলিতেছে। তিনি বলেন, আজ আমরা যতই বৈষম্যের কথা বলি না কেন, বর্তমান সরকার কানে তুলা দিয়া থাকিবেন। জনাব সালাম বলেন, ৬ দফার ইতিহাস গত ১৮ বৎসরের অভিজ্ঞতার ইতিহাস।
তিনি আরও বলেন, লক্ষ লক্ষ টাকা যদি আমােদ-প্রমােদের জন্য খরচ করা হয় তবে পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক একাডেমী, অস্ত্র কারখানা ইত্যাদি নির্মাণ করা হইবে না কেন?
জনাব খান বলেন যে, আমাদের বলা হয়, আমরা ভারতের দালাল; কিন্তু বিগত যুদ্ধে আমরা নিশ্চয় প্রমাণ করিয়াছি সত্যই আমরা ভারতের দালাল কিনা! ৬ দফা কার্যকরী করার জন্য তিনি জনগণের নিকট আহ্বান জানান।
অধিবেশনে পশ্চিম পাকিস্তান হইতে আগত জনাব মিয়া মনজুরুল হক ও খলিল আহমদ ত্রিমেজী বক্তৃতা দেন।
সভাপতিত্ব করেন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। মওলানা তর্কবাগীশ সাহেবের অসুস্থতার জন্য তিনি অধিবেশনে যােগদান করিতে পারেন নাই বলিয়া ঘােষণা করা হয়।
উদ্বোধনী অধিবেশনের গৃহীত প্রস্তাবে যশাের জেলার জনাব এম এ খালেক, নােয়াখালীর জনাব আজিজ আহমদ, জনাব হাবিবুর রহমান, জনাব এ টি এম মােস্তফা এবং জনাব শিরিশ চন্দ্র চ্যাটার্জীর মৃত্যুর জন্য শােক প্রকাশ করা হয়।
অপর এক প্রস্তাবে মওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশের আশু আরােগ্য কামনা করা হয়। কাউন্সিল অধিবেশনে ১৫ শত ৪৩ জন কাউন্সিলার ও ডেলিগেট যােগদান করেন বলিয়া জানা যায়।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব