আজাদ
২২শে ফেব্রুয়ারী ১৯৬৬
আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির সভায় তাসখন্দ চুক্তি পর্যালােচনা
(স্টাফ রিপাের্টার)
পূৰ্ব্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটি তাসখন্দ ঘােষণা সম্পর্কে অভিমত ব্যক্ত করেন যে, “জনগণের কল্যাণ ও অগ্রগতির প্রয়ােজনে আমরা সকল আন্তর্জাতিক সমস্যারই শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানে বিশ্বাস করি।”
গত রবিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত উক্ত ওয়ার্কিং কমিটির সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে উপরােক্ত মতামত ব্যক্ত করা হয়। প্রতিষ্ঠানের সহসভাপতি সৈয়দ নূরুল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার ব্যাখ্যা করিয়া সভায় কতিপয় প্রস্তাব গৃহীত হয়। তাসখন্দ সংক্রান্ত। প্রস্তাবে বলা হয় যে, আওয়ামী লীগ শান্তিতে বিশ্বাসী এবং বিশেষ করিয়া প্রতিবেশীদের সাথে শান্তি ও সম্মানের সহিত বাঁচিয়া থাকার নীতিতে আস্থাশীল।
প্রস্তাবের কোথাও সরাসরি তাসখন্দ ঘােষণাকে সমর্থন করা না হইলেও পরােক্ষভাবে উক্ত ঘােষণার প্রতি সমর্থন জানান হইয়াছে বলিয়া জানানাে হয়।
প্রস্তাবের একস্থানে তাসখন্দ ঘােষণা দুই দেশের মধ্যে প্রতিবেশী সুলভ সম্পর্ক স্থাপনে সহায়তা নাও করিতে পারে বলিয়া আশঙ্কা করা হইয়াছে। তবে এই ঘােষণার মূল উদ্দেশ্য পাকিস্তান ও ভারতের স্বার্থে কাৰ্যকরী করা হইবে বলিয়া আশা করা হয়।
কমিটির অপর এক প্রস্তাবে অনতিবিলম্বে জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার, মৌলিক অধিকার প্রবর্তন, পাকিস্তান রক্ষা অর্ডিন্যান্স ও বিধি এবং প্রিসেন্সরশিপ বাতিল দাবী করা হইয়াছে।
ওয়ার্কিং কমিটির পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সম্প্রতি অনুষ্ঠীত যুদ্ধজনিত দুর্যোগের জন্য রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতা ও কূটনৈতিক ব্যর্থতাকে দায়ী করা হইয়াছে।
কমিটি সম্প্রতি দেশরক্ষা আইনে আটক রাজনৈতিক নেতৃবর্গ এবং সকল রাজনৈতিক কর্মীর মুক্তি দাবী করিয়াছেন।
দেশের সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি লক্ষ্য করিয়া কমিটি উদ্বেগ প্রকাশ করিয়াছে।
কমিটীর এক প্রস্তাবে শেখ মুজিবর রহমানের আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন। সম্পর্কিত ছয়-দফা প্রস্তাব অনুমােদন করা হইয়াছে। কমিটি কঠোর ভাষায় ডক্টর মাহমুদের উপর আক্রমণের তীব্র নিন্দা করিয়া অবিলম্বে উক্ত ঘটনার তদন্তের জন্য হাইকোর্টের বিচারপতির নেতৃত্বে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠনের দাবী জানাইয়াছেন। কমিটির সভায় আগামী ১৮ই, ১৯শে ও ২০শে মার্চ ঢাকা অথবা চট্টগ্রামে প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হইয়াছে।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব